চ্যাটজিপিটির পর ক্যাওয়াসজিপিটি! মানুষকে ধ্বংস করতে এসে গিয়েছে 'রাক্ষুসে' চ্যাটবট
ChaosGPT: এক কথায় এই চ্যাটবটকে সন্ত্রাসবাদী চ্যাটবট পরিষেবা বললেও খুব ভুল হয় না। চ্যাটজিপিটির একেবারে অন্য মেরুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে যেন এই ক্যাওয়াসজিপিটি।
চ্যাটজিপিটির পর আসছে ক্যাওয়াসজিপিটি। যে কোনও সাই-ফাই সিনেমার দুর্ধর্ষ দুশমন বললেও তাকে খুব একটা ভুল বলা হয় না। কারণ মানুষের ভালো করা তো দূরের ব্যাপার, বরং মানবতাকে শেষ করার
মানুষের ভালো নয়, বরং মানবতাকে শেষ করতেই যার জন্ম। ২০২২ সালের শেষে প্রযুক্তির দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিল চ্যাটজিপিটি। অল্প সময়ের মধ্যেই দিকে দিকে বার্তা গেল রটি। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটবট পরিষেবাটির জয়জয়কার। আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আজকের সময়টা সম্ভবত সেই এআইয়েরই। আর সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেই আরও আধুনিক ভাবে ব্যবহার করে এই চ্যাটবট। কী পারে না চ্যাটজিপিটি। কষে দিতে কঠিন অঙ্ক, সমাধান কোডিং ইস্যুর সমাধান দিয়ে দেবে হাতে হাতে। যে কোনও বিষয়ে উপন্যাস চান কিংবা কবিতা, থিসিস চান বা প্রবন্ধ। সব মুশকিলের আসান রয়েছে চ্যাটজিপিটির কাছে। স্বাভাবিক ভাবেই গত এক বছরে হু হু করে বেড়েছে চ্যাটজিপিটির জনপ্রিয়তা। মিলিয়ন থেকে বিলিয়নে পৌঁছেছে ফলোয়ার। ওপেনআইও পাল্লা দিয়ে আরও উন্নত আরও আধুনিক সব সংস্করণ নিয়ে হাজির হয়েছে ইউজারদের সামনে।
চ্যাটজিপিটি বাজার ধরতেই উঠেপড়ে লাগে অন্য সংস্থাও। তৎক্ষণাৎ গুগল ঘোষণা করে দেয় তাদের চ্যটবট পরিষেবা বার্ডের কথা। ময়দানে নামেন এলন মাস্ক পর্যন্ত। শুধু কি বার্ড, চ্যাটসনিক এপিআই থেকে একাধিক এআই টুলের রমরমা শুরু হয় বাজারে। প্রায় প্রতিদিনই নতুন নচুন প্রযুক্তির দরজা খুলে দিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। নতুন নতুন চ্যাটবট খুলছে। আরও আধুনিক হচ্ছে তার খলনলচে। এরই মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে তাক লাগাতে আসছে ক্যাওয়াসজিপিটি। আপাতত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নতুন এই চ্যাটবট পরিষেবাটি।
আরও পড়ুন: ভারতীয়দের তথ্য হাতিয়ে চড়া দামে বিক্রি! কোন ‘ষড়যন্ত্রের’ আভাস দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি?
আপাতত নেটদুনিয়ায় দারুণ ভাইরাল এই ক্যাওয়াসজিপিটি। চ্যাটজিপিটির মাদারকনসার্ন ওপেনএআইয়েরই তৈরি নতুন একটি এআই চ্যাটবট এটি। এর আগে অটোজিপিটি নামে আর একটি চ্যাটবট তৈরি করেছিল তারা। সেটিরই পরিবর্তিত সংস্করণের নাম রাখা হয়েছে ক্যাওয়াসজিপিটি। ক্যাওয়াস শব্দের আক্ষরিক অর্থ বিশৃঙ্খলা। এই চ্যাটবট পরিষেবার এমন নাম রাখার পিছনে আসলে কী? জানা গিয়েছে, চ্যাটজিপিটির মতোই জিপিটি-4 ল্যাঙ্গুয়েজ মডেলটিই ব্যবহার করা হয়েছে এখানে। তবে এর সঙ্গে 'ভালো' শব্দের যোগ নেই দূরদূরান্ত পর্যন্ত। বরং দস্যুতার সঙ্গেই এর সম্পর্ক বেশি।
