'সবার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে', খোদ মোবাইল আবিষ্কর্তার মুখেই এমন কথা! কেন বললেন এমনটা?
Martin Cooper Mobile Phones : দারুণ সব সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো এমন দিনও আসবে, যেদিন এই মোবাইল মানুষের রোগ নির্ণয়ও করে দিতে পারবে।
বাড়ি হোক বা অফিস, কিংবা রাস্তাঘাটে – সবার হাতে হাতে সর্বক্ষণ ঘুরে বেড়ায় মোবাইল। নানারকম মডেল, তার আবার নানা বাহার। খেতে, চলতে, যেতে আসতে সবসময় মানুষের হাতে ঘোরাফেরা করছে এই মোবাইল। বাড়ির বাচ্চারাও সারাদিন সেখানে পাবজির মতো গেম খেলতে ব্যস্ত। আর এসব দেখেই রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়েছেন মার্টিন কুপার। আমেরিকার এই বৃদ্ধ আদতে ইঞ্জিনিয়ার; স্রেফ এই কথাটি বললে ভুল হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং জগতের কিংবদন্তি মার্টিন আসলে মোবাইলের আবিষ্কর্তা। তাঁর হাত ধরেই এই বস্তুটি প্রথমবার বাজারে এসেছিল। সেই মানুষটিই তাঁর আবিষ্কৃত যন্ত্রের এমন ‘বিস্ফোরণ’ দেখে রীতিমতো অবাক!
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জগতে তিনি ‘মোবাইলের জনক’, বা ‘ফাদার অফ সেল ফোন’। আজ থেকে ৫০ বছর আগে এই যন্ত্রটি আবিস্কার করেছিলেন। তারপর থেকে কেটে গিয়েছে অনেকগুলো বছর। সেদিনের মোবাইল আজ রূপ বদলে আরও আরও আধুনিক হচ্ছে। খোদ মার্টিন কুপারও বলছেন, আমাদের পকেটের ভেতর থাকা এই ছোট্ট যন্ত্রটি করতে পারে না, হেন কোনও কাজ নেই। এর দারুণ সব সম্ভাবনা রয়েছে। হয়তো এমন দিনও আসবে, যেদিন এই মোবাইল মানুষের রোগ নির্ণয়ও করে দিতে পারবে।
কিন্তু এটা তো গেল মুদ্রার একটি পিঠ। অপর দিকেরও সাক্ষী থেকেছেন মার্টিন কুপার। আর সেটা দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে গিয়েছেন তিনি। ৯৪ বছর বয়সি এই কিংবদন্তি প্রযুক্তিবিদের কথায়, মোবাইল এত অধিক মাত্রায় ব্যবহার করতে করতে মানুষ পাগলই হয়ে গিয়েছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময়, এমনকী রাস্তা পেরনোর সময়ও কানে হেডফোন লাগিয়ে নাগাড়ে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকেন অনেকে। যে কোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনাও তো ঘটে যেতে পারে। মানুষের প্রাণের কোনও দাম নেই! এসব দেখে আরওই ভয় পেয়ে গিয়েছেন খোদ মোবাইল আবিষ্কর্তা মার্টিন কুপার।
আর এই দৃশ্য দেখার পর তিনি ফিরে গিয়েছেন ৫০ বছর আগের সেই দিনগুলোয়। সেটা ১৯৭২ সালের কথা। তখন মোটোরোলা কোম্পানিতে কাজ করতেন মার্টিন কুপার। ঠিক করা হল, মোবাইল টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা হবে। এমন প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে যে কোনও জায়গা থেকে ফোন করা যাবে। পরীক্ষা নিরীক্ষা চলতে চলতে ওই বছরেরই মার্চে তইর হল প্রথম সেল ফোন। এক কিলো ওজনের ওই ফোনটি দিয়ে মাত্র ২৫ মিনিটই টানা কথা বলা যেত। ব্যাটারিও থাকত অতক্ষণই।
আজকের মোবাইল দেখলে মনেই হবে না, তার পূর্বপুরুষের চেহারা এমন বিরাট ছিল! তখন থেকেই মূলত যাত্রা শুরু হল মোবাইলের মার্টিন কুপারের দেখানো পথেই এগোলেন বাকিরা। একটু একটু করে মোবাইলের ধরন বদলাল। মার্টিন নিশ্চিত ছিলেন, তাঁর আবিষ্কৃত এই যন্ত্র একদিন পৃথিবী বদলে দেবে। আক্ষরিক অর্থে, সেটাই হল। প্রথমে মানুষের মনে ধাঁধাঁ লাগলেও, পরে মোবাইলই হয়ে গেল নিত্যসঙ্গী।
সেইসঙ্গে আরও একটি জিনিস লক্ষ্য করেছেন মার্টিন কুপার। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, প্রজন্ম যত এগিয়েছে, তত মোবাইলের ব্যবহার আরও খোলতাই হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে নিজের বাড়ির কথাই টেনে আনলেন। তাঁর নাতি নাতনিরা যেভাবে মোবাইল ব্যবহার করে, তা দেখে আশ্চর্য হয়ে যান মার্টিন। তিনি নিজে মোবাইল আবিস্কার করেছিলেন, অথচ তিনিও এত ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন না। তাঁর মতে, যত সময় এগোবে, মোবাইলের ব্যবহার আরও নতুন নতুন জায়গায় পা রাখবে। সেইসঙ্গে খারাপ দিকটা সরিয়ে ভালো দিকে পা বাড়াবে মানুষ।