ক্যান্সারের গন্ধ কেমন? মানুষের ক্যান্সার শুঁকে বলে দিতে পারে এই প্রাণীরা!

Ants Can Smell Cancer : কুকুরকেও মেলানোমা, স্তন এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সার, ম্যালেরিয়া এবং পারকিনসন সহ বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের গন্ধ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।

মিষ্টি দেখলেই সার দিয়ে যুদ্ধে চলেছে পিঁপড়েরা? রান্নাঘর, বিছানা সর্বত্র চষে বেড়াচ্ছে ক্ষুদ্রতম এক প্রাণীর গুষ্টি? মাঝে সাঝে কামড়ও খাচ্ছেন, ব্রহ্মতালু জ্বলে যাচ্ছে এই দাবদাহের মধ্যে? এর পরের বার যখন আপনি পিঁপড়েদের হানা নিয়ে বিরক্ত হবেন, মনে রাখবেন এই পিঁপড়ের মধ্যে এমন একটি গুণ রয়েছে যা আখেরে আপনার জীবনকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারে! ক্ষুদ্র তবু তুচ্ছ নই কথাখানি একেবারে অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছে পিঁপড়ের ক্ষেত্রে। এই ক্ষুদ্র প্রাণীরা ক্যান্সারের মতো অসুস্থতা শনাক্ত করতে পারে। আসলে পিঁপড়েগুলি এমন অনেক প্রাণীর মধ্যে অন্যতম যার ইন্দ্রিয় মানুষের রোগের লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে। কুকুর, ইঁদুর, মৌমাছি, এমনকী ছোট কৃমিও মানুষের রোগ শনাক্ত করতে পারে।

রেশমি পিঁপড়ে, বিজ্ঞানসম্মত নাম ফরমিকা ফুসকা, ইউরোপ জুড়ে পাওয়া পিঁপড়ের একটি সাধারণ প্রজাতি। এই পিঁপড়ে ক্যান্সারের গন্ধ চিনতে পারে! এ আবার কেমন হলো? রোগের গন্ধ? রোগের কি কোনও গন্ধ হতে পারে, তাও আবার ক্যান্সারের মতো মারণরোগের? মানুষের প্রস্রাবে স্তন ক্যান্সারের গন্ধ সনাক্ত করতে পারে এই পিঁপড়েরা।

ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি সোরবোন প্যারিস নর্ডের একটি গবেষণা প্রসিডিংস অব দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি-তে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণাতে দেখা গিয়েছে যে, পিঁপড়েরা মানুষের স্তন ক্যান্সারের টিউমার বহনকারী ইঁদুর আর সুস্থ ইঁদুরের থেকে প্রাপ্ত প্রস্রাবের গন্ধের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখতে পারে।

আরও পড়ুন- কোনও দিনও আবিষ্কার হবে না ক্যান্সারের চিকিৎসা! ভয়াবহ যে তথ্য কাঁপিয়ে দিল বিশ্বকে

পিঁপড়ে এবং অন্যান্য প্রাণীরা বিভিন্ন উদ্বায়ী জৈব যৌগ, বা VOCs উপলব্ধি করে রোগের লক্ষণগুলি চিনতে পারে। এই রাসায়নিকগুলি বিভিন্ন উপায়ে উত্পাদিত হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে, ঘাম, প্রস্রাব এবং রক্তে পাওয়া যায়। আমাদের দেহ থেকে যে উদ্বায়ী জৈব যৌগ বেরোয়, আমাদের রোগের কারণে তা পরিবর্তিত হতে পারে, যার ফলে একটি ভিন্ন গন্ধ বের হয়। ক্যান্সারের নমুনার কাছে একখণ্ড চিনি রেখে দেওয়ার পরে দেখা গেছে পিঁপড়েরা সেই রোগের ঘ্রাণটি খুঁজে বের করতে শিখেছে। এই প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় অপারেন্ট কন্ডিশনিং।

“আমরা পিঁপড়ের দ্রুতগতিতে অবাক হয়েছিলাম। মাত্র দশ মিনিটের মধ্যে একটি পিঁপড়েকে রোগ শনাক্ত করতে প্রশিক্ষিত করা যেতে পারে,” বলেছেন গবেষণার প্রধান লেখক ব্যাপটিস্ট পিকরেট৷ বিজ্ঞানীরা প্রথমে পিঁপড়েদের প্রশিক্ষিত করেন, তারপরে তারা টিউমার আছে এমন এবং সুস্থ ইঁদুরের প্রস্রাবের নমুনা সহ একটি পাত্রে রেখেছিলেন। দেখা যায় ক্যান্সারের নমুনাগুলির সঙ্গে ২০ শতাংশ বেশি সময় কাটিয়েছে পিঁপড়েরা।

পিঁপড়েরা রাসায়নিকের গন্ধ পায় যা তাদের অ্যান্টেনায় অলফ্যাক্টরি রিসেপ্টর দিয়ে গন্ধ তৈরি করে। ইউনিভার্সিটি সোরবোন প্যারিস নর্ডের নৃতাত্ত্বিক অধ্যয়নের সহ-লেখক প্যাট্রিজিয়া ডি'এটোরে বলেছেন, গন্ধই পিঁপড়েদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। পিঁপড়েরা তাদের শরীরের গন্ধ শনাক্ত করেই দলের সদস্যদের চিনতে পারে। পিঁপড়েরা ফেরোমোন ব্যবহার করে যোগাযোগের জটিল সংকেতও বুঝতে পারে।

আরও পড়ুন- বিশ্বে মোট কত পিঁপড়ে আছে? এই প্রথম নির্দিষ্ট করে জানালেন বিজ্ঞানীরা

এই পিঁপড়েরা অবশ্য কামড়ায় না এবং সহজেই পাওয়া, এই পিঁপড়েদের যত্নআত্তি করাও এমন কিছু কঠিন না। মধু এবং মৃত পোকামাকড় পেলেই পিঁপড়েরা খুশি। তাই ক্যান্সারের গন্ধ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পিঁপড়েদের ব্যবহার এক দুর্দান্ত বিষয়। পিঁপড়েরা ক্যান্সারের কোশের ঠিক কোন রাসায়নিকের গন্ধ পাচ্ছে তা অবশ্য গবেষকদের অজানা।

কুকুরকেও মেলানোমা, স্তন এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যান্সার, ম্যালেরিয়া এবং পারকিনসন রোগ সহ মানুষের কিছু সংক্রামক রোগ আর বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের গন্ধ নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। তারা অন্য প্রাণীদের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রামক রোগের গন্ধও শুঁকতে পারে। এই ধরনের একটি রোগ হরিণের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে এবং প্রাণঘাতী হতে পারে। কুকুরকে হরিণের মল থেকে রোগ শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষিত করা যেতে পারে। গবেষকরা মনে করেন, কুকুররা সংক্রামক পদার্থের গন্ধ পেয়ে থাকতে পারে।

মৌমাছির চেয়েও ছোট নিমাটোড ক্যানোরহ্যাবডিটিস এলিগানস, কৃমির মতো এই প্রাণী বালির দানার আকারের হয় এবং সাধারণত গবেষণায় ব্যবহৃত হয়। এই জীবের ক্যান্সার শনাক্ত করার ক্ষমতা রয়েছে। জাপানের এক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার কোশ সনাক্ত করতে পারে এবং ইতালিয় এক গবেষণা বলছে, এটি স্তন ক্যান্সারের কোশগুলিও শনাক্ত করতে পারে।

More Articles