বিহার, উত্তরপ্রদেশ নয়! খোদ বাংলায় প্রকাশ্যে বীভৎস মার যুবক-যুবতীকে! নেপথ্যে তৃণমূল?
Chopra Viral Video: জেসিবি নামের যে লোকটি ওই যুবক যুবতীকে মারছেন তাঁর আসল নাম তাজম্মুল।
সালোয়ার কামিজ পরা এক যুবতী কাতরাচ্ছেন মাটিতে শুয়ে, তাঁকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারছেন আরেক যুবক। বাঁশের ছোট ছোট ডাণ্ডা দিয়ে ভয়াবহ মার চলছে। গোল করে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য মানুষ, পুরুষই বেশি। সকলে মিলে প্রত্যক্ষ করছেন এক ভয়াবহ মারের দৃশ্য। সিনেমা নয়, ঘোর বাস্তব। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার নয়, এই বাংলার দৃশ্য! রাস্তায় ফেলে মারের এই দৃশ্যের ভিডিও স্তব্ধ করে দেয়। মার খেতে খেতে নেতিয়ে পড়া যুবতীকে চুলের মুঠি ধরে টেনে এনে ফের মারছেন ওই পুরুষটি! শুধুই যুবতী নন, তাঁর পাশেই পড়ে রয়েছেন এক যুবকও। তাঁকেও মারা হচ্ছে নির্মমভাবে। আর গোল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষরা দেখছেন, তেমনভাবে এগিয়ে এসে থামাচ্ছেনও না কেউই! পশ্চিমবাংলাতেই এমন অবস্থা! কেন এমন বীভৎস মার মারা হলো ওই যুবক-যুবতীকে?
রবিবার এক্স-এ এই পিটুনির ভিডিও পোস্ট করেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ‘‘সালিশি সভাও নয়। অপরাধের বিচার এবং শাস্তি দিচ্ছে তৃণমূলের পোষা গুন্ডা। যার ডাকনাম জেসিবি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে এভাবেই বিচার ব্যবস্থাকে দুরমুশ করা হচ্ছে চোপড়ায়,’’ ভিডিও পোস্ট করে লেখেন মহম্মদ সেলিম। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্যও এই ভিডিও পোস্ট করেন এবং লেখেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনে থাকা বাংলার কুৎসিত মুখ।... প্রত্যেক গ্রামেই সন্দেশখালি রয়েছে।’’
আরও পড়ুন- লক্ষ্মীর ভাণ্ডার সত্যিই মহিলাদের ‘ভিক্ষা’? কী বললেন মহম্মদ সেলিম?
সেলিমের পোস্ট অনুযায়ী ঘটনাটি চোপড়ার। চোপড়া উত্তর দিনাজপুর জেলার মধ্যে পড়ে। তবে তা আলাদা পুলিশ জেলা ইসলামপুরের অংশ। ইসলামপুরের পুলিশ সুপার জবি থমাস জানাচ্ছেন, প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন যে, লক্ষ্মীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় দিন দু’য়েক আগে ঘটনাটি ঘটে। এ ব্যাপারে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশই মামলা দায়ের করেছে। যারা ওই যুবক যুবতীকে রাস্তায় ফেলে পেটাচ্ছিলেন তাদের গ্রেফতার করার জন্য ওই এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
সেলিম আরেকটি পোস্টে দাবি করেছেন, জেসিবি নামের যে লোকটি ওই যুবক যুবতীকে মারছেন তাঁর আসল নাম তাজম্মুল। তাজম্মুল হচ্ছেন চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ। ওই এলাকায় জেসিবি নামেই তাঁর পরিচিতি। সিপিএমের জেলা কমিটি বলছে, ভিডিওতে যে মহিলাকে মাটিতে ফেলে মারধর করা হচ্ছে দেখা যাচ্ছে, তিনি আসলে বিবাহিত। তবে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে তিবি কিছুকাল আগে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে তারা দু'জনে ফিরে এলে তাদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। ওই টাকা না দিলে এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না বলেও হুমকি দেওয়া হয়। জরিমানার ১০ হাজার না দিতে পারাতেই প্রকাশ্যে বেধড়ক মারা হয় ওই যুবক-যুবতীকে।
ঘটনাটির সত্যতা চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান স্বীকার করেছেন। স্বীকার করেছেন, ওই মারের নেপথ্যে থাকা তাজম্মুল বা জেসিবি ওই এলাকায় তৃণমূলের হয়েই কাজ করেন। হামিদুল জানাচ্ছেন, নির্যাতিতা যদি পুলিশে অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই তাজম্মুলকে গ্রেফতার করা হবে। তৃণমূল সরকার এসব কাজকে প্রশ্রয় দেয় না বলে দাবি তাঁর। বিজেপি নেতারা অবশ্য বলছেন, জেসিবির বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অপরাধের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ কখনই তাঁকে গ্রেফতার করেনি কারণ তিনি চোপড়ার বিধায়কের ঘনিষ্ঠ। কিছুদিন আগেই কোচবিহারে এক বিজেপি নেত্রীকে পোশাক খুলিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনাতেও তৃণমূলের বিরুদ্ধেই আঙুল ওঠে।