বন্দে ভারত কি আসলে ঢপের ঢক্কানিনাদ? বাংলা যা ভাবছে

Vande Bharat Express Truth : বন্দে ভারতে যাত্রী সুরক্ষা আসলে কি ঢক্কানিনাদ? বন্দে ভারত এক্সপ্রেস কি রাজনৈতিক হাতিয়ার?

ভারতীয় রেল নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের তালিকা করা হলে তা এভারেস্টের উচ্চতাকে হেলায় হারিয়ে দেবে। রেল নোংরা, ট্রেন সময়ে না আসা, প্ল্যাটফর্ম নরকসমান হয়ে থাকা, যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা সব মিলিয়ে ভারতীয় রেলের ভাবমূর্তি মোটেও সুবিধার ছিল না। নরেন্দ্র মোদি সরকার আসার পরেই 'সব বেচে দে' জাতীয় যে ধ্বনি ওঠে তার মূলে রয়েছে ভারতীয় রেলের বেসরকারিকরণ বা বলা ভালো কর্পোরেটাইজেশন। সব কিছু ঝাঁ চকচকে হবে, স্টেশন না শপিং মল বোঝার উপায় থাকবে না। ট্রেনের আসন আর খোবলানো থাকবে না, যাত্রীরা আরামে আর কম সময়ে যাতায়াত করবেন। এই ভাবনার মাঝেই ভারতীয় বাজারে আসে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। সেমি হাইস্পিড ট্রেন, একেবারে কেতাদুরস্ত! প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রা শুরু করেছিল ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে। প্রথম এই ট্রেনটি চলেছিল নতুন দিল্লি থেকে বারাণসী অবধি। সরকার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশে সব মিলিয়ে ৩৪ টি বন্দে ভারত ট্রেন চলবে। কিন্তু বন্দে ভারত নামে যত আকর্ষণীয়, আদতেই কি তাই? যা যা প্রতিশ্রুতি রেল দিয়েছিল তা কি পূরণ করে বন্দে ভারত? বন্দে ভারত ট্রেনের আসল সত্য তুলে ধরা যাক।

বন্দে ভারতের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১৮০ কিমি। ১৬ কোচের বন্দে ভারত এক্সপ্রেস গড়তে খরচ হয় ১১৫ কোটি টাকা। এই ট্রেন ইঞ্জিন ছাড়াই নিজস্ব মডিউলে চলে। বন্দে ভারতের ১৬ টি কামরাই বাতানুকুল। এর মধ্যে জিপিএস-এর মাধ্যমে সিসিটিভি-নজরদারি চালানো হয়। আর টিকিটের সর্বোচ্চ দাম ৩৫৩৫ টাকা (মুম্বই-গোয়া)। এবার প্রশ্ন উঠছে এই টাকার বিনিময়ে যাত্রীরা সেই সুবিধাই পাচ্ছেন তো যা পাওয়ার কথা? সুপার ফাস্ট ট্রেনের গতিবেগে কি কোথাও সমঝোতা করা হচ্ছে? বন্দে ভারতে যাত্রী সুরক্ষা আসলে কি ঢক্কানিনাদ? বন্দে ভারত এক্সপ্রেস কি রাজনৈতিক হাতিয়ার?

আমেরিকায় ঘণ্টায় ২০০ কিমি গতিবেগে চলে ট্রেন। ইওরোপে ঘণ্টায় ২৫০ কিমি। জাপানে ঘণ্টায় ৩০০ কিমি বা তারও বেশি গতিবেগ থাকে ট্রেনে। আর ভারতে? সেখানে বন্দে ভারতের মত সেমি হাইস্পিড ট্রেন যায় ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার। কিছু কিছু এলাকায় সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে। বন্দে ভারত যে দামে টিকিট বিক্রি করছে, তার চেয়ে কম দামের টিকিটের ট্রেনে, বন্দে ভারতের চেয়েও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর ট্রেন তো আছেই! বন্দে ভারতের রুটের ট্রেন চেন্নাই-মাদুরাই এক্সপ্রেসের কথাই ধরা যাক। বন্দে ভারতের চেয়ে কম সময় নিলেও বন্দে ভারতকে ওই একই লাইনে বেশি দামের টিকিটে চালু করা হলো। একই ঘটনা ঘটেছে কন্যাকুমারী, পার্লসিটি, নেল্লাই এক্সপ্রেসের ক্ষেত্রেও।

