১২ নভেম্বর সুড়ঙ্গ ভাঙার সময় ঠিক কী ঘটেছিল? ১৭ দিন পর মুক্তি পেয়ে জানালেন শ্রমিক

Uttarakhand Tunnel Rescue : ওয়াকিটকি পাঠানোর পর যখন তারা নিজেদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন, তাতে অনেকটা আশ্বস্ত হন সকলে।

১৭ দিনের অন্ধকার শেষে আলোয় ফিরেছেন ৪১ জন পরিযায়ী শ্রমিক। সকলেই নিরাপদ, সকলেই সুস্থ। ২৮ নভেম্বর সন্ধ্যায়, একে একে বের করে আনা হয় সকলকে। দীপাবলির রাত্রে, ১২ নভেম্বর থেকে অন্ধকার সুড়ঙ্গে থেকে গেছিলেন তারা, মুক্তির পর তাঁরাই জানাচ্ছেন, প্রকৃতির উপর কারও হাত নেই। টানেলে কাজ করছিলেন অখিলেশ সিং। ৪১ জন আটকে পড়া শ্রমিকের মধ্যেই তিনি একজন। বেরিয়ে এসেই জানান একদম ঠিক আছেন, সুস্থ আছেন। শারীরিক কোনও অসুবিধা নেই। ১২ নভেম্বর ঠিক কী ঘটেছিল? নিজের অভিজ্ঞতা সকলকে জানিয়েছেন তিনি।

অখিলেশ জানাচ্ছেন, কাজ করে ফিরছিলেন সেদিন। তাঁর সামনেই ৩০০-৪০০ মিটার আগে টানেল ভাঙে। বিশাল জোরে আওয়াজ হয়, কিছুক্ষণের জন্য কানে তালা লেগে যায়। অখিলেশ জানাচ্ছেন, আওয়াজ শুনে প্রথমে তাঁর অন্য আশঙ্কা হয়। ওখানেই ছিল অক্সিজেন ডাক্ট! "ওইটা ভেঙে পড়ল না তো! সামনে তাকিয়ে দেখি টানেল ভেঙেছে। আরও ভাঙছে ক্রমে। আমার সঙ্গে আরও একজন শ্রমিক ছিলেন। বাকি কর্মীরা পরে দৌড়ে আসেন। এসে দেখেন সবটা। আমরা বুঝতে পারি ভেতরে ফেঁসে গিয়েছি," ১২ নভেম্বরের কথা মনে করে বলেন তিনি। এই সুড়ঙ্গ থেকে কোনওদিন আর বাইরে বেরোতে পারবেন ভেবেছিলেন?

আরও পড়ুন- তিনি না থাকলে প্রাণ হারাত ৪১ শ্রমিক! সুড়ঙ্গ থেকে উদ্ধারের নেপথ্যে কে এই আর্নল্ড ডিক্স?

অখিলেশ জানাচ্ছেন, তাঁরা সুড়ঙ্গ খোঁড়ার শ্রমিক। তাঁদের প্রশিক্ষণেই কিছু বিষয় বলা থাকে। এই ধরনের সুড়ঙ্গে একটি ডিওয়াটারিং পাইপ থাকে। তার একটা শুরুর মুখ, একটা শেষের। অখিলেশ বলছেন, "আমরা ভেবছিলাম, প্রথমে পাইপ লাইনটা খুলি। ওইটা চালু করি। তাতে জল কিছুটা বাইরে বেরিয়ে যায়। এই ঘটনায় বাইরে থাকা মানুষজন সংকেত পায় যে ভেতরে কিছুজন আছে। সংকেত মেলার ১৮ ঘণ্টা পরে আমাদের পাইপ দিয়ে অক্সিজেন পাঠানো হয়।"

এই ১৮ ঘণ্টা কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই, বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন। তারপর ভেতরে একে একে অক্সিজেন আসে, ভেজা ছোলা, শুকনো খাবার সবই পাইপ দিয়েই পাঠানো হয় তাঁদের। টানেলের মধ্যে ২ কিলোমিটার জায়গা ছিল। সেখানে অক্সিজেন অনেকটাই ছিল। সেই অক্সিজেন দিয়ে ২-৩ দিন চলেই যেত। তাও ভেতরে দ্রুতই অক্সিজেন পাঠানো হয়েছে। অখিলেশ জানাচ্ছেন, আলো ছিলই ভেতরে। আন্ডারগ্রাউন্ড কেবল ছিল। ফলে আলো পেয়েছেন সবসময়। যা খাবার আসত তা সবাই ভাগ করে খেতেন। কম্প্রেসরের মধ্যে দিয়ে খাবার আসার ফলে কিছু খাবার নষ্ট হয়ে যেত কিন্তু সারাক্ষণই জোগান ছিল খাদ্যের। ধীরে ধীরে ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন- “স্নান করে নিস কিন্তু” : সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসা বাংলার শ্রমিককে বললেন মা

এই ১৭ দিন কেবল নিজেরা নিজেদের সাহস জুগিয়েছেন। জানতেন, কিছু না কিছু ব্যবস্থা হবেই। নিজেদের কেবল ঠিক থাকতে হবে। ১০ দিন অন্তত কিছুই করেননি তারা। একটু বড় পাইপ আসার পরে ক্রিকেটের জিনিস পাঠানো হয়। নিজেদের ঠিক রাখতে অল্প ব্যায়াম করেন ভেতরে। অখিলেশ জানান, প্রথম থেকেই ওই ৬ ইঞ্চির পাইপটা ছিল কিন্তু ভেঙে পড়ার ফলে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। ওয়াকিটকি পাঠানোর পর যখন তারা নিজেদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন, তাতে অনেকটা আশ্বস্ত হন সকলে। শ্রমিকদের পরিবার স্বস্তি পায়। আর শ্রমিকরাও নিশ্চিন্ত হন, মনের জোর পান।

১১ দিন পর থেকে দুধ, খিচুড়ি সব পাঠানো হয়। অখিলেশ জানান, টানেলেও এখন ১৫ থেকে ২০ দিনের খাবার রয়েছে, ২০-২৫ কেজি কাজু, ২৫ কেজি আপেল, পেয়ারা ভেতরেই আছে এখনও। পাইপ দেখা মাত্রই তারা বেরিয়ে আসেন। ১৭ দিন ওইভাবে সুড়ঙ্গে থাকলে মাথা ব্যথা, পেট খারাপ তো হবেই। তাতে ভুগেছেন সকলেই। একজন শ্রমিকের হাত কেটে গেছিল। কিন্তু ওষুধ পেয়েছেন সবাই। অখিলেশরা এখন মুক্ত। জানাচ্ছেন, এবার বাড়ি যাবেন। এক দু' মাস বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে তারপর কাজে ফেরার কথা ভাববেন। তবে অখিলেশ এও বলছেন, সুড়ঙ্গে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে কারও কোনও হাত নেই। কিছুদিন আগে এই জায়গাতে ভূমিকম্পও হয়। দুর্বল জায়গা, সবাই জানেন। তবু প্রকৃতির উপর কারও হাত নেই।

More Articles