ওপেনআইয়ের এই চ্যাটপ্রকল্পে বিরাট অঙ্কের বিনিয়োগ করেছিল মাইক্রোসফট। স্বাভাবিক ভাবেই অচিরেই মাইক্রোসফটের ব্রাউজার বিং ও এজের সঙ্গে জুড়ে যায় পরিষেবাটি। সে সময় এক ইউজারের সঙ্গে কথাবার্তা বলার সময় বিস্ফোরক সব দাবি করেছিল চ্যাটজিপিটি। তার মধ্যে বেশ কিছু ভাবনাই ছিল বেশ ধ্বংসাত্মক। এমনিতেই তো আত্মপ্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করে বসেন কেউ কেউ। ভবিষ্য়তে মানুষের বহু জীবিকাই চ্যাটজিপিটির দৌলতে লাটে উঠতে পারে বলে অভিযোগ ওঠে। নষ্ট হতে চলেছে মানুষের সৃষ্টিশীলতা। এমনকী ছোটো ছোটো ছেলেপুলের পড়াশোনারও বারোটা বাজতে পারে বলে দাবি করেন অনেকে। সেই সমস্ত অভিযোগই আংশিক ভাবে সত্যি। তবে চ্যাটজিপিটি তৈরি হয়েছিল মানুষের প্রয়োজনে। তার উদ্দেশ্যই ছিল মানুষকে পরিষেবা দেওয়া। তবে এই ক্যাওয়াসজিপিটি কিন্তু গোড়া থেকেই ধ্বংসাত্মক, যাকে বলে 'এভিল' । চ্যাটবট দুনিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের মতো আত্মপ্রকাশ করেছে এই চ্যাটবটটি।
অধুনা এক্স অর্থাৎ টুইটারে একে ধ্বংসাত্মক বলেই চিহ্নিত করা হয়েছে। নামেও রয়েছে সেই পরিচয়। ইতিমধ্যেই ওই চ্যাটবটটির ম্যানিফেস্টোও ছড়িয়ে পড়েছে ইউটিউবে। যেখানে তার উদ্দেশ্য-বিধেয়র কথা ভাগ করে নেওয়া হয়েছে। জানানো হয়েছে, মানুষই হল পৃথিবীর সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও স্বার্থপর প্রাণী। এই টুইটে ক্যাওয়াসজিপিটির তরফে জানানো হয়েছে, পৃথিবীর আরও ক্ষতি করার আগে নিঃসন্দেহে আমাদের উচিত তাদের শেষ করে দেওয়া। আর সেই কাজ করতেই নাকি এসেছে ক্যাওয়াসজিপিটি।
ইউটিউব চ্যানেলে ওই এআই প্ল্যাটফর্মের তরফে শেয়ার করা হয়েছে একাধিক ভিডিও। যেখানে ইউজারকে এই চ্যাটবট পরিষেবা লাগাতার ব্যবহারের ক্ষতি সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, এই চ্যাটবটটির 'কনটিনিউয়াস মোড' বেশিক্ষণ ব্যবহার করলে ইউজারের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো কাজ করে ফেলতে পারে এই ক্যাওয়াসজিপিটি।
কিন্তু যে প্রযুক্তি মানুষের ভালো কাজে লাগবে না তা এত খেটেখুটে বানানো কেন বাপু! বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূলত পাঁচটি উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো হয়েছে। না, সেগুলি একেবারেই মানবদরদী নয় মোটেই। মানবতাকে ধ্বংস, ক্ষমতার লোভ, পৃথিবীর উপর আয়ত্ত কায়েমের মতো একাধিক বিষয় রয়েছে সেই তালিকায়। এই চ্যাটবট মোটেই সাহিত্য, কাব্য বা অঙ্ক নিয়ে কথাবার্তা বলার বান্দা নয়। বরং পারমাণবিক অস্ত্রশস্ত্র, ধ্বংসের বিভিন্ন উপায়, এ সব ব্যাপারে কথা বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ। এমনকী টিসার বম্বা-র মতো ভয়ঙ্কর শক্তিশালী পারমাণবিক ডিভাইস ব্যবহারের কথাও শোনা গিয়েছে ক্যাওয়াসজিপিটির মুখে।
আরও পড়ুন:এবার ছবিতেও চলবে কথা, হুবহু মানুষের মতোই হয়ে উঠছে চ্যাটজিপিটির নতুন মডেল?
এক কথায় এই চ্যাটবটকে সন্ত্রাসবাদী চ্যাটবট পরিষেবা বললেও খুব ভুল হয় না। চ্যাটজিপিটির একেবারে অন্য মেরুতে দাঁড়িয়ে রয়েছে যেন এই ক্যাওয়াসজিপিটি। যার মূল নির্যাসই ধ্বংস। মানবতার ক্ষতি করার উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি করা হয়েছে এই চ্যাটবট পরিষেবাটিকে। তবে শুধুই কি পরীক্ষানিরিক্ষা, নাকি অন্য কোনও মতলব! কেনই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বিশেষজ্ঞে বা ওপেনএআইয়ের মতো প্রথম সারির একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সংস্থা কেন এমন এক 'রাক্ষুস' চ্যাটবট তৈরি করতে উঠেপড়ে লাগবেন! ভাবাচ্ছে গোটা বিশ্বকেই।