বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্ভয়ে থাকুন, মানববন্ধনে যে বার্তা দিলেন আন্দোলনকারীরা

Bangladesh Minorities: হাসিনা সরকারের পতনের পর নাটোর, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে হিন্দু মন্দিরে এবং যশোর, নোয়াখালী, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও খুলনায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা হয়েছে।

ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, দ্বিতীয়বার স্বাধীন হলো বাংলাদেশ। নয়া দেশ গড়ার পালা এবার, গণতন্ত্রের নতুন সূর্য ওঠার পালা। কিন্তু শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশ জুড়ে যে পরিস্থিতি তাতে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শুধু আশঙ্কাই না, বাংলাদেশের বিভিন্ন অংশে সংখালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের একাধিক ঘটনার খবরও প্রকাশ্যে এসেছে। নতুন করে দেশ স্বাধীন করতে চাইলেন যারা, সেই ছাত্রছাত্রীরা এই হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন করেছেন। এই মানববন্ধন থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলেছেন, তাঁরা যে দেশ নির্মাণ করতে চান, তা কোনও বিভেদের দেশ নয়। স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার ক্ষুণ্ণ করার কোনও চেষ্টাই ছাত্রসমাজ সহ্য করবে না।

ধর্ম পালনের অধিকার যে ক্ষুণ্ণ হতে পারে বা হচ্ছে এমন আশঙ্কার নেপথ্যে রয়েছে ছাত্রদের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ বিরোধী বিএনপি এবং জামাত-এ-ইসলামীর অনুপ্রবেশ। হাসিনা সরকার নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বা উদার বললেও, বিএনপি বা জামাতের বিরুদ্ধে কট্টরপন্থাকে তোল্লাই দেওয়ার অভিযোগই রয়েছে। হাসিনার পদত্যাগ, সেনাদের সঙ্গে বিএনপি-জামাত নেতাদের বৈঠক, খালেদা জিয়ার মুক্তি সব মিলিয়ে এই প্রশ্ন উঠেছে যে বাংলাদেশ কি তবে আবার মৌলবাদীদের হাতেই চলে যেতে বসেছে? সোমবার সারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার খবর আসে। অত্যাচারিত সংখ্যালঘুরা ভারতে আশ্রয় চাইবেন কিনা এই উদ্বেগে নরেন্দ্র মোদি বিশেষ বৈঠকও ডাকেন।

আরও পড়ুন- শেখ হাসিনার পতনের কারণ তাঁর জিভ ও চাটুকার সাংবাদিকবর্গ 

হাসিনা সরকারের পতনের পর নাটোর, ঢাকার ধামরাই, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, শরীয়তপুর ও ফরিদপুরে হিন্দু মন্দিরে এবং যশোর, নোয়াখালী, মেহেরপুর, চাঁদপুর ও খুলনায় সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। দিনাজপুরে হিন্দুদের ৪০টি দোকান ভাঙচুর করা হয় বলে জানাইয়েছে প্রথম আলো। যশোরেও প্রায় ৫০ টি হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের ২০ থেকে ২৫টি হিন্দু বাড়িতে চার দফায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় কয়েকটি স্থানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তিনটি বাড়িতে ও চারটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ এসেছে। জোতদৈবকী শিব ও কালীমন্দিরে হামলা করে আটটি সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে হামলাকারীরা। মেহেরপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িসহ হিন্দুদের ৯টি বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দিনাজপুর সদর উপজেলায় ফুলতলা শ্মশানঘাট এলাকায় মাঠে নির্মাণাধীন হরিসভা ঘর, দুর্গামন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকেল থেকে ভোররাত পর্যন্ত দিনাজপুরের সব মন্দির ও হরিসভা বাসরে পাহারা বসিয়েছেন সংখ্যালঘুরা। তাদের সঙ্গে কয়েকটি জায়গায় মুসলিম বন্ধুরাও ছিলেন। বিভিন্ন মসজিদের মাইকে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও ভাঙচুর না করতে প্রচার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- পঞ্চাশ বছর আগে হারিয়েছিলেন পরিবার, আর এক গণঅভ্যুত্থানে দেশ হারালেন মুজিব-কন্যারা

এই নিপীড়ন বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে বাংলাদেশকে অভয় দিতে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেন পড়ুয়ারা। মানববন্ধনে অংশ নেন সদ্য কারামুক্ত ডাকসুর প্রাক্তন সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, উপাসনালয় ও নানা স্থাপনায় হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, "আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনভাবে ধর্ম পালনের অধিকার ক্ষুণ্ন করার কোনও চেষ্টাকে ছাত্রসমাজ সহ্য করবে না। আমাদের লড়াই সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে। ছাত্রসমাজ দেখিয়ে দিয়েছে, ফ্যাসিবাদ যত শক্তিশালীই হোক, তার পতন হবেই হবে।" বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হল শাখার সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর ঢাকায় যখন উল্লাস চলছিল, গ্রামে তখন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে নির্বিচারে হামলা ও নিপীড়ন চলছিল। তবে তাঁর দাবি, গত ১৫ বছরে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের সুবিধা ভোগ করেছে আওয়ামী লীগই। শেখ হাসিনা চলে গেলেও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অন্য নেতারা আছেন। আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় ফিরতে এই নিপীড়ন চালাচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক মেহেদী হাসান বলছেন, তারা কোনও সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সংখ্যালঘু হিসাব করে আন্দোলনে নামেননি। তাঁদের লড়াই সার্বিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তাই এই ঘোলা জলে যারা সাম্প্রদায়িক হামলা করছে, তাদের রুখে দিতেই হবে।

More Articles