দেখা হল না ছেলের সঙ্গে! হাসপাতালে বসেই বাবার মৃত্যুসংবাদ পেলেন সুড়ঙ্গ-শ্রমিক

Uttarkashi Tunnel Rescue: ভক্তুদের উদ্ধারের ঠিক বারো ঘণ্টার মাথায় নিজের বিছানায় বসে থেকে থেকেই মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়েন বাবা বরসা। আন্দাজ করা হচ্ছে, মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক।

১৭ দিন সুড়ঙ্গের অন্ধকারে কাটিয়ে আলোয় ফিরল ছেলে। কিন্তু ছেলের ঘরে ফেরা দেখতে রইলেন না বাবা। মঙ্গলবার উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ থেকে শ্রমিকদের উদ্ধারের বারো ঘণ্টার মধ্যেই মারা যান ঝাড়খণ্ডের ওই শ্রমিকের বাবা।

গত ১২ নভেম্বর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে ধস নেমে আটকে যান ৪১ জন নির্মাণকর্মী। লাগাতার ১৭ দিন কেটেছে ওই সুড়ঙ্গের। হাজার হাজার উদ্ধারকর্মী, ইঞ্জিনিয়ার এবং দেশ-বিদেশ থেকে আসা বিশেষজ্ঞ দল। লাগাতার চেষ্টার পরেও বারবার উদ্ধারের পথে এসেছে বাঁধা। প্রতিদিন সকালে যে আশার আলো ঘিরে ধরেছে বন্দি শ্রমিক ও তার পরিবারকে, প্রতি সন্ধেয় তা নিভে গিয়েছে সূর্যের সঙ্গেই। এই সতেরোটা দিন যেমন কঠিন ছিল বন্দি শ্রমিকদের জন্য, তার চেয়েও বেশি উৎকণ্ঠার, উদ্বেগের ছিল পরিবারের জন্য। বহু শ্রমিকই এসেছেন এমন আর্থ সামাজিক অবস্থা থেকে, যে ছেলের অনুপস্থিতিতে এই ১৭ দিন হাঁড়ি চড়েনি সেসব বাড়িতে।

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গ খননের কাজ করতে এসেছিলেন শ্রমিকেরা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা, বাংলা থেকে শুরু করে ঝাড়খণ্ড, হিমাচল, এই সমস্ত রাজ্যের শ্রমিকরাই ছিলেন সুড়ঙ্গের ভিতরে। সবচেয়ে বেশি ছিলেন ঝাড়খণ্ড থেকে আসা শ্রমিকরাই। তাদের মধ্যেই ছিলেন ঝাড়খণ্ডের সিংভূম জেলার বাহড়া গ্রাম থেকে উত্তরাখণ্ডে কাজ করতে আসা ২৮ বঠরের ভক্তুও। ছেলের বিপদের খবর শুনে থেকেই টিভির পর্দায় চোখ পেতে বসে থাকতেন বাবা বরসা মুর্মু। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় চোখের পাতা এক করতে পারতেন না ৭০ বছরের বৃদ্ধ। সবসময়ে মনে হত, আদৌ কোনওদিন ফেরা হবে তো ছেলেটার!

আরও পড়ুন: ৪১ শ্রমিকের এই পুনর্জন্ম আসলে ‘মিরাকল্’! কেন প্রকৃতিকেই সমস্ত কৃতিত্ব দিচ্ছেন আর্নল্ড?

কিন্তু বাবার প্রার্থনার জোর হোক বা ছেলের ভাগ্যের গুণ, সুড়ঙ্গের ওই অন্ধকার থেকে অবশেষে ফিরল ছেলে। শুধু ভক্তু নয়, তার সঙ্গে বন্দি ৪১ জনকেই উদ্ধার করা গিয়েছে সিল্কিয়ারার ওই সুড়ঙ্গ থেকে। উদ্ধারের পর তাঁদের রাখা হয় সামনের একটি অস্থায়ী হাসপাতালে, যা তৈরিই করা হয়েছিল এই শ্রমিকদের সুস্থ করে তোলার জন্য। যেখানে শারীরিক অবস্থার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারটাও খতিয়ে দেখা হবে। এতগুলো দিন অন্ধকার সুড়ঙ্গে কাটানো তো আর মুখের কথা নয়। এর প্রভাব শরীরের পাশাপাশি পড়ে মনেও। তবে উদ্ধার হওয়া প্রতিটি শ্রমিকই বাড়ি ফেরার জন্য ব্য়তিব্য়স্ত।

Tunnel Worker's Father Dies Hours Before Rescue. "Anxiety", Says Family

 

বাবা-মা পরিবারের সঙ্গে দেখা করার জন্য একই রকম অস্থির ছিলেন ভক্তুও। তথনও জানতেন না, বাড়ি ফিরলেও বাবার সঙ্গে আর কোনওদিনই দেখা হবে না তাঁর। ভক্তুদের উদ্ধারের ঠিক বারো ঘণ্টার মাথায় নিজের বিছানায় বসে থেকে থেকেই মৃত্য়ুর কোলে ঢলে পড়েন বাবা বরসা। আন্দাজ করা হচ্ছে, মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক। এতদিন ধরে ভয়াবহ উদ্বগ, উৎকণ্ঠা থেকে হঠাৎ মুক্তির ধকলটা সম্ভবত শরীর নিতে পারেনি। আর সেটাই হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা। তার পর থেকে কথাবার্তা বন্ধ করেছেন ভক্তুর মা পিতি মুর্মু। দু-চোখ জুড়ে শুধু একরাশ শূন্যতা। যে চোখ এতদিন ছেলের অপেক্ষায় ছিল, ছেলেকে ফিরে পেতে না পেতেই যে স্বামীকে হারাতে হবে, এমন ভাবনা বোধহয় দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তিনি।

আরও পড়ুন:১২ নভেম্বর সুড়ঙ্গ ভাঙার সময় ঠিক কী ঘটেছিল? ১৭ দিন পর মুক্তি পেয়ে জানালেন শ্রমিক

ভক্তুর জামাইবাবু জানান, মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ছেলের কুশল জানার জন্য ব্যস্ত ছিলেন বৃদ্ধ। হঠাৎ করেই বিছানা থেকে পড়ে যান তিনি। আর তার পরেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে খবর। তবে এই সংক্রান্ত কোনও মেডিক্যাল রিপোর্ট মেলেনি। বাবার মৃত্যুর খবর আসতেই ভক্তুকে হাসপাতাল থেকে এয়ারলিফট করে সোজা রাঁচি নিয়ে যাওয়া হয়। আপদকালীন পরিস্থিতিতে ভক্তুকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হলেও বাকি শ্রমিকদের আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে পাখা হবে ঋষিকেশের এইমস হাসপাতালে। এর পর তাদের সেখান থেকে সোজা দেহরাদূন নিয়ে যাওয়া হবে। ঝাড়খণ্ড থকে আসা শ্রমিকদের সেখান থেকে দিল্লিতে পাঠানো হবে, দিল্লি থেকে রাঁচি যাবেন তাঁরা। ইতিমধ্যেই রাঁচির বাসিন্দাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঝাড়খণ্ড সরকারের তরফে একটি তিন সদস্যের দল উত্তরাখণ্ডে পৌঁছেছে। বাকি রাজ্যগুলি থেকে পৌঁছেছে রাজ্য সরকারি দল।

More Articles