কিছুতেই ট্রেন থেকে চুরি করা যাবে না এই জিনিসটি, ভারতীয় রেলের এই অভিনব প্রযুক্তি চমকে দেবে
ট্রেনের বাথরুম থেকে লোহার কল এবং মগও নাকি চুরি গিয়েছে অগুনতি। তবে এই সমস্ত জিনিস চুরি হলেও, ভারতে চলা ট্রেনগুলিতে এমন একটি জিনিস রয়েছে, যা কিনা কোনওভাবেই খোয়া যাওয়া সম্ভব নয়।
ভারতীয় রেলে কোনওদিন সফর করেননি, এরকম মানুষ হয়তো একেবারেই বিরল। ভারতের প্রতিটি গ্রামের সঙ্গে শহরের যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা হলো এই ট্রেন। পাশাপাশি শহরের মধ্যেও যে কোনও জায়গায় খুব সহজে পৌঁছনোর জন্য ভারতীয় রেলের জুড়ি মেলা ভার। মুম্বই, কলকাতা, হায়দরাবাদ বা দিল্লির মতো শহরেও লোকাল ট্রেন এবং এক্সপ্রেস ট্রেনের ব্যবহার প্রচুর। আর একইসঙ্গে ট্রেনে জিনিসপত্র খোয়া যাওয়াও খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয়। শুধু লোকাল ট্রেন নয়, এক্সপ্রেস ট্রেনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরাতেও খুবই সাধারণ এই চুরির ঘটনা।
ভারতীয় রেলওয়ের একটি রিপোর্ট বলছে, গত অর্থবর্ষে দেশজুড়ে দূরপাল্লার ট্রেনগুলি থেকে খোয়া গিয়েছে প্রায় ১ লক্ষ ৯৫ হাজার তোয়ালে, ৮১,৭৩৬টি বেডশীট, ৫৫,৫৭৩টি বালিশের কভার এবং আরও বহু জিনিস। তালিকায় বালিশ এবং কম্বলও রয়েছে। রেলের তৈরি করা রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, গত অর্থবর্ষে রেলের এসি-টু আর থ্রি টায়ারের কামরা থেকেই খোয়া গিয়েছে প্রায় ৫,০৩৮টি বালিশ এবং ৭,০৪৩টি কম্বল। আকারে একটু বড় আর ওজনে অনেকটাই ভারী হওয়ার কারণেই সম্ভবত বেশি খোয়া যায়নি এই দু'টি জিনিস। এসব জিনিসের পাশাপাশি ট্রেনের বাথরুম থেকে লোহার কল এবং মগও নাকি চুরি গিয়েছে অগুনতি। তবে এই সমস্ত জিনিস চুরি হলেও, ভারতে চলা ট্রেনগুলিতে এমন একটি জিনিস রয়েছে, যা কিনা কোনওভাবেই খোয়া যাওয়া সম্ভব নয়।
আপনারা হয়তো ভাবছেন, কী এমন জিনিস রয়েছে যেটা ট্রেন থেকে কোনওদিন চুরি হবে না! আসলে সেই জিনিসটা হলো ট্রেনের প্রতিটি কামরায় লাগানো পাখা। ট্রেনে লাগানো পাখা যে এর আগে কোনওদিন চুরি হয়নি, তেমন নয়। এর আগে বহুবার এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে ট্রেনের পাখা খোয়া গিয়েছে এবং এর ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে ভারতীয় রেলকে। কিন্তু এতবার পাখা চুরি যাওয়ার ঘটনার পর বিষয়টির সমাধানের জন্য তৎপর হয় ভারতীয় রেলওয়ে। ট্রেনের পাখায় ব্যবহার করা শুরু হয় একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যার ফলে এখন আর ট্রেনের ভেতর থেকে চুরি যায় না কোনও পাখা। বড় মাপের চোররাও আর চুরি করেন না ট্রেনের কামরায় লাগানো পাখা। কিন্তু কী এমন অত্যাধুনিক টেকনিক ব্যবহার করল ভারতীয় রেল, যা কমিয়ে দিল চোরের উপদ্রব? চলুন, জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিতভাবে।
আরও পড়ুন: ঠিক যেন বিদেশ! ভারতের এই জায়গাগুলি হয়ে উঠতে পারে পুজোর গন্তব্য
বছরকয়েক আগে রেলের একটি বিশেষ সমীক্ষায় উঠে এসেছিল, সেই সময় প্রতি বছর প্রায় এক লক্ষ-র কাছাকাছি পাখা চুরি হওয়ার ঘটনা ঘটত ভারতীয় রেলে। চোরের এই প্রচণ্ড উপদ্রবে রীতিমতো সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল ভারতীয় রেল। সেই সময় তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ভারতীয় রেল নিয়ে আসে একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, যার ব্যবহারে সম্পূর্ণরূপে কমে যায় ট্রেনে পাখা চুরির ঘটনা।
ভারতীয় রেলের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি
