ত্রিপুরা নির্বাচনে লড়বেন না আর! কেন এত বড় সিদ্ধান্ত প্রবীণ বামনেতা মানিক সরকারের?
Manik Sarkar Tripura: প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একসময় দেশের সবচেয়ে দরিদ্র মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, ছিলেন রাজ্যের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মুখ।
ছোট্ট রাজ্যকে তিলে তিলে গড়েছিলেন তিনি। তাঁর আমলেই ত্রিপুরাতে বেড়েছে সাক্ষরতার হার, কমেছে অপুষ্টির সমস্যা, বেড়েছে নারী ক্ষমতায়ন। ৪০ বছর ত্রিপুরা ছিল লাল দূর্গ। ত্রিপুরায় দীর্ঘকালীন এই বামশাসনের যিনি ছিলেন নির্ভরযোগ্য মুখ, সেই মানিক সরকার আর ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না! ত্রিপুরায় ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন। আর চারবারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার এবারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। সূত্রের খবর, ৭৪ বছর বয়সী এই প্রবীণ বাম নেতাকে টিকিট দেয়নি সিপিআইএম। বদলে ঘোষণা করেছে, মানিক সরকারই এবার রাজ্য জুড়ে বাম প্রচারকে নেতৃত্ব দেবেন।
১৯৭৮ থেকে ২০১৮, মাঝে পাঁচ বছর বাদ দিলে সিপিএমই ত্রিপুরা শাসন করেছিল। আর বামেদের মুখ ছিলেন মানিক সরকার। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এই ছোট্ট রাজ্যে শান্তি বজায় রাখতে পেরেছিলেন মানিক, যা একসময় বাঙালি আর উপজাতিদের মধ্যে সংঘর্ষের কেন্দ্রস্থল ছিল। আজীবন কমিউনিস্ট এবং পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য মানিক সরকারের ব্যক্তিগত রেকর্ডও ছিল সাফ সুতরো। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার একসময় দেশের সবচেয়ে দরিদ্র মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, ছিলেন রাজ্যের সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য মুখ। ২০১৮ সালে বিজেপির কাছে হেরে যায় বামেরা।
দলের আশা, ১৯৯৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত রাজ্য সরকারের নেতৃত্বে থাকা মানিক ফের হাল ধরবেন। বামদের সবচেয়ে বড় ভোটব্যাঙ্ক, আদিবাসী এবং দলিতদের ফের দলমুখী করবেন। এই আদিবাসী এবং দলিতদের ভোটই বিজেপি-আইপিএফটির (ত্রিপুরার আদিবাসী প্রগতিশীল ফ্রন্ট) মূলধন ছিল ২০১৮ সালের নির্বাচনে। কেন এই মানুষরা মুখ ফেরালেন তার কারণ বিশ্লেষণ করে এবার তাদের ফের দলে টানার ভার তাই প্রবীণ মানিকের। সিপিআইএমের সূত্র বলছে, কেবল নিজের নির্বাচনী এলাকা ধনপুরেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না, সারা রাজ্যে প্রচার করবেন মানিক। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ২০০৬ সালে ৮৫ বছর বয়সে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। মানিক সরকার ব্যাটন তুলে দিচ্ছেন ৭৪-এ এসেই।
আরও পড়ুন- বিধানচন্দ্র রায় থেকে জ্যোতি বসু, এই মডেলের ফিয়াট পছন্দ ছিল সকলেরই
২০১৮ সালে বিজেপি রাজ্যে ক্ষমতায় আসে। ত্রিপুরা রাজ্যের ৬০ টি আসনের মধ্যে ৩৬ টিতে জয় লাভ করে ইতিহাস গড়ে। যে বিজেপির ঘাঁটি তো দূর অস্ত, সামান্য বসত ভিটেও ছিল না ত্রিপুরায় তারাই একেবারে শূন্য থেকে একেবারে উপরে উঠে আসে। বিজেপির জোট শরিক আইপিএফটি ৮ টি আসন পায়। আর সিপিআইএম পেয়েছিল ১৬ টি আসন। কংগ্রেস আগের বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল হিসেবে থাকলেও ২০১৮ সালে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
এই হারের থেকে শিক্ষা নিয়ে সিপিআইএম এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির চুক্তি করেছে। বামফ্রন্ট রাজ্যের ৬০টি আসনের মধ্যে ৪৭টিতে লড়বে আর কংগ্রেসের জন্য থাকছে ১৩ টি আসন। বামেদের প্রার্থী তালিকায় এবার ২৪টি নতুন নাম থাকবে। পশ্চিমবাংলার মতোই ত্রিপুরাতেও নতুন মুখদের তুলে ধরার জন্য বাদ পড়ছেন পুরনো লড়াকুরা। বামফ্রন্টের ছয়বারের বিধায়ক বাদল চৌধুরী সহ অনেক প্রতিষ্ঠিত প্রার্থীকেই এবার টিকিট দেওয়া হয়নি।
বামফ্রন্ট আরও ইঙ্গিত দিয়েছে যে তারা জোটে টিপরা মোথা, আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য রাষ্ট্র প্রস্তাবকারী দলকে চায়৷ তবে সেই আশা বাস্তবায়িত নাও হতে পারে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আদিবাসীদের সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবি নিয়ে আলোচনা করতে প্রদ্যোত কিশোর দেববর্মাকে সম্প্রতিই দিল্লিতে ডাকা হয়েছিল।
তবে মানিক সরকারের এই সিদ্ধান্ত দলের পক্ষে মোটেই সহজ ছিল না। দল বলছে, একটি আসনে জোর দেওয়ার চেয়ে সব আসনেই পূর্ণ শক্তি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন মানিক। দফায় দফায় বৈঠকের পর দল শেষ পর্যন্ত এই ইচ্ছাকেই সম্মান জানায়। ত্রিপুরাতেও নতুনদের মুখ করতে চাইছে দল। পশ্চিমবঙ্গে নতুন মুখদের লড়াইয়ে নামানো হলে সিপিআইএমের প্রচারে ব্যাপক ঢেউ আসে ঠিকই তবে ভোটের বাক্সে তার কোনও প্রতিচ্ছবিই পড়েনি। ত্রিপুরাতেও যে পড়বে প্রথমবারেই এমনটা আশা করছেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তবে দলকে দীর্ঘকাল লড়াতে হলে পথ এটাই, মনে করছেন বিশ্লেষকরা।