ঘুম ভেঙেই চোখ লাল! কনজাংটিভাইটিস কি সত্যিই ছোঁয়াচে?

Conjunctivitis Symptoms: মূলত দুই ধরনের সংক্রমণ হতে পারে চোখে। ব্যাকটেরিয়া এবং/অথবা ভাইরাসের।

ঘুম থেকে উঠে চোখ মেলে আর পৃথিবীকে কীভাবেই বা দেখবেন? চোখ খুলতেই ব্যাথা, চোখ ফোলা, লাল হয়ে ফুলে গিয়েছে! চিরপরিচিত কনজাংটিভাইটিস। ইংরেজিতে নাম 'পিঙ্ক আই'। আসলে কনজাংটিভাইটিস হচ্ছে চোখের কনজাংটিভার সংক্রমণ বা ফোলাভাব। কনজাংটিভা কী? কনজাংটিভা হচ্ছে একটি পাতলা, স্বচ্ছ ঝিল্লি যা চোখের পাতার ভিতরের পৃষ্ঠের উপর থাকে এবং আমাদের চোখের সাদা অংশকে ঢেকে রাখে। কনজাংটিভাইটিস বা এই সংক্রমণ হলে কনজাংটিভার রক্তনালীগুলি স্ফীত হয়ে যায়। চোখকে লাল বা গোলাপি হয়ে যায়। তবে কনজাংটিভার বেশ কিছু ধরন রয়েছে। প্রতিটি ধরন অনুযায়ী এর চিকিৎসা আলাদা।

কনজাংটিভাইটিসের লক্ষণ

চোখ লাল বা গোলাপি হয়ে যাওয়া
সারাক্ষণ চোখে খচখচে ভাব
চোখ থেকে জল বেরনো বা ঘন কোনও স্রাব বেরনো যা রাতে চোখের উপর তৈরি হচ্ছে
চোখে চুলকানি
অস্বাভাবিক পরিমাণ জল বেরনো

কনজাংটিভাইটিসের প্রকার এবং কারণ

সাধারণত, কনজাংটিভাইটিস তিন প্রকার:

সংক্রামক
অ্যালার্জিক
রাসায়নিক

আরও পড়ুন- বিপদের নাম ‘লেজি আই’, সন্তানের দৃষ্টিশক্তি বাঁচাতে কী করবেন

সংক্রামক কনজাংটিভাইটিস

মূলত দুই ধরনের সংক্রমণ হতে পারে চোখে। ব্যাকটেরিয়া এবং/অথবা ভাইরাসের। ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিসে চোখে স্ট্যাফাইলোককাল বা স্ট্রেপ্টোকোকাল ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। সাধারণত অপরিষ্কার হাত দিয়ে চোখ স্পর্শ করা, নিজের প্রসাধনী অন্যকে দেওয়া বা অন্যের প্রসাধনী ব্যবহার করা, বা কনজাংটিভাইটিস হয়েছে বা হতে পারে এমন কারও সঙ্গে শারীরিক যোগাযোগের কারণে ঘটে।

ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস সাধারণত সাধারণ ঠান্ডা লেগে হয়, কোল্ড ভাইরাসের আক্রমণে। যদি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত কেউ আপনার কাছাকাছি কাশে বা হাঁচে সেই ছোঁয়াচে ভাইরাসের সংক্রমণে এমন ঘটতে পারে। এমনও হতে পারে আপনি নিজে কোল্ড ভাইরাসে আক্রান্ত এবং নাক দিয়ে জল বেরোচ্ছে অবিরাম, কারণ শ্বাসযন্ত্র থেকেই চোখে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে যায়।

অ্যালার্জিক কনজাংটিভাইটিস

এই কনজাংটিভাইটিসে আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই অ্যালার্জির প্রবণতা থাকে। তারা যদি এমন কোনও পদার্থের সংস্পর্শে আসেন যা থেকে তাদের অ্যালার্জি হয়, যেমন ফুলের পরাগ, তাহলে কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। যদি শক্ত কন্ট্যাক্ট লেন্স বা নরম কন্ট্যাক্ট লেন্স পরেন যেগুলি ঘন ঘন খুলে রাখা হয় না তাহলে জায়ান্ট প্যাপিলারি কনজাংটিভাইটিস নামক অ্যালার্জিও হতে পারে।

রাসায়নিক কনজাংটিভাইটিস

সুইমিং পুলের মধ্যে ক্লোরিন, বায়ু দূষণ, অন্যান্য রাসায়নিকের সংস্পর্শে এলে এই কনজাংটিভাইটিস হতে পারে।

কনজাংটিভাইটিস কতটা সংক্রামক?

ব্যাকটেরিয়াল এবং ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস খুবই সংক্রামক। এটি সহজেই এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস হয়েছে এমন কেউ যদি নিজেদের চোখ স্পর্শ করেন এবং তারপরে আপনার হাত ধরেন এবং তারপর আপনি আপনার চোখে হাত দেন তাহলে আপনারও কনজাংটিভাইটিস হতে পারে। কনজাংটিভাইটিস তখনই সংক্রামক হয় যখন উপসর্গ দেখা দেয়।

আরও পড়ুন- দু’চোখের পাতা এক করলেই বিপদ! কখনওই নিশ্চিন্তে ঘুমায় না যেসব প্রাণী

কনজাংটিভাইটিসের চিকিত্সা

কনজাংটিভাইটিসের চিকিত্সা নির্ভর করে এটি কী কারণে ঘটছে তার উপর।

রাসায়নিক কনজাংটিভাইটিস

যদি রাসায়নিক কারণে চোখে কনজাংটিভাইটিস হয় তাহলে স্যালাইন দিয়ে চোখ ধুয়ে ফেলা হয় তাতে উপসর্গগুলি কমে। যথেষ্ট গুরুতর সংক্রমণ হলে স্টেরয়েডও নিতে হতে পারে।

ব্যাকটেরিয়াল কনজাংটিভাইটিস

ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকই সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। প্রাপ্তবয়স্কদের সাধারণত চোখের ড্রপ দেওয়া হয়। শিশুদের জন্য মলম ব্যবহার করাই ভালো। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ উপসর্গগুলি কয়েক দিনের মধ্যেই একেবারে কমিয়ে দেয়।

ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস

বেশিরভাগ ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস ওই একই ভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট হয় যা সাধারণ সর্দি কাশির জন্ম দেয়। এই কোল্ড ভাইরাসগুলির তেমন কোনও চিকিৎসা নেই। তবে এর উপসর্গগুলি সাধারণত হালকা হয় এবং ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনিই সেরে যায়।

বিরল ক্ষেত্রে, অন্যান্য ভাইরাস যেমন হারপিস সিমপ্লেক্স বা ভেরিসেলা-জোস্টার ভাইরাসে কনজাংটিভাইটিস হতে পারে যা আরও গুরুতর সংক্রমণের কারণ হতে পারে। এই ভাইরাসগুলির অ্যান্টিভাইরাল চিকিত্সা রয়েছে।

More Articles