এক লাখে চারজন আক্রান্ত! রোজের ওষুধের কুপ্রভাবেই দেখা যেতে পারে ভয়াবহ এই বিরল রোগ
Myositis: সম্প্রতি অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বাম হাতে ওষুধের নল লাগানো একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির নীচে ক্যাপশনে লিখে জানান, তিনি মায়োসাইটিস রোগে আক্রান্ত!
সম্প্রতি দক্ষিণী অভিনেত্রী সামান্থা রুথ প্রভু তাঁর ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে বাম হাতে ওষুধের নল লাগানো একটি ছবি পোস্ট করেন। ছবির নীচে ক্যাপশনে লিখে জানান, তিনি মায়োসাইটিস রোগে আক্রান্ত! অসুস্থতার ছবির পোস্টের সঙ্গে সঙ্গেই সামান্থার সহকর্মী এবং ভক্তদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়। গত মাসের শেষের দিকেই মুক্তি পেয়েছে তাঁর আগামী ছবি ‘যশোদা’র ট্রেলার। বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যায় অসুস্থতার কারণে অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন তিনি। এমনকী জানা যায়, চিকিৎসার জন্য মার্কিন মুলকে রয়েছেন অভিনেত্রী। এরপরেই নিজের ছবি পোস্ট করে তাঁর অসুস্থতার খবর সকলকে জানান সামান্থা।
ইনস্টাগ্রাম পোস্টে অভিনেত্রী লেখেন, “যশোদা সিনেমার ট্রেলার দেখে আপনারা যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তাতে আমি উচ্ছসিত। আর ভালোবাসার এই যোগসূত্র ধরেই আপনাদের জানাতে চাই যে আপনাদের ভালোবাসাই আমাকে জীবনের সমস্ত লড়াই করার শক্তি যোগায়। কয়েক মাস আগেই মায়োসাইটিস নামে এক অটোইমিউন রোগ ধরা পড়ে। ভেবেছিলাম সুস্থ হয়েই একথা জানাব কিন্তু যা ভেবেছিলাম, সুস্থ হতে তার থেকে বেশি সময় লাগছে।” সামান্থার এই পোস্টের পরই বরিষ্ঠ অভিনেতা চিরঞ্জীবি সাহস জুগিয়েছেন তাঁকে। এমনকী প্রাক্তন স্বামী নাগা চৈতন্যও ফোন করে স্যামের শারীরিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিয়েছেন। কিন্তু এই রোগের খুঁটিনাটি তথ্য অনেকেরই অজানা।
মায়োসাইটিস কী?
মায়োসাইটিস একধরনের অটোইমিউন রোগ। প্রথমেই জানা দরকার অটোইমিউন রোগ কী? আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থাকে ইমিউনিটি সিস্টেম বা অনাক্রম্যতা বলে। শরীরে কোনও রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে এই সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং দেহকে রোগাক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তবে কখনও কখনও এই প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়। নিজের শরীরের কোনও অঙ্গকেই ইমিউনিটি সিস্টেম শত্রু ভেবে বসে আক্রমণ করে। ফলে রোগ জীবাণুর আক্রমণ ছাড়াই শরীর নিজেই নিজের ক্ষতি করে বসে।
আরও পড়ুন- ঘরে ঘরে শিশুদের শরীরেও হানা দিচ্ছে এই ঘাতক ডায়াবেটিস! কীভাবে লক্ষণ চিনবেন
মায়ো শব্দের অর্থ পেশি এবং আইটিস কথার অর্থ প্রদাহ। অর্থাৎ এই অটোইমিউন রোগে পেশি আবৃত কোষগুলিতে প্রদাহ হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুলবশত দেহেