বিতর্কের বিশ্বকাপ! যে সব কাণ্ড আজও ভোলেনি কেউ
ICC World Cup 2023: কখনও বৃষ্টিতে কমল ওভার, কখনও আবার ম্যাচের ঠিক আগেই দল থেকে বাদ পড়লেন ক্রিকেটার। কোথাও বা কানে ইয়ারপিস নিয়ে বিপাকে অধিনায়ক। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের এমনই অজস্র অস্বস্তিকর মুহুর্তের গল্প।
শুরু হয়ে গিয়েছে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপ মানেই আলাদা উত্তেজনা, আলাদা হইহই। পৃথিবীর সমস্ত ক্রিকেট প্রেমীদের আলাদা আবেগ এই ওডিআই টুর্নামেন্ট ঘিরে। শুধু ভক্তদের জন্যই নয়, গোড়ার দিন থেকেই খেলোয়াড়দের কাছেও এই ভীষণ কাছের এই বিশ্বকাপ। কারণ এই আইসিসি ক্রিকেট (মেনস) বিশ্বকাপই ঠিক করে দেবে এই বাইশ গজের মহাযুদ্ধে এগিয়ে কোন দেশ, কোন দল?
সেই ১৯৭৫ থেকে শুরু। তার পর কেটে গিয়েছে ৪৮টি বছর। এখনও পর্যন্ত মোট ১২টি একদিনের ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজিত হয়েছে। ২০২৩ সালের টুর্নামেন্ট ১৩তম। এই বারোটি টুর্নামেন্ট জুড়ে অনেক কিছুর সাক্ষী রয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। রেকর্ড, আবার সেই রেকর্ডকে ভেঙে নয়া রেকর্ড, শতরান থেকে হ্যাট্রিক, কী দেখেনি। তবে গৌরবের মুহূর্ত যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অস্বস্তিকর ঘটনাও। যা স্মৃতিতে আজও উজ্জ্বল। ফিরে দেখা যাক, তেমনই কিছু মুহূর্ত।
আরও পড়ুন:ঘরের মাটিতে শুরু ১৩তম ক্রিকেট বিশ্বকাপ! ফিরে দেখা ২২ গজের যুদ্ধের ইতিহাস
১৯৯২- দুর্ধর্ষ দুশমন বৃষ্টি
সে বছর প্রথম বার বিশ্বকাপে প্রবেশ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম হলে কি হবে, সে বছরই সেমিফাইনালে উঠেছিল তারা। সত্যি কথা বলতে ফাইনালও বিশেষ দূরে ছিল না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৬ উইকেটে ২৪৫ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ১৩ বলে ২২ রান যখন বাকি, আকাশ ঝেঁপে নামল বৃষ্টি। স্থগিত হয়ে গেল খেলা। বৃষ্টি কমতে যখন ফের ম্যাচ শুরু হল, তখন প্রথমে বলা হয়, সাতটি বল বাকি রয়েছে তাদের মাত্র। না, আরও বড় ধাক্কা বাকি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। পুনর্বিবেচনার পর তাদের বলা হয় একটিই মাত্র বল বাকি রয়েছে তাদের। তেমনই নাকি নিয়ম। দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটার ব্রায়ান ম্যাকমিলান শেষ বলটি খেলে রাগে মাঠ ছাড়েন। স্বাভাবিক ভাবেই ম্যাচটি হেরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
১৯৯৬: বোতল তাণ্ডব
১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল ম্যাচ সেটা। মুখোমুখি হয় ভারত-শ্রীলঙ্কা। খেলা হচ্ছিল কলকাতার ইডেন গার্ডেনে। ভারতের শোচনীয় হার নিশ্চিত বুঝতে পেরেই হঠাৎ ক্ষেপে উঠেছিল দর্শক। যেখান সেখান থেকে উড়ে আসতে শুরু করে বোতল। আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় কয়েকটি আসনে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে ম্যাচ বাতিল করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন আম্পায়ার ক্লাইভ লয়েড, আর বিজয়ী ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে।
১৯৯৬: শ্রীলঙ্কার লাভ
একটি নয়, আরও কারণ রয়েছে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপ বিতর্কিত হয়ে থাকার নেপথ্যে। সে বছর চারটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কাতে। ম্যাচের ঠিক তিন সপ্তাহ আগে এলটিটি জঙ্গিরা কলম্বোর একটি রাষ্ট্রীয় ব্যাঙ্কে ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই নাশকতার পর শ্রীলঙ্কায় যেতে আপত্তি জানায় অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর ফলে শ্রীলঙ্কাকে দু'পয়েন্ট পুরস্কার হিসেবে দেয় আইসিসি। যার ফলে সরাসরি কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্ট ট্রফিটিও ঘরে তুলেছিল তারাই।
১৯৯৯: কানে কানে কোচের সনে
