'ওয়াও' থেকে 'জামালকুদু'! ২০২৩ জুড়ে সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপাল কোন কোন ভাইরাল?

Top Virals 2023: সকাল সন্ধে আপামরের ফোনে ও মনে দোলা লাগালই বা কারা? কোন গানের ছন্দে উত্তাল হলি-বলি-টলি। কোন সংলাপ মিম হয়ে সবচেয়ে বেশি ফরওয়ার্ড হল ২০২৩ সালে?

এ যুগ ভাইরালের। শূন্য দশকের মাঝামাঝি থেকে যে সোশ্য়াল মিডিয়ার বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়েছিল তা ক্রমে এই দু-দশকে আরও বিবর্তিত হয়েছে। মানুষের রুচি বদলেছে, বদলেছে চাহিদা। 'চিনের চাউমিন, আমাদের চাউমিন' বলার দিন গেলেও টিকটিক নামক যে ব্রহ্মাস্ত্রটি শত্রু দেশে ফেলে গিয়েছিল চিন, তার ফলাফল ভুগছে গোটা বিশ্ব। এ দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে টিকটক, কিন্তু তার বিকল্প হিসেবে জন্মেছে রিলস, শর্টসের মতো আরও নানা অবতার। আপাতত তার হাতেই সভ্যতার চাবিটি। কারণ রাত-দিন, শয়নে-স্বপনে এবং জাগরণে বিশ্ববাসী মজে সেই রিল-শর্টসের নাগরদোলায়। নাগরদোলার সেই ঘূর্ণিপাকে গান বদলায়, কনটেন্ট বদলায়, নাচের ভঙ্গি বদলায়। মহেশতলার নাচ মরিশাসে বসে দেখে ফেলেন কেউ। সেই নাচ হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে যায় মরোক্কোর প্রত্যন্ত গ্রামে। এমনই জাদু ভায়া ভাইরালের।

বছরখানেক আগেই বাংলার বাদামদাদার কাঁচা বাদামের সুরে মজেছিল গোটা বিশ্ব। ভাইরাল কারে কয়! সুদূর আফ্রিকার কোন এক গ্রামে বসে সেই গানে নেচে ভাইরালে ভাইরাল হলেন দুই ভাইবোন। বলিউড, টলিউড, হলিউড কাঁপিয়ে ছাড়ল সেই গান। কিংবা ধরুন না পাকিস্তানের খুদে পাঠান মিষ্টি আহমেদ শাহ-র সেই ভিডিওটির কথাই। আধো আধো স্বরে 'পিছে তো দেখো' বলে এক ভিডিওতেই তুমুল ভাইরাল হয়ে গেল সেই খুদে। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল মিম। গত বছর ভাইরালের বাজারে ঝড় তুলেছিল শ্রীলঙ্কার কন্যা য়োহানির গাওয়া 'মানিকে মাগে হিথে'। হটকেক বললেও তাকে কম বলা হয়। কান পাতলেই সেই গান। ২০২২ ছাপিয়ে সেই গান কান এবং প্রাণ মাতিয়েছে চলতি বছরেও। কিংবা ধরুন কোক স্টুডিও পাকিস্তানের 'পাসুরি' গানটার কথাই। 'মানিকে'-র চেয়ে দৌড়ে পিছিয়ে নেই কিন্তু সে-ও। কিন্তু এসবই তো গেল গত কয়েক বছরের ভাইরালের কথা। ২০২৩ সালে ভাইরালের দুনিয়ায় ঝড় তুলল কারা? সকাল সন্ধে আপামরের ফোনে ও মনে দোলা লাগালই বা কারা? কোন গানের ছন্দে উত্তাল হলি-বলি-টলি। কোন সংলাপ মিম হয়ে সবচেয়ে বেশি ফরওয়ার্ড হল ২০২৩ সালে? আসুন দেখে নেওয়া যাক চট করে।

আরও পড়ুন: ২০২৩ বর্ষশেষের সেরা ভারতীয় সিনেমা, এখনও দেখেননি?


মোয়ে মোয়ে

সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে ট্রেন্ড করেই চলেছে এই গান। ল্যাজা-মুড়ো, বিশেষ কেউ জানেন না। তবে বহু মজার ভিডিওতেই দেখা যাচ্ছে এই গানটির ব্যবহার। আসলে এই গানটির সার্বিয়ার। সার্বিয়ান গায়িকা তেয়া জোয়ার 'ডাজানাম' গানের অংশ এটি। আদতে কথাটি হল 'মোজে মোরে'। সার্বিয়ান ভাষায় যার অর্থ 'মাই নাইটমেয়ার'। তাই ভাইরালের ভাষায় তা হয়ে গিয়েছে 'মোয়ে মোয়ে'। কত ধরনের মিমে যে এই গানের অংশটি ব্যবহার হয়েছে, এবং হয়েই চলেছে তা বোধহয় গুনে শেষ করা যাবে না।


জাস্ট লুকিং লাইক আ ওয়াও

অনলাইন শপিং অ্যাপ এখন অতীত। কেনবেচার নয়া মাধ্যম আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো অধিকাংশ সোশ্যাল সাইটেই মার্কেটিং ও ব্যবসার সুযোগ। তা এমনই একটি সোশ্যাল মিডিয়া লাইভে এসে এক পোশাক বিক্রেতা নিজের বাহারি শাড়ি-ওড়না দেখাচ্ছিলেন। সে সময় নিজের পণ্যের গুণমান বোঝাতে গিয়ে তিনি বলে ফেলেছিলেন, "সো বিউটিফুল সো এলিগেন্ট, জাস্ট লুকিং লাইক আ ওয়াও!" ব্যাস, নিজের অজান্তেই জাতির হাতে আস্ত একটা অস্ত্র তুলে দিয়েছেন জসমিন কৌর নামে ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী। তার পর থেকে প্রতিটা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম রিলস জুড়ে চলছে 'লুকিং লাইক আ ওয়াও' ট্রেন্ড।

অ্যায়!

