রোদ লাগে না গায়ে, সারাদিন ঘরে বসেই কাজ! ভয়াবহ যে রোগের মুখে পড়ছেন রোজ

Vitamin D deficiency: ভিটামিন ডি মানুষের দেহে প্রদাহ-বিরোধী কাজ করে যা সরাসরি রক্তচাপ বজায় রাখতে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। আর অলস দেহ? কার্ডিওভাসকুলার রোগের (সিভিডি) ঝুঁকি বাড়ায় জীবনযাপনের এই আলস্য। তবে শুধুই দৈহিক শ্রমের অভাবে নয়, বেশ কয়েকটি গবেষণায় এখন দেখা যাচ্ছে ভিটামিন ডি-এর অভাবেও দেখা দিতে পারে কার্ডিওভাসকুলার রোগ। অনেক গবেষণাই বলছে, শরীরে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা কম হলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকটাই। গত বছরের শুরুর দিকে, সাউথ অস্ট্রেলিয়া ক্যান্সার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর প্রিসিশন হেলথের পরিচালক অধ্যাপক এলিনা হাইপোনেন এবং তাঁর দল গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন যে ভিটামিন ডি-এর অভাব রক্তচাপ এবং সিভিডির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তবে হ্যাঁ, ভিটামিন ডি-এর অত্যধিক ঘনত্ব বৃদ্ধি শুধুমাত্র সেই সমস্ত মানুষদেরই কাজে আসে যাদের দেহের চাহিদা সেটি।

ভিটামিন ডি আসলে একটি চর্বি-দ্রবণীয় প্রোহরমোন যা বিভিন্ন ধরনের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে আর এই নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই ভিটামিন ডি রিসেপ্টরের (ভিডিআর) সঙ্গে একটি যোগসূত্র ঘটায়। ক্যালসিয়ামের বিপাক এবং হাড়ের উপর এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। তাছাড়াও শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ, যেমন যেমন প্রদাহ এবং অনাক্রম্যতাও নিয়ন্ত্রণ করে। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ইমিউনিটি বাড়াতে পারে এবং অটোইমিউন ডিসঅর্ডারের ঝুঁকি কমাতে পারে।

ভিটামিন ডি-এর অভাবে রিকেট, হাড় ভাঙা, অস্টিওম্যালাসিয়া, অস্টিওপেনিয়া, এবং পেশির দুর্বলতা দেখা দেয়। কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকির কারণ যেমন হাইপারটেনশন, সিস্টোলিক এবং ডায়াস্টোলিক ফাংশনের অকার্যকারিতা, বয়স্ক পুরুষদের পেটের অ্যাওর্টিক অ্যানিউরিজম, নন-ভালভুলার এএফ এবং কনজেস্টিভ হার্ট ফেইলিওরের মতো সমস্যাও দেখা দেয় ভিটামিন ডি-এর অভাবে।

পুড়ে যাওয়া, টাইপ ১ ডায়াবেটিস, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অন্ত্রের প্রদাহ রোগ, ক্যান্সার, স্কিজোফ্রেনিয়া, অবসাদ, স্থূলতা, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাট ইত্যাদিও ভিটামিন ডি-এর অভাবের সঙ্গেই জড়িত।

আরও পড়ুন- উচ্চ রক্তচাপ মানেই মৃত্যুর হাতছানি, ভারতে হু হু করে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি

ভিটামিন ডি কীভাবে হার্টকে রক্ষা করে?

ভিটামিন ডি মানুষের দেহে প্রদাহ-বিরোধী কাজ করে যা সরাসরি রক্তচাপ বজায় রাখতে এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। ভিটামিন ডি এর পর্যাপ্ত মাত্রা হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালীগুলিকে সচল রাখে। এটি রক্তনালীর দেওয়ালের আস্তরণকে শক্তিশালী করে যাতে রক্ত অবাধে প্রবাহিত হতে পারে। ওহিও ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় ভিটামিন ডি ৩ নামক ভিটামিন ডি ইনজেকশন দেওয়ার সময় রক্তনালীর কোষগুলি দেখার জন্য মানুষের চুলের চেয়েও প্রায় ১,০০০ গুণ ছোট সেন্সর ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা যায়, ভিটামিন ডি ৩ উচ্চ রক্তচাপের কারণে হার্ট এবং রক্তনালীগুলির যা ক্ষতি হয় তা মেরামত করতে পারে।

শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাবেন কীভাবে?

প্রচুর মাত্রায় নয়, মাঝারি মাত্রার ভিটামিন ডি কার্ডিয়াক স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট। সূর্য আমাদের ভিটামিন ডি-এর প্রধান উৎস কিন্তু শহরাঞ্চলের মানুষ সূর্যালোকে সরাসরি থাকে কম। বিশেষ করে মহামারীর পরে, বাইরে থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি শোষণ করতে ভুলেই গেছে শরীর। সুতরাং, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণের জন্য সম্পূরক বা সাপ্লিমেন্ট প্রয়োজন।

ভিটামিন ডি-এর দুর্দান্ত উৎস হল তৈলাক্ত মাছ যেমন স্যামন, সার্ডিন, হেরিং এবং ম্যাকেরেল, লাল মাংস, ডিমের কুসুম এবং ফর্টিফাইড খাবার যেমন ফ্যাট স্প্রেড এবং সিরিয়াল। কার্ডিওভাসকুলার রিস্ক ফ্যাক্টর এবং হাইপারটেনশনের ক্ষেত্রে ওষুধের মাধ্যমে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্টেশনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা এবং পরীক্ষায় পরস্পরবিরোধী ফলাফল মিলছে। ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে বেশি ভিটামিন ডি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় নয়।

 

More Articles