ত্রাসের নাম COPD! সামান্য ভুলেই কীভাবে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারে আপনার?

COPD Management: সিওপিডির এই লক্ষণ সাময়িক ক্ষতির চেয়েও বেশি সুদূরপ্রসারী ফল ডেকে আনে যার জন্য রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে

সিওপিডি। কবে যেন ঘরে ঘরে সাধারণ অসুখ হয়ে উঠল এই জটিল রোগ। শীত এলেই স্ত্রস্ত ভুক্তভোগীরা, শুধু শীতই বা কেন! বিভিন্ন সময়েই জটিল বিড়ম্বনার কারণ হয়ে অঠে ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি। ফুসফুসের এই রোগ ধীরে ধীরে ফুসফুসের কার্যকারিতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। ফলে রোগীর জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মানকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে সিওপিডি। COPD-র সবচেয়ে বড় সমস্যার দিকটি হলো এর দীর্ঘস্থায়ী উপসর্গগুলি। কাশি, শ্বাসকষ্ট এবং পিউরুলেন্ট স্পুটামের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। COPD-এর তীব্রতা শুধুমাত্র সেই মুহূর্তে বা কিছুকালের জন্য স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে তাই না, দীর্ঘমেয়াদি পরিণতিও ডেকে আনে। হঠাৎ করে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পেতে পারে এবং মৃত্যুর ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। COPD মানেই কি তবে মৃত্যু?

সিওপিডি বুঝবেন কীভাবে?

সিওপিডির তীব্রতা বাড়তে থাকলে রোগীর উপসর্গগুলি তাদের স্বাভাবিক দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ভয়ঙ্করভাবে প্রভাবিত করে। এই পর্বে প্রায়ই তীব্র শ্বাসকষ্ট, কাশি, শ্বাসের সমস্যা এবং শ্লেষ্মা বা পিউরুলেন্ট স্পুটামের উত্পাদনের বৃদ্ধি ঘটে। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, পরিবেশে ছড়িয়ে থাকা নানা দূষক পদার্থের সংস্পর্শে আসা, নির্ধারিত ওষুধ নিয়ম মেনে না খাওয়া- বিভিন্ন কারণেই এই তীব্রতা বাড়তে পারে।

সিওপিডি-র চক্র

সিওপিডির তীব্রতা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সিওপিডি ফুসফুসের যা ক্ষতি করে তা যা পরবর্তীকালে আরও ভীষণভাবে বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকেই। এই ক্রমশ বাড়তে থাকা জটিলতাগুলি এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যই বিশেষভাবে ক্ষতিকর।

ফুসফুসের কার্যকারিতা দ্রুত হ্রাস

COPD সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস করে। কিছুক্ষেত্রে দেখা যায় এই কার্যকারিতা হ্রাস এত দ্রুত ঘটে যার ফলে ফুসফুস একেবারেই অকেজো হয়ে যায়। যত ঘন ঘন এই ঘটনা ঘটবে এবং যত এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে রোগীর শ্বাস নেওয়ার এবং দৈনন্দিন কাজকর্মে যুক্ত হওয়ার ক্ষমতার উপর তত বেশি প্রভাব পড়বে।

আরও পড়ুন- ফুসফুসের ক্যানসার নির্মূল করবে রোবট! যুগান্তকারী আবিষ্কারের পথে বিজ্ঞানীরা

সিওপিডি কেন মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়?

সিওপিডি-র এই তীব্রতা বৃদ্ধির সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হচ্ছে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ানো। গবেষণায় দেখা গেছে, ঘন ঘন এবং গুরুতর তীব্রতা বৃদ্ধি সিওপিডি রোগীদের মৃত্যুর হারকে অত্যন্ত বাড়িয়ে তোলে। শ্বাসকষ্ট এবং শরীরে চাপ বৃদ্ধির সময় জীবন নিয়ে টানাটানিও হতে পারে, বিশেষ করে যাদের অন্তর্নিহিত আরও কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে তাদের জন্য সিওপিডি মৃত্যুরই ডাকনাম।

কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন?

রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং জটিলতার ঝুঁকি কমাতে COPD-র তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করা অপরিহার্য। চিকিৎসকরা প্রায়ই উপসর্গগুলির উপশম করতে এবং অন্তর্নিহিত সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য ব্রঙ্কোডাইলেটর, কর্টিকোস্টেরয়েড এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধই দিয়ে থাকেন। তবে এর পাশাপাশিই রোগীদের একটি 'অ্যাকশন প্ল্যান' তৈরি করতেও বলা হয়। যাতে যখন কোনও রকমের বৃদ্ধি টের পাওয়া যায় বা তীব্রতা অনুভব করা যায় তখনই সঙ্গে সঙ্গে প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সিওপিডি মোকাবিলার খুব সাধারণ বিষয়গুলির মধ্যেই আছে নির্ধারিত ওষুধগুলি মেনে চলা, ফ্লু এবং নিউমোনিয়ার মতো শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের টিকা নেওয়া এবং ধূমপান আর পরিবেশের নানা দূষণকারী পদার্থগুলি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা।

সিওপিডির তীব্রতাকে কোনওভাবেই অবহেলা করা চলবে না। মনে রাখতে হবে সিওপিডির এই লক্ষণ সাময়িক ক্ষতির চেয়েও বেশি সুদূরপ্রসারী ফল ডেকে আনে যার জন্য রোগীর ফুসফুসের কার্যকারিতা চিরতরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে, জীবনযাত্রার মান এবং এমনকী তাদের বেঁচে থাকাকেও প্রভাবিত করতে পারে। সিওপিডির মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমান লক্ষণগুলিকে শনাক্ত করা এবং তাত্ক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ধূমপান ত্যাগ

COPD-র যেকোনও চিকিৎসা পরিকল্পনার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হলো ধূমপান ত্যাগ করা। ধূমপান বন্ধ করলে সিওপিডির সমস্যা আরও খারাপ হওয়া এবং শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমতে থাকার বিষয়টিতে লাগাম পড়ে। শুধু ধূমপান কমানো নয়, সিওপিডি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পরোক্ষ ধূমপান, ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন।

ওষুধ

COPD-র লক্ষণ এবং জটিলতাগুলির চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

ব্রঙ্কোডাইলেটর

ব্রঙ্কোডাইলেটর সাধারণত ইনহেলার হিসেবে কাজ করে— এগুলি আপনার শ্বাসনালীর চারপাশের পেশিগুলিকে শিথিল করে। এটি কাশি এবং শ্বাসকষ্ট কমাতে এবং শ্বাস প্রশ্বাসকে সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।

ইনহেলড স্টেরয়েড

ইনহেলড কর্টিকোস্টেরয়েড ওষুধগুলি শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে পারে এবং তীব্রতা রোধ করতে সাহায্য করে। যদিও এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে ক্ষত, মুখের সংক্রমণও রয়েছে। এই ওষুধগুলি সিওপিডি-র ঘন ঘন তীব্রতা দেখা দেয় এমন রোগীদের জন্য দরকারি।

আরও পড়ুন- ফুসফুসের ৪০% বিকল! একাই ৪৫টি যন্ত্র বাজিয়ে দেশের ‘ওয়ান ম্যান ব্যান্ড’ এই ব্যক্তি

ফুসফুসের থেরাপি

ডাক্তাররা প্রায়শই মাঝারি বা গুরুতর সিওপিডি রোগীদের জন্য ফুসফুসের থেরাপি ব্যবহার করেন, যেমন অক্সিজেন থেরাপি। যদি রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন না থাকে, তাহলে সম্পূরক অক্সিজেনের প্রয়োজন হতে পারে। এমন অনেক যন্ত্র রয়েছে যা ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করে। এই যন্ত্রগুলি সঙ্গে নিয়েই ঘোরা যায়।

পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম হচ্ছে ব্যায়াম প্রশিক্ষণ, পুষ্টি এবং কাউন্সেলিংকে একত্রিত করে গড়ে তোলা এক ব্যবস্থাপনা। সিওপিডি আক্রান্তরা এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়াতে পারেন, এই ব্যবস্থাপনা দৈনন্দিন কাজকর্মে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়াতে পারে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে পারে।

ইন-হোম নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন থেরাপি সাধারণত হাসপাতালেই ব্যবহৃত হয় যেমন বাইলেভেল পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেসার (BiPAP)। কিছু গবেষণায় এখন বাড়িতেও এটি ব্যবহারের দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক সহ নন-ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন থেরাপি মেশিন শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি করতে এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (হাইপারক্যাপনিয়া) ধারণ কমাতে সাহায্য করে।

More Articles