সিঙ্গুরে টাটাকে ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে? নাকি অন্য পথও খোলা?

Tata Singur Controversy: আইনি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সালিশি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করার রাস্তা খোলাই আছে সরকারের কাছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আবেদন করতে হলে রাজ্য সরকারকে মোট প্রদেয় অর্থের ৫০ শতাংশ জমা করতে হবে।

সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনকে সঙ্গী করে একদিন বদলে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ইতিহাস। বদলে গিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল। বাম জমানার পতন আর পশ্চিমবঙ্গে ঘাসফুল সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল যে সিঙ্গুরের জমি আন্দোলনের হাত ধরে সেই সিঙ্গুরই যেন বুমেরাং হয়ে ফিরল রাজ্য সরকারের কাছে। সিঙ্গুরে টাটার ন্যানো কারখানার জন্য জমি দিয়েছিল বাম সরকার। কিন্তু সেই জমিতে কারখানা না হতে পারার মাশুল দিতে হবে তৃণমূল সরকারকেই। সোমবার আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনাল তথা সালিশি আদালত রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমকে টাটা মোটরসকে ক্ষতিপূরণবাবদ মোট ৭৬০ কোটি টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তার সঙ্গে দিতে হবে ১১ শতাংশ হারে সুদও। এই পরিস্থিতিতে কী করবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার? কী হতে চলেছে পরবর্তী পদক্ষেপ?

রাজ্য প্রশাসন সূত্রে যেটুকু জানা যাচ্ছে, তাতে ইতিমধ্যেই আইনি পরমর্শ নিয়েছে নবান্ন। রাজ্য প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ আমলা মঙ্গলবারই আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের রায়ে রতন টাটার সংস্থা টাটা মোটরসকে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়া হলেও সেই নির্দেশই কিন্তু চূড়ান্ত নয়। এর পরে হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে রাজ্যের। তবে রাজ্যের তরফে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে চলেছে, সে নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। তবে আলোচনা চলছে।

আরও পড়ুন: মমতার ভুল না কি… সিঙ্গুর নিয়ে যা বলছেন সেই মাস্টারমশাই

২০১৬ সাল থেকেই এ নিয়ে টাটা মোটরসের সঙ্গে মামলা চলছিল রাজ্য সরকারের। আর সেই মামলায় আরবিট্রাল ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চের রায় গিয়েছে টাটা মোটরসের পক্ষেই। সালিশি আদালতে টাটা জানিয়েছিল, বিনিয়োগ করার পরেও সিঙ্গুরে কারখানা না হওয়ায় বড়সড় রকমের ক্ষতি হয়েছে টাটা মোটরসের। তার ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের কাছে ৭৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আর ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুরো ক্ষতিপূরণ পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ১১ শতাংশ হারে সুদ দিতে বলা হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যকে দিতে হবে প্রায় ৭৬৬ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমকে।

আইনি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সালিশি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করার রাস্তা খোলাই আছে সরকারের কাছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আবেদন করতে হলে রাজ্য সরকারকে মোট প্রদেয় অর্থের ৫০ শতাংশ জমা করতে হবে। বলাই বাহুল্য, সেই অঙ্কটিও কিছু কম নয়। পাশাপাশি সালিশি আদালতের রায় বিচারবিভাগীয় আদালত নাকচ করে দিয়েছে, এমনটা খুব একটা দেখা যায় না। ফলে সেই সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের বড় অংশ। তার উপর সিঙ্গুর যথেষ্ট জটিল মামলা। জমিদাতা ও রাজ্য সরকারের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে প্রচুর টানাপড়েন ছিলই।

WB govt mulls legal recourse after arbitration tribunal orders it to pay Tata Motors Rs 766 crore for Singur losses

আরও ভালো করে খুঁটিয়ে বললে, সে সময় বাংলায় ক্ষমতায় ছিল বামেরা। তারাই জমি অধিগ্রহণ করেছিল। জমির একচেটিয়া মালিকানা ছিল তাদের হাতেই। কৃষকদের জমি নিয়ে তা তারা টাটাকে বিক্রি করে। এবার রাজনৈতিক পালাবদলের পরে আবার সেই রাজ্যসরকারই টাটার কাছে জমি ফেরত চায়। ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের দাবি, সালিশি আদালতের রায় আদলে বাম সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছে, তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে নয়। বাম সরকারের অপেশাদারিত্বের কারণেই এই গোটা জটিলতা। যার ফল ভুগতে হচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে।

২০০৬ সালের কথা। বিধানসভা ভোটে জিতে টাটা গাড়ি কারখানা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। টাটাকে সেই বাবদ ১০০০ একর জমি দেওয়া হয়। সম্মিলিত বিক্ষোভের মুখে সেই কারখানা শেষমেশ হল না সিঙ্গুরে। ক্ষমতায় এসে তৃণমূল সরকার টাটার কাছে জমি ফেরত চেয়ে পাঠায়। সেই জমি ফেরত দিতে সম্মত হয় টাটা, কিন্তু তার বদলে ক্ষতিপূরণ দাবি করে। যার মধ্যে ছিল টাটার বিনিয়োগ করা অর্থও। টাটার প্রস্তাবে সরকার রাজি না হওয়ায় মামলা গড়ায় আদালতে।

আরও পড়ুন:সিঙ্গুরের ভুলের খেসারত ১৩৫৫ কোটি! রতন টাটার ছোট্ট চালেই কিস্তিমাত?

আর সেখানেই মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের। এবার হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট- দু'পথে হাঁটার পথই খোলা রয়েছে রাজ্যের কাছে। মঙ্গলবার সালিশি আদালতের নির্দেশ এসে পৌঁছেছে নবান্নের কাছে। জানা গিয়েছে, এই নির্দেশ পাওয়ার পরেই মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী বিষয়টি দেখছেন। তবে মোটামুটি জানা যাচ্ছে, এই বিপুল টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আপত্তি রয়েছে রাজ্যসরকারের। তবে পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি।

 

More Articles