৩৬ টাকার টিকিটে পাকিস্তান থেকে ভারত! এই কাগজের টুকরোয় জড়িয়ে রয়েছে মর্মান্তিক ইতিহাস

Train Ticket 1947 Independence Viral : টিকিটের দাম ৩৬ টাকা নয় আনা। আর সেটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল! এমন কেন?

এক ঝলকে দেখলে মনে হবে, সামান্য একটা কাগজের টুকরো। হলুদ হয়ে এসেছে অনেকটাই। একটুখানই দেখলেই বোঝা যায়, এটি আসলে ট্রেনের টিকিট। নিশ্চয়ই মান্ধাতার আমলের কোনও কাগজ! কালো কালিতে লেখা কিছু কথা। টিকিটের দাম ৩৬ টাকা নয় আনা। আর সেটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল! হঠাৎ এমন কেন?

কারণ, এই টিকিটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ভারতের ইতিহাসের এক মর্মান্তিক অধ্যায়। সেখানে যেমন জুড়ে রয়েছে স্বাধীনতার মুহূর্ত, তেমনই রয়েছে দেশভাগ। হলদে হয়ে যাওয়া সেই টিকিটের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে লাখ লাখ মানুষের কান্না, ভিটেমাটি হারানোর আর্তনাদ আর রক্তের দাগ।

আরও পড়ুন : দেশভাগের পরের প্রথম পুজো ছিল থমথমে, আজও গায়ে কাঁটা দেয় সেই ইতিহাস শুনলে

ভারত আর পাকিস্তান – এই দুটো নাম একসঙ্গে এলে ‘বনাম’ শব্দটাই মাথায় আসে অধিকাংশের। রাজনৈতিক বৈরিতা দুই দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ছড়িয়ে পড়েছে। হয়ে গিয়েছে যুদ্ধও। এখনও নানা সময় ওয়াঘার এপার ওপার দুই জায়গাতেই রণডঙ্কা বাজে। কিন্তু একটা সময় এই দুটি দেশ তো একসঙ্গেই ছিল। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার সময়ের দেশভাগ অখণ্ড ভারতের তিন টুকরো করে দেয়। কয়েক লাখ মানুষ নিজের বাস্তুভিটা হারায়। একদিকে পাঞ্জাব, অন্যদিকে বাংলা – দেশের দুই প্রান্তে আগুন জ্বলে। আজও বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায় ছিল সেই দিনগুলি। দাঙ্গা, মৃত্যু, শরণার্থী শিবিরের ভিড়ে রাতারাতি ‘বিদেশ’ হয়ে যাওয়া একটা দেশে পাড়ি দিলেন অজস্র মানুষ।

সেই সময়েরই দলিল এই হলুদ রঙের কাগজটি। উত্তর-পশ্চিম রেলের ‘বিদেশি’ কোটার টিকিট। সেই পুরনো টিকিট অনুযায়ী, রাওয়ালপিণ্ডি থেকে এক পরিবার অমৃতসরে পাড়ি দেয়। রাওয়ালপিণ্ডিতেই ওই পরিবারের বসবাস ছিল। কিন্তু দেশভাগ সেই ঠিকানা বদলে দেয়। পাকিস্তান থেকে ভারতে আসার জন্য এই টিকিট কাটে ওই পরিবার। মোট ৯ জনের জন্য টিকিটের দাম ৩৬ টাকা নয় আনা। আর টিকিটটি কাটা হয়েছে ১৯৪৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বরে। হিসেব করলে, ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ঠিক এক মাস পরের ঘটনা এটি।

সবদিক থেকে দেখলে, ঐতিহাসিক একটি দলিল। কিন্তু কে এসেছিলেন এই টিকিটে? সেই পরিবারের কী হল? তাঁরা কি এখনও আছেন অমৃতসরে? নান প্রশ্ন এসে ভিড় করেছে; কিন্তু এখনও জবাব পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের একটি ফেসবুক পেজ ‘পাকিস্তান রেল লাভারস’ থেকে এই বিশেষ টিকিটটির ছবি পোস্ট করা হয়েছে। তারপরই ভাইরাল হয়ে যায় এটি।

আরও পড়ুন : দেশভাগের দগদগে ঘা! কেন ১৮ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস পালিত হয় বাংলার এই জেলাগুলোতে?

অনেকেই বলেন, এই টিকিটটি বাঁধিয়ে রাখতে। ইতিহাসেরই এক অঙ্গ এই ছোট্ট টুকরো কাগজটি। একইসঙ্গে অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে এখানে। আর সেটাই ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। সেইসঙ্গে অনেকেরই দীর্ঘশ্বাস, যদি দেশভাগ না হতো, তাহলে হয়তো এত রক্ত, এত মৃত্যু, কান্না আর যুদ্ধের সাক্ষী থাকত না এই উপমহাদেশ।

More Articles