এবার ছবিতেও চলবে কথা, হুবহু মানুষের মতোই হয়ে উঠছে চ্যাটজিপিটির নতুন মডেল?

ChatGPT 4 New Version AI : চ্যাটজিপিটির এতদিনকার মডেলগুলোর থেকে আরও উন্নত, আরও কার্যকর এটি, এমনটাই দাবি ওই সংস্থার।

গোটা বিশ্বের প্রযুক্তি দুনিয়ার অন্দরে কান পাতলেই মূলত দুটি ঘটনার ব্যাপারে শোনা যাচ্ছে। প্রথমত, ব্যাপক হারে আইটি-কর্পোরেট জগতে কর্মীছাঁটাই। এবং দ্বিতীয়ত, চ্যাটজিপিটির (ChatGPT) কামাল। আদতে একটি এআই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রযুক্তির মধ্যে ছড়িয়ে আছে। পকেটের ছোট্ট মোবাইল থেকে কম্পিউটার, সিরি থেকে অ্যালেক্সা – প্রত্যেকেই নতুন প্রযুক্তির হাত ধরে বাজার মাত করেছে। কিন্তু চ্যাটজিপিটি সেই পুরো পৃথিবীটাই বদলে দিচ্ছে। তাকে কিছু বললে, সে নিজে নিজেই সমস্তটা করে ফেলছে। আইনি কাগজ তৈরি থেকে অফিসের মেইল, কপিরাইটিং – সমস্ত কাজটাই বহাল তবিয়তে করে ফেলছে চ্যাটজিপিটি। এক্কেবারে মানুষের মতোই!

২০২২-এর নভেম্বর নাগাদ চ্যাটজিপিটি-কে বাজারে আনে ওপেনএআই নামের একটি মার্কিন সংস্থা। তারপর কেটে গিয়েছে বেশকিছু মাস। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বেড়েছে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির। অনেক জটিলতা, সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও, চ্যাটজিপিটি গোটা প্রযুক্তির বাজারের ভাবনাচিন্তা বদলে দিচ্ছে। যার ফল দেখা গিয়েছে মাইক্রোসফট, গুগলের নতুন চ্যাটবট তৈরির উদ্যোগে। এরইমধ্যে ফের একবার ঝড় তুলল চ্যাটজিপিটি। সম্প্রতি এর নতুন মডেল বাজারে নিয়ে এল ওপেনএআই। নাম ‘চ্যাটজিপিটি ৪’ (ChatGPT-4)। চ্যাটজিপিটির এতদিনকার মডেলগুলোর থেকে আরও উন্নত, আরও কার্যকর এটি, এমনটাই দাবি ওই সংস্থার।

আরও পড়ুন : জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ, মানুষের দৈনন্দিন যে কাজগুলোর সঙ্গী হতে চলেছে ChatGPT

তবে নতুন এই প্রযুক্তির দিকে আসার আগে তার আগের মডেলগুলির সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া যাক। এতদিন বাজারে চ্যাটজিপিটির দুটি মডেল ছিল। একটি চ্যাটজিপিটি ৩ (ChatGPT-3), যেটি সবাই ব্যবহার করতে পারবে। আরেকটি চ্যাটজিপিটি ৩.৫ (ChatGPT-3.5), যা প্লাস সাবস্ক্রাইবাররা ব্যবহার করতে পারতেন। নতুন এই চ্যাটজিপিটি ৪ মডেলটিও আপাতত ওপেনএআইয়ের প্লাস সাবস্ক্রাইবারদের জন্য। তবে বেশকিছু জায়গায় রদবদল হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলের দাবি, এই বদলই চ্যাটজিপিটি-কে আরও ‘মানুষের মতো’ হতে সাহায্য করেছে।

কী সেই বদল? কী রয়েছে নতুন এই চ্যাটজিপিটিতে?

