যাত্রার দ্বিতীয় দিনেই বিপত্তি! কেন এই হাল হল সাধের হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের?
Howrah Puri Vande Bharat: আচমকা বিকট শব্দে চুরমার ট্রেন! যাত্রার দ্বিতীয় দিনেই হাওড়া-পুরী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে বিপত্তি!
সবে মাত্র দ্বিতীয় দিনের সফর। পুরী থেকে হাওড়ার পথে রওনা দিয়েছে নয়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। ট্রেনে ভর্তি প্যাসেঞ্জার। ট্রেন ছুটেছে ওড়িশা হয়ে ভদ্রকের পথে। ঘড়িতে ঠিক বিকেল চারটে বেজে পঁয়তাল্লিশ মিনিট। জাজপুর কেওনঝড় রোড ছেড়ে ট্রেন এগোচ্ছে দুরন্ত গতিতে, ঠিক এমন সময় বিকট একটা শব্দ! মুহূর্তের মধ্যে হকচকিয়ে উঠেছেন যাত্রীরা। সঙ্গে সঙ্গে আলো নিভে ঘুটঘুটে অন্ধকার গোটা ট্রেন। এখানেই শেষ নয়, বাইরে তখন অঝোরে শিলা বৃষ্টি। ট্রেনের মধ্যেও আকস্মিক এই ঘটনায় উত্তেজনা তুঙ্গে। তার ওপর আবার সি ৩ এবং সি ১২ কোচের জানলায় চিড় ধরে যাওয়ায় শঙ্কিত যাত্রীরা। পাশাপাশি পাইলট কেবিনের ‘উইন্ডশিল্ড’-এও ফাটল ধরে এই সময়। সব মিলিয়ে একটা ভয়াবহ পরিস্থিতি। আনকোরা নতুন একটা ট্রেনের দ্বিতীয় দিনেই এমন বিপদের জন্য স্বাভাবিক ভাবেই আগে থেকে তৈরি ছিলেন যাত্রী থেকে শুরু রেল কর্তৃপক্ষের কেউই। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে, প্রবল ঝড় বৃষ্টির সময় বাজ পরেই নাকি এমন বিপদ নেমে আসে পুরী থেকে হাওড়াগামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের ওপর।
ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে প্রথমে সামনে আসে একটি ইউটিউব ভিডিওর মাধ্যমে। দুর্ঘটনার সময় ওই ট্রেনে ছিলেন ইউটিউবার এক্সপ্লোলার শিবাজি। তিনিই তাঁর ভিডিওতে তুলে ধরেন পরিস্থিতি। তাঁরা ভিডিও থেকেই জানা যায়, ঘটনার আকস্মিকতা কিছুক্ষনের মধ্যেই সামলে ওঠে রেল কর্তৃপক্ষ। ট্রেনের মূল আলো নিভে গেলেও নিরাপত্তারক্ষীরা উপস্থিত থাকায় বিশেষ বিপদে পড়তে হয়নি যাত্রীদের। তবে এমন একটি ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা ছড়িয়েছে যদিও জানলার কাঁচে চিড় ধরলেও কোনও চোট অথবা বিশেষ কোনও আঘাতের শিকার হননি কেউই।
তবে আসল বিভ্রাট শুরু এর খানিকক্ষণ পর থেকে। অত্যাধুনিক এসি ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এক্কেবারে বিদেশি মডেলে তৈরি, ফলে জানলাগুলি খোলা যায় না। এদিকে বাজ পড়ে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে দাঁড়িয়ে যায় ট্রেনটি। এভাবেই কাটে দীর্ঘ কয়েক ঘন্টা। অবশেষে রেল কর্তৃপক্ষের তৎপরতায় অন্য একটি ডিজেল ইঞ্জিন এনে পাওয়ার কাট এরিয়া পেরিয়ে ট্রেনকে কেন্দুঝড় স্টেশন অবধি নিয়ে আসা হয় কোনওক্রমে।
আরও পড়ুন - হাওড়া-পুরী’র পর এই রুটে চলবে ট্রেন, জানুন বাংলার তৃতীয় বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের টাইম-টেবিল
ঘটনাটি যখন ঘটে তখন পুরী হাওড়া বন্দেভারত এক্সপ্রেসটি সবেমাত্র জাজপুর - কেত্তনঝড় রোড পেরোনোর পর বৈতরণী নদী পেরোচ্ছে। ঠিক এরকমই সময়ই বিকট একটা শব্দে মনে হয় ট্রেনের ছাদে বিশাল কিছু ভেঙে পড়ল, ট্রেনের ভেতরের আলো দুবার ব্লিঙ্ক করার পর নিভে গেল, শোনা গেল ঝড়ের জন্য রেল লাইনে গাছের ডাল ভেঙে পড়েছিল, বৃষ্টি ও ঝড়ের জন্য দৃশ্যমানতা কম থাকায় তা প্রবল গতিতে ট্রেনে ধাক্কা লেগে ট্রেনের সামনের উইন্ডশিল্ড ভেঙে ট্রেনের ছাদের পেন্টোগ্রাফ ভেঙে দেয়, এমনটাই জানিয়েছেন এক প্রত্যক্ষদর্শী।
অবশেষে ডিজেল ইঞ্জিনের সহায়তায় যখন কেন্দুঝড় স্টেশন আসে ট্রেনটি তখন খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে পান যাত্রীরা। প্রায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় তাঁদের আটকে থাকতে হয় ট্রেনের ভিতরে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়ওয়া সমস্ত এসি বিকল হয়ে যায়, আলো নিভে যায়। ঘুটঘুটে অন্ধকারে আরও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, ফলে যতক্ষণ না ট্রেন স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে শুরু করে ততক্ষণ পর্যন্ত একটা বিপদের আশঙ্কা মনের মধ্যে গেঁথে ছিল যাত্রীদের। প্রায় রাত আটটা নাগাদ কেন্দুঝড় স্টেশন থেকে ফের পুনরায় স্বাভাবিক ছন্দে চলতে শুরু করে পুরী হাওড়া বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এইসময় ভারতীয় রেলের তরফ যাত্রী সুবিধার কথা মাথায় রেখে অতিরিক্ত থেকে চা, বিস্কুট, ভুজিয়া ও জলের ব্যবস্থা করা হয়। ট্রেন খড়্গপুর পৌঁছলে খিচুড়িও পরিবেশন করা হয়। অবশেষে ট্রেন হাওড়া যখন পৌঁছয় তখন মধ্যরাত। ঘড়িতে ২:৪০। বিপদ কাটলেও এমন আকস্মিক ধাক্কার জন্য যেহেতু আগে থেকে কোনও প্রস্তুতি ছিল না তাই সামলে উঠে খানিক সময় লাগবে বলেই জানায় রেল কর্তৃপক্ষ। ঠিক সেই কারণেই সোমবার অর্থাৎ আজকের হাওড়া থেকে পুরী গামী বন্দে ভারত এক্সপ্রেস বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেই মর্মে বিজ্ঞপ্তিও জারি করা হয়েছে ইতোমধ্যেই।