৭০ ঘণ্টা ধরে টানেলে আটকে ৪০ শ্রমিক! কেন বিতর্কিত উত্তরাখণ্ডের ৮৫৩ কোটির এই সুড়ঙ্গ?
Uttarakhand Tunnel Collapse : দীপাবলির আলোতে উজ্জ্বল যখন, টানেলের অন্ধকারে আটকে রয়েছেন ৪০ জন শ্রমিক।
৩ দিন অতিক্রান্ত। উত্তরাখণ্ডের চরধাম হাইওয়ে প্রকল্পের নির্মাণাধীন টানেলের ধসে পড়া অংশে এখনও আটকে রয়েছেন ৪০ জন শ্রমিক! গোটা দেশ দীপাবলির আলোতে উজ্জ্বল যখন, টানেলের অন্ধকারে আটকে রয়েছেন ৪০ জন শ্রমিক। কোনওদিনও আর দিনের আলো দেখার সুযোগ হবে কিনা, নিশ্চয়তা নেই। উদ্ধারকারীরা বলছেন আরও ২৪ ঘণ্টা লাগতে পারে উদ্ধারে। হয়তো বা তারও বেশি সময়। কেন এত সময় লাগছে শ্রমিকদের উদ্ধারে?
দেরাদুন থেকে বোরিং মেশিন আনা হয়েছে। আট বিশেষজ্ঞের একটি দল পৌঁছেছে যথাস্থানে। যমুনোত্রী-গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়কের সিল্কিয়ারা এবং বারকোটের মধ্যে ৪.৫ কিলোমিটার লম্বা যে টানেল তৈরি হচ্ছে তারই একটি অংশ ভূমিধসের কারণে ভেঙে পড়ে, শ্রমিকরা আটকা পড়েন। ৮৫৩ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হচ্ছে এই টানেল। কিছুকাল আগেই যোশীমঠ অঞ্চলে ভূমি বসে যাওয়ার ঘটনার পর থেকেই অত্যন্ত বিতর্কিত হয়ে পড়ে চারধাম অল-ওয়েদার রোড প্রকল্প। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক জানাচ্ছে, শ্রমিকরা রিপ্রোফাইলিংয়ের কাজ করছিলেন। ১২ নভেম্বর ভোর ৫.৩০ টা নাগাদ ১০০ মিটার লম্বা একটি ছাদ ভেঙে পড়ে।
আরও পড়ুন- জোশীমঠ নিয়ে মিডিয়াকে কোনও তথ্য না! কোন রহস্য ধামাচাপা দিতে চাইছে সরকার?
উত্তরাখণ্ড রাজ্য বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের আধিকারিকরা বলেছেন, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে একটি পাইপ ঢোকানোর জন্য বিশেষ মেশিন আনা হয় যাতে আটকে পড়া শ্রমিকদের ওটির মাধ্যমে সরিয়ে নেওয়া যায়। তবে ওই অঞ্চলের মাটি আলগা, মাটির যা অবস্থা তাতে উদ্ধার অভিযান কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। যদি সামান্যও ভুল হয় তাহলে উদ্ধারকারী যন্ত্রগুলিও ভেঙে পড়তে পারে৷
ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের আধিকারিকদের দাবি, আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য ওই সুড়ঙ্গের ভিতরে যথেষ্ট জায়গা ছিল এবং তাদের খাবারও সরবরাহ করা হচ্ছে। শ্রমিকরা ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়েছে এমন নয়। মাঝপথে ছাদ ভেঙে পড়েছে। তাই শ্রমিকদের চলাফেরার জন্য সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রায় ২ কিমি মতো খোলা জায়গা রয়েছে। বিদ্যুৎও আছে, ওয়াকিটকির মাধ্যমে শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগও করা হয়েছে। খাবার দরকার। তাই শুকনো ফল দেওয়ার জন্য ৪-ইঞ্চি ব্যাসের একটি পাইপ ঢোকানো হয়েছে সুড়ঙ্গে। আটকে পড়া শ্রমিকদের বেশিরভাগই বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল প্রদেশ থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিক।
সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্টে NHIDCL জানিয়েছে, শ্রমিকদের বের করে আনার জন্য হাইড্রোলিক জ্যাকের সাহায্যে ৯০০-মিমি (৩৫ ইঞ্চি) ব্যাসের ইস্পাত পাইপ ঢোকানোর জন্য চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই কাজ কখন শেষ হবে তা নিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। মন্ত্রক বারেবারেই বলেছে, এই টানেল তৈরি হলে তীর্থযাত্রীদের ব্যাপক উপকার হবে। সব ধরনের আবহাওয়াতেই এই টানেল কার্যকরী থাকবে এবং NH-134 (ধারাসু-বারকোট-যমুনোত্রী সড়ক)-এর যে ২৫.৬ কিলোমিটার বরফ ঢাকা রাস্তা পেরোতে হয় সেই সফরের দৈর্ঘ্য কমে হবে ৪.৫ কিলোমিটার। যাত্রীদের ৫০ মিনিটের পথ কমে হবে ৫ মিনিটের রাস্তা।
আরও পড়ুন- নিরাপদ নয় দার্জিলিংও! কীভাবে জোশীমঠের মতোই তলিয়ে যাওয়ার পথে পাহাড়ের রানি?
এনএইচআইডিসিএল এর কন্ট্র্যাক্টর নবযুগ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু করে। লক্ষ্য ছিল ২০২২ সালের মধ্যে শেষ হবে টানেল। কাজ এখনও চলছে। ২০২৪ সালের মে মাসে কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্ত্রক জানাচ্ছে।
১২,০০০ কোটি টাকার চারধাম হাইওয়ে প্রকল্প ২০১৬ সাল থেকেই বিতর্কের মুখে পড়েছে। এই বছরের দীপাবলির ধসটি সেই বিতর্ক ফের তুলে এনেছে। এই বছরই বর্ষাকালে এই প্রকল্পের অন্য অংশে, বদ্রীনাথ মহাসড়কের কিছু জায়গা ধসে পড়ার কারণে কয়েকদিন বন্ধ ছিল যাতায়াত।
স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পরিবেশবিদরাও এই বিশাল টানেল নির্মাণের বিরোধিতা করেছেন। পাহাড়ের এই অংশ এমনিতেই ভঙ্গুর, দুর্বল। ভারী মেশিন দিয়ে এই বিশালাকার টানেল খোঁড়া হলে প্রকৃতি মোটেই তা সহজে মেনে নেবে না। ৮৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ চারধাম প্রকল্পর উদ্দেশ্য গঙ্গোত্রী, যমুনোত্রী, কেদারনাথ এবং বদ্রীনাথের চারটি মন্দিরকে অল-ওয়েদার হাইওয়ে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে জুড়ে দিতে। পাশাপাশি ভারত-চিনের সীমান্তে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম দ্রুত সরবরাহ করার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ হবে এই পথ।