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হান্সি ক্রোনে। ২০০০ সালে বেটিং করতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। তবে তার আগে বিশ্বকাপের মাঠেও বেআইনি কাজ করার সময় ধরা পড়েন ক্রোনে। কানে ইয়ারপিস নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন তিনি, যা দেখে ফেলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ব্যাপারটি নিয়ে হইচই শুরু হয়। পরে জানা যায়, তৎকালীন কোচ বব উলমারের সঙ্গে নাকি ফোনে ম্যাচ চলাকালীন ফোনে কথা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ক্রোনে। কোচের তরফে লাগাতার নানাবিধ পরামর্শও পাচ্ছিলেন। যা ক্রিকেটের মাঠে সম্পূর্ণ বেআইনি।
২০০৩- নিষিদ্ধ শেনওয়ার্ন
২০০৩ সালের বিশ্বকাপের ঠিক আগের দিন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার স্পিনার শেন ওয়ার্নকে। রুটিন মাদক পরীক্ষায় নাকি উতরাতে পারেননি ওয়ার্ন। সে কারণেই বাতিল পরেন সেই ওডিআই বিশ্বকাপটি থেকে। তবে শেন ওয়ার্নকে ছাড়াই ২০০৩ সালের বিশ্বকাপটি জিতে দেখিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।
২০০৩: প্রতিবাদে কেরিয়ার নষ্ট
রাষ্ট্র জুড়ে তখন চলছে বিদ্রোহের আগুন। সে সময় জিম্বাবোয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রতিবাদ জানিয়ে বসেছিলেন জিম্বাবোয়ের অধিনায়ক অ্যান্ডি ফ্লোয়ার ও পেসার হেনরি ওলঙ্গা। তাও আবার বিশ্বকাপ চলাকালীন। এমনকী প্রতিবাদে কালো আর্মব্যান্ড পরার কথাও ঘোষণা করেছিলেন তিনি। এর পর অবশ্য আর কোনওদিন ক্রিকেট খেলা হয়নি ওই দুই ক্রিকেটারের।
২০০৭: কোচের মৃত্যু
২০০৭ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে পাকিস্তান। হঠাৎ খবর এল প্রয়াত হয়েছেন কোচ বব উলমার। হোটেলের ঘরে রহস্যজনক অবস্থায় উদ্ধার হয় উলমারের দেহ। ম্যাচের ঠিক আগের দিন এই ঘটনায় ঘেঁটে গিয়েছিল পাক ক্রিকেটারদেক মনোবল। পাশাপাশি পুলিশি জেরার মুখেও পড়তে হয়েছিল পাকিস্তানের সমস্ত ক্রিকেটারকে।
২০০৭: অধিনায়কের পতন
মদ্যপ অবস্থায় নৌকো থেকে পড়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ। আর সে ঘটনা নিয়ে কম বেইজ্জত হতে হয়নি ফ্লিনটফকে। এর পরে ২০০৭ বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ফ্লিনটফকে। পাশাপাশি চলে যায় সহ-অধিনায়কের পদটিও।
২০০৭- অন্ধকারাচ্ছন্ন ফাইনাল
২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ফাইনাল বোধহয় ইতিহাসের সব চেয়ে বিতর্কিত ম্যাচগুলির একটি। কেনসিংটন ওভালে খেলা হয়েছিল সেই ম্যাচটি, যেখানে মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কা- অস্ট্রিলিয়া। তবে সেই স্টেডিয়ামে কোনও ফ্লাডলাইট না থাকায় অন্ধকারেই খেলা শুরু হয়। একটা সময় আলোর অভাবে অসম্ভব হয়েছিল ম্যাচ। শেষপর্যন্ত ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন নিয়ম মেনে ম্যাচ শেষ করা হয়। আর ট্রফি যায় অস্ট্রেলিয়ার দখলে। তবে ব্যাপারটির জল গড়ায় অনেকদিন। বহু আম্পায়ার ও কর্তাব্যক্তির উপর নেমেছিল কোপ।
২০১১: ধোনির ডবল
সে বছর দ্বিতীয় বারের জন্য বিশ্বকাপ জিতেছিল ধোনির ভারত। তবে শুধু জয় নয়, টসও হয়েছিল সেদিন দুবার। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক কুমার সঙ্গকারা টসের সময় হেড বলেছিলেন বটে, তবে চারপাশের চিৎকারে শুনতে পাননি ধোনি। যার ফলে টস জিতেছেন ভেবে ব্যাটিং বেছে নেন তিনি। তবে সঙ্গকারা আপত্তি জানানোয় ফের টস হয় দু'দলের মধ্যে। এটাও কিন্তু ইতিহাসে বিরল
আরও পড়ুন: ফাঁকা স্টেডিয়ামেই ওয়ার্ল্ড কাপের উদ্বোধনী ম্যাচ! এরই নামে ‘আচ্ছে দিন’?
এমনই বিভিন্ন বিতর্কিত আর মজার গল্পে ভরা বিশ্বকাপের ইতিহাস। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে ২০২৩ বিশ্বকাপ। যে আসর বসেছে এবার ভারতে। তবে ১৩তম বিশ্বকাপেও তেমনই নতুন কোনও বিতর্ক বা অস্বস্তির মুহুর্ত তৈরি হয় কিনা, দেখার সেটাই।