২০১৪ সালের পর ভারতীয় রেল তার ইকো-সিস্টেম বদলে ফেলেছে। রেলের নীতি নির্ধারণে এখন পরামর্শদাতাদের বক্তব্যই শেষ কথা। যাদের ভারতীয় রেলের মত বড় প্রতিষ্ঠান চালানোর মতো কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন নির্দিষ্ট বৃত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বন্দে ভারত এমনই এক পরিকল্পনার ফসল। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কতটা সফল?

বালাসোরের মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনায় 'কবচ' প্রযুক্তি শিরোনামে আসে। এই দুর্ঘটনার দায় কি রেল সত্যিই এড়াতে পারে? দুর্ঘটনার ৬০ দিন আগেই রেল বোর্ডের চিঠিতে অন্তত ৫টি ঘটনার উল্লেখ ছিল। রেলের অদক্ষতাতেই যাত্রীরা চরম বিপদে পড়েন। ট্রেনে যাত্রী এবং মহিলা নিরাপত্তার কথা বললে চিত্রটা আরও খানিক পরিষ্কার হয়। তথ্য জানার অধিকারে আইনে জানা গিয়েছে ২০১৭-২০১৯ এই দু'বছরে রেলের এক্তিয়ার ভূক্ত এলাকায় ১৩৬ টি ধর্ষণ হয়। ২৯ টি ধর্ষণ হয় চলমান ট্রেনে। চলতি বছরের এপ্রিলের ঘটনা, আলেপ্পুঝা-কুন্নুর এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত কামরায় এক যাত্রী পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় তিন যাত্রীর। আহত হন ৯ জন। দাহ্য পর্দাথ নিয়ে ট্রেনে ওঠায় নিষেধাজ্ঞা আছে। কিন্তু নজরদারি নেই।

নাগপুর-মুম্ৱই দুরন্ত এক্সপ্রেসে স্লিপার কোচ কমেছে। অমরাবতী-মুম্ৱই এক্সপ্রেসে কোচ কমেছে। ৮ কোচের বদলে দুরন্তে মাত্র ২ স্লিপার কোচ দেওয়া হচ্ছে। আরও বহু ট্রেনে স্লিপার কোচ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর অন্যদিকে বন্দে ভারতে জুড়তে চলেছে চোখ ধাঁধানো স্লিপার কোচ!

জনৈক সমাজকর্মী অজয় বোসের রাইট টু ইনফরমেশন অ্যাক্ট-এর আওতায় করা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে ইস্ট কোস্ট রেলওয়ের তরফে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। সেই রিপোর্টে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া থেকে ওড়িশার পুরী, রাজস্থানের আজমের থেকে দিল্লি ক্যান্টনমেন্ট, কেরলের কাসারগড় থেকে তিরুবনন্তপুরম এবং তামিলনাড়ুর চেন্নাই থেকে কোয়েম্বাটোর পর্যন্ত ৪টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের শুধুমাত্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়েই প্রায় ৫,৬০,৮৭,২৩৭ কোটি টাকা খরচ করছে ভারতীয় রেলওয়ে। বলা বাহুল্য, এই টাকা জনগণের। অথচ জনগণের সুবিধা কতখানি মাথার রাখছে রেল?

বাংলা যা ভাবছের আজকের পর্বে প্রশ্ন এটিই। দেখুন আজ সন্ধ্যায়। সাংবাদিক, বিশ্লেষকরা কী বলছেন? আজকের পর্ব, বন্দে ভারত, ঢপের ঢক্কানিনাদ? প্রতি সোম, বুধ, শুক্র সন্ধে ৭ টা থেকে - কলকাতা ২৪x৭ এর ইউটিউব চ্যানেল এবং inscript.me এর ফেসবুক পেজে চোখ রাখুন।

 

More Articles