শ'য়ে শ'য়ে মানুষ হাসপাতালে যান এই আটা খেলেই! তাও কেন এত জনপ্রিয় 'কুট্টু কা আটটা'?

Buckwheat Health Hazard: শুধুমাত্র নবরাত্রির সময় এই আটা ব্যবহার করা হয় এবং তখন এর চাহিদা অত্যন্ত বেশি থাকে।

ময়দা বেশ কিছুকাল হলো স্বাস্থ্যসচেতন মানুষদের নেক নজরে আর নেই। আটার স্বাদ বেশি পছন্দ করছেন মানুষ, স্বাস্থ্যের জন্য তো বটেই, সহজলভ্যতার জন্যও। বয়স্ক মানুষের কাছেও আটার উপযোগিতা বেশিই গ্রহণীয়। তবে চাকিতে পেষানো আটা, বাজারে পাওয়া নানান প্যাকেটজাত আটার পাশাপাশি আরেকটি আটা বেশ জনপ্রিয়। অথচ এই আটাই হয়ে উঠছে মৃত্যদূতও! 'কুট্টু কা আট্টা' নামে পরিচিত এই আটা সাধারণত নবরাত্রির উৎসবের সময় বেশি খাওয়া হয়। এই উৎসব-আচারের অঙ্গ হিসেবে বহু মানুষ উপোস করেন। সেই উপোস ভঙ্গের সময় কুট্টু কা আট্টার তৈরি পুরি, টিক্কি এবং হালুয়া মানুষের বিশেষ পছন্দের খাবার। কুট্টু কা আট্টা বা বাকের আটা নবরাত্রির সময় দিল্লি এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

ফাইবার, প্রোটিন, ভিটামিন এবং নানা খনিজের দুর্দান্ত উত্স এই আটা। তবে ভেজাল এবং পুরনো বাকহুইট আটা বা কুট্টু কা আট্টা খেয়ে প্রতি বছর শ'য়ে শ'য়ে মানুষ হাসপাতালেও ভর্তি হন। নবরাত্রির প্রথম দিনে কুট্টু আটা দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে হরিয়ানার সোনিপাতে অন্তত ৩৫০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। উত্তরপ্রদেশের মোদিনগরেও এই আটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া মানুষজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। প্রতি বছর এই সময়, পুরনো বা ভেজাল কুট্টু আটা খাওয়ার কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন কেন? তা জানার আগে জানতে হবে এই আটা আসলে কী?

কুট্টু কা আট্টা কী?

বাকহুইট আটা আসলে একটি ফুলের গাছের বীজ থেকে তৈরি করা হয় এবং এই উদ্ভিদটি ঘাস পরিবারের অন্তর্গত নয়। বেশিরভাগ শস্যই ঘাস গোত্রের অন্তর্গত। কিন্তু বাকহুইট ভারতে চাষ করা ফসল নয়। উপোসের পরে খাবার হিসাবে এটি এত জনপ্রিয় হওয়ার কারণই হলো, এটি কোনও খাদ্যশস্য নয়। উপোসের সময় সাধারণত ধর্ম ও আচার বিশ্বাসী মানুষ কোনও প্রকার শস্য খাওয়া এড়িয়ে চলেন।

২০২০ সালে, বিশ্বে বাকহুইটের উত্পাদন ছিল ১.৮ মিলিয়ন টন। বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪৯% হয় রাশিয়ারে, তারপরেই চিনে ২৮% এবং ইউক্রেনে ৫% বাকহুইট উৎপাদন হয়, জানাচ্ছে জাতিসংঘের সংস্থা FAO-এর একটি প্রতিবেদন। ব্রিটানিকা অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় বাকহুইট কেক নামের বিশেষ কেক তৈরি করতে গমের আটার সঙ্গে এই বাকহুইট মেশানো হয়।

কুট্টু কা আট্টা এবং খাবারে বিষক্রিয়া

বুধবার হরিয়ানার সোনিপতে কুট্টু কা আটা দিয়ে তৈরি খাবার খেয়ে প্রায় ৩৫০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। কুট্টু আটা খাবার খাওয়ার পরে ডিহাইড্রেশন, পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়ার লক্ষণ নিয়ে উত্তরপ্রদেশের মোদিনগরেও বহু মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকদের মতে, রোগীদের সবাই ফুড পয়জনিংয়ের শিকার। ভেজাল কুট্টু কা আটা দিয়ে তৈরি খাবার খেয়েই তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

পুরনো এবং ভেজাল বাকহুইট আটা শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। ভেজাল ছাড়াও পুরনো আটা মজুতের কারণেও নানা সমস্যা হয়। কুট্টু আটা সাধারণত দুই থেকে তিন মাস ভালো থাকে। শুধুমাত্র নবরাত্রির সময় এই আটা ব্যবহার করা হয় এবং তখন এর চাহিদা অত্যন্ত বেশি থাকে। তাই, দোকানদাররা এই আটা জমিয়ে রেখে দেন। আটা জমতে জমতে পুরনো হয়ে যায়। এই আটা খেলেই অসুস্থতা অনিবার্য। তবে তাজা এবং ভেজালহীন কুট্টু কা আট্টা খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই।

কুট্টু আটার গুণমান রক্ষা করার জন্য, সরাসরি সূর্যালোক এবং আর্দ্রতা থেকে তা দূরে রাখা উচিত। ফ্রিজে রেখেও আটার মান বজায় রাখা যেতে পারে। বাকহুইটের আটার রং গাঢ় বাদামী। ভেজালের ক্ষেত্রে আটার রং ধূসর বা হালকা সবুজ।

More Articles