প্রথমত, চ্যাটজিপিটি ৪ একটি লার্জ মাল্টিমোডাল মডেল (Multimodal Model)। এর মানে কী? সহজভাবে বললে, এর আগে চ্যাটজিপিটি কেবল শব্দে জবাব দিত, মানে কেবলমাত্র টেক্সট কনটেন্ট উপলব্ধ ছিল। ইনপুট ও আউটপুট দুই জায়গাতেই ছিল টেক্সট। এবার নতুন এই মডেলে কেবল শব্দ নয়, ছবিকেও কাজে লাগাবে চ্যাটজিপিটি। মানে, ছবিকেও ইনপুট হিসেবে কাজে লাগাবে নতুন চ্যাটজিপিটি। আউটপুট হিসেবেও ছবি, লেখা দুটিকেই ব্যবহার করবে এটি। ফলে আরও বেশি কাজের হয়ে উঠেছে এটি।

দ্বিতীয়ত, চ্যাটজিপিটির আগের মডেল (৩.৫) মাত্র ৩০০০ শব্দে উত্তর দিতে পারত। তবে চ্যাটজিপিটি ৪-এর ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটি অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। ২৫ হাজারেরও বেশি শব্দে এই অত্যাধুনিক এআই নিজের জবাব দিতে পারবে। সেইসঙ্গে ব্যবহারকারীর কথামতো আরও নিখুঁত কাজ যাতে করতে পারে, তার জন্য প্রোগ্রামকে আরও ভালোভাবে তৈরি করা হয়েছে। তাই কাজও আগের থেকে নিখুঁত করতে পারবে বলে দাবি ওপেনএআইয়ের। আমেরিকার বার এক্সামিনেশন ও গ্র্যাজুয়েট রেকর্ডের মতো কঠিন পরীক্ষাগুলিতেও পাশ করে গিয়েছে চ্যাটজিপিটি ৪।

আরও পড়ুন : সুতোয় ঝুলছে চাকরি, ChatGPT-এআইয়ের ধাক্কায় কাজ হারিয়ে পথে বসতে পারেন আপনিও!

তবে এর পাশাপাশি আরও একটি নতুন জিনিস এনেছে ওপেনএআই। এর আগে চ্যাটজিপিটি ব্যবহারকারীর নির্দেশমতো কাজ করত, নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিত। এবার কেবল প্রশ্নের উত্তর দেওয়াই নয়, চ্যাটজিপিটি ৪ নিজেও প্রশ্ন করতে পারবে। কীরকম? মনে করুন কোনও বিতর্কসভা। সেখানে আপনি যুক্তি সাজিয়ে কথা বলছেন, আর বিপক্ষের দিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন। বিপক্ষও তাঁর যুক্তি সাজিয়ে আপনাকে ফের প্রশ্ন করতে পারে। চ্যাটজিপিটি ৪-এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি তাই। এবার কেবল উত্তর দিয়েই ক্ষান্ত হবে না এই প্রযুক্তি, প্রশ্নের বদলে প্রশ্নও করতে পারে এটি। শুধু তাই নয়, খুব শীঘ্রই এমন ব্যবস্থা আসতে চলেছে, যেখানে কথা বলার সময় মন বুঝে নিজের টোন, উত্তর দেওয়ার ধরনও আপনাআপনি বদলে ফেলতে পারবে চ্যাটজিপিটি। সবদিক থেকে মানুষের সমতুল্য করার চেষ্টা চলছে, সেটা বলাই বাহুল্য।

কিন্তু...

এখনও এই প্রযুক্তির বাধ্যবাধকতা আছে। সেগুলো ঠিক আগের মতোই। হাজার হোক, চ্যাটজিপিটি একটি এআই বেসড রোবট, সে কখনও মানুষের মতো ভাবতে পারবে না। ‘মানবিক চিন্তা’র স্পর্শ তার কথায় পাওয়া যাবে না। এদিকে এমন অনেক কাজ আছে, যা মানুষই করতে পারবে। সেইসঙ্গে রয়েছে ভাষার সমস্যা। চ্যাটজিপিটি এখনও অবধি ইংরেজিতেই অপারেট করতে পারে। অথচ পৃথিবীতে আরও অজস্র ভাষা রয়েছে। এছাড়াও, চ্যাটজিপিটির কোনও একটি লেখা আদৌ কতটা ত্রুটিমুক্ত, সেটা বলা খুব কঠিন। বিশেষ করে, কপিরাইটের ক্ষেত্রে, টুকে লেখা বা তথ্য না পেলে বানিয়ে লেখার প্রবণতা এর আগেও দেখা গিয়েছে এই প্রযুক্তিতে। তবে তার থেকেও বড় প্রশ্ন, মানুষকে সরিয়ে যন্ত্র আর প্রযুক্তিই কি জায়গা করে নেবে ভবিষ্যতে? আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে গোটা প্রযুক্তি দুনিয়া।

More Articles