এখন যদি আপনারা ট্রেনে সফর করতে যান, তাহলে আপনারা অবশ্যই দেখবেন, আপনার কামরায় বেশ কয়েকটি পাখা সংযুক্ত রয়েছে। পাখা চুরির ঘটনা এখন বলতে গেলে বিরল। কিন্তু, এমন একটা সময় ছিল, যখন ট্রেনে সফর করার সময় ট্রেনের কামরা থেকে পাখা খুলে নিয়ে বাড়ি চলে যেতেন সাধারণ মানুষ। আর বাড়ি গিয়ে ব্যবহারও করতেন সেই পাখা! অন্যদিকে, পরের দিন সেই কামরায় খুঁজে পাওয়া যেত না কোনও পাখা এবং গরমে নাজেহাল হতে হতো যাত্রীদের। অন্যদিকে, কোনও উপায় না দেখে অগত্যা দাম দিয়ে কিনে সেই কামরায় নির্দিষ্ট জায়গায় পুনরায় বসানো হতো নতুন পাখা। এতবার করে পাখা চুরি হওয়ার ঘটনায় ধীরে ধীরে চাপে পড়তে শুরু করে ভারতীয় রেল দফতর। টান পড়তে শুরু করে রেলের অর্থভান্ডারে।
তাই এই বিষয়টির সমাধান করার জন্যই নতুন একটি প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয় ভারতীয় রেলওয়ে। এই নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি পাখা ট্রেনে কামরা ছাড়া আর কোন জায়গাতে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। অর্থাৎ, যদি কেউ মনে করেন যে, ট্রেনের কামরা থেকে পাখা খুলে নিয়ে বাড়িতে ব্যবহার করবেন, সেটা আর কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
বাইরে করা যাবে না ব্যবহার
আপনারা হয়তো সকলেই মনে করেন, ভারতীয় রেলের প্রতিটি কামরায় যে ধরনের পাখা লাগানো থাকে, সেই পাখা আপনার বাড়িতে চলা পাখার মতোই। কিন্তু সেরকমটা একেবারেই নয়। ভারতীয় রেলে যে ধরনের পাখা ব্যবহার করা হয়, তার সঙ্গে বাড়ির পাখার অনেক তফাৎ রয়েছে। বলতে গেলে, এটা এক ধরনের অনন্য প্রযুক্তির পাখা, যা কেবলমাত্র ব্যবহার হতে পারে ট্রেনের সঙ্গে ফিট করা থাকলে তবেই। বাড়িতে সাধারণভাবে এই পাখা ফিট করলে কখনওই সেই পাখা ঘুরবে না।
বাড়িতে সরবরাহ হয় না সেই ক্ষমতার বিদ্যুৎ
সাধারণত আমাদের বাড়িতে দুই ধরনের ইলেকট্রিসিটি ব্যবহার করা হয়। প্রথমটি হলো, অল্টারনেটিং কারেন্ট বা এসি কারেন্ট, এবং দ্বিতীয়টি হলো ডিরেক্ট কারেন্ট বা ডিসি কারেন্ট। বাড়িতে যে এসি বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়, তার সর্বাধিক পাওয়ার হতে পারে ২২০ ভোল্ট পর্যন্ত। অন্যদিকে, যে ডিসি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, তার পাওয়ার হতে পারে কেবল ৫, ১২ ও ২৪ ভোল্ট। তবে, ট্রেনের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর পাখা শুধুমাত্র ঘোরে ১১০ ভোল্ট ডিসি বিদ্যুতের দ্বারাই। বাড়িতে কোনওভাবেই এই নির্দিষ্ট ক্ষমতার ডিসি বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভবপর নয়। বাড়িতে সর্বাধিক ২৪ ভোল্ট পর্যন্ত ডিসি বিদ্যুৎ আসতে পারে, তাও আবার পরিস্থিতি যদি সম্পূর্ণ অনুকূল থাকে, তবেই। তাই বাড়িতে শত প্রচেষ্টাতেও ট্রেনের পাখা চালানো সম্ভব নয়। তাই শুধুমাত্র ট্রেনে সংযুক্ত করা থাকলে তবেই এই পাখা ঘুরবে, নতুবা নয়।
ট্রেনে চুরি করলে হবে ৭ বছরের জেল
আপনারা হয়তো সকলেই জানেন, ট্রেন কিন্তু কোনও বেসরকারি সম্পত্তি নয়, ট্রেন হলো ভারতের এক ধরনের জাতীয় সম্পদ। তাই এই ধরনের জাতীয় সম্পদ চুরি করার অপরাধে যে-কোনও সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধেও করা হয় মামলা। যদি কোনও ব্যক্তি ট্রেনের কোনও জিনিস চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে, তাহলে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৮০ নম্বর ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় রেল পুলিশের পক্ষ থেকে। আর যদি তিনি এই দোষে দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার সর্বাধিক সাজা হতে পারে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং, তার সঙ্গেই একটা মোটা অঙ্কের জরিমানা। সব থেকে বড় কথা হল, ৩৮০ সম্পূর্ণরূপে জামিন-অযোগ্য ধারা। তাই যদি ৩৮০ ধারা অনুযায়ী জাতীয় সম্পদ চুরি করতে গিয়ে কোন ব্যক্তি ধরা পড়ে, এবং আদালতের বিচারে দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে তার জামিনের সম্ভাবনাও অত্যন্ত ক্ষীণ।