কখন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী ভাইরাল হয়, তা 'দেব না জানতি, কুত মানুষ'। সেই অঙ্ক মেনেই বিহারের ষষ্ঠ শ্রেণির কিশোর আদিত্য কুমার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে গিয়েছে। অবশ্য ভাইরাল হয়েছে তার একটি অভিব্যক্তি। দেশের প্রধানমন্ত্রী কে, তার উত্তরে আশ্চর্য ভঙ্গি করে বসে ছেলেটি। আর সেটিই জায়গা করে নিয়েছে মিমে।

আইলো উমা বাড়িতে

বাঙালির বড় উৎসব দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজো ঘিরে প্রতিবারই কোনও না কোনও গান বেশ ট্রেন্ড করে। এবার সেই গানটি ছিল নন্দী সিস্টারসের এক বোন অন্তরা নন্দীর গাওয়া আইলো উমা বাড়িতে। যে গানটিতে দুর্দান্ত নেচে ভাইরাল হয়েছিলেন টলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মনামী ঘোষ। সেই গানটি অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে নেটমাধ্যমে। আর সেই গানের সিগনেচার স্টেপে নেচে রিলস বানাননি এমন বাঙালি বোধহয় টেলিস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে। ফলে ভাইরালের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে এই বাংলা গানটিও।

 

ভূপেন্দর যোগী

মধ্যপ্রদেশের রাস্তা যে আমেরিকার থেকে ভালো, এমনটাই দাবি করেছিলেন ভূপেন্দর যোগী নামে এক ব্যক্তি। সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন তাঁকে তিনি আমেরিকার আর কোথায় কোথায় গিয়েছেন, তার উত্তরেও তিনি নিজের নাম বলে বসেন। আর সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়াময়। মিমও কম হয়নি সেটিকে ঘিরে।

 

গতি লো

কোক স্টুডিও ভারতে এবার সবচেয়ে মনে রাখার মতো গান ছিল বোধহয় আদিত্য গাধবির গাওয়া গুজরাটি লোকগান 'খালাসি'। গানটি প্রকাশ পেতে না পেতে দুর্দান্ত ভাইরাল হয়ে যায় সেই 'গতি লো'। গুজরাটি ভাষায় গতি লো শব্দটির অর্থ 'খুঁজে আনো'। মাঝসমুদ্রে নাবিকহীন একটি জাহাজের কাণ্ডারীকে খুঁজে আনার কথা বলা হয়েছে গানটিতে। সেদিক থেকে দেখতে গেলে গানটি মাঝিমাল্লাদের গান। তবে ভাইরালের ভাষায় নেটিজেনরা নিজের মতোই অর্থ বের করে নিয়েছেন গানটির। কেউ কেই তুখোড় কান নিয়ে 'গতি লো'-কে 'গদি লো'-ও শুনে ফেলেছেন। যদিও কোলে নেওয়ার মতো কোনও বার্তা গান জুড়ে নেই। তবে রিলস থেকে শুরু করে শর্টস কিংবা স্টোরি- সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে 'গতি লো'-র সুরে মেতে ওঠেননি এমন নেটনাগরিক বোধহয় গ্যালাক্সিতে অমিল।

 

জামাল কুদু 

সবশেষে যে চরম ভাইরাল গানটির কথা না বললেই নয়, তা অবশ্যই জামাল কুদু। ইরানের এই সত্তর বছর পুরনো লোকগানটি ব্যবহার করা হয়েছে 'অ্যানিম্যাল' সিনেমার লর্ড ববির এন্ট্রি-দৃশ্যে। সিনেমায় দেখা গিয়েছে, রণবিজয় তথা পর্দার ববির তৃতীয়বার বিবাহের উৎসব। সেখানে মাথায় একটি সুরাপাত্র, মুখে সিগারেট নিয়ে বিয়ের আসরে প্রবেশ করছেন তিনি। নেপথ্যে বাজছে সেই গান। মুক্তির পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে জামাল কুদু-জ্বর। মাথায় গ্লাস, বোতল, বাটি রেখে গানের তালে নাচার ট্রেন্ডও ছড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এ বছরের সেরা ভাইরাল বললে এই গানটির কথা কিন্তু আসবেই আসবে।

 

আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের শহরে রামধনু যাত্রা! কলকাতা কি সত্যিই সাবালক হয়েছে আজও?

২০২৩ যেতে আরও খানিকটা সময় বাকি! এর মধ্যে যে ফের নতুন করে কোনও গান বা সংলাপ নেটদুনিয়ায় সাড়া ফেলবে না, তেমন ভরসা নেই। তবে ২০২৩ সালকে মাতিয়ে রেখেছে যেসব ভাইরাল ও মিম, তাদের মধ্যে এই গান বা ভিডিওগুলি কিন্তু অবশ্যই থাকবে। ২০২৪ সাল নেটিজেনদের জন্য কি আর কোন নতুন ট্রেন্ড নিয়ে আসবে, নাকি প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়াকে তোলপার করে আরও অন্য রকম কিছু বিনোদনের রাস্তা খুলে যাবে মানুষের সামনে। যা সোশ্যাল মিডিয়ার থেকেও বেশি সময় কেড়ে নেবে আমাদের থেকে। তার উত্তর দেবে আসছে বছরই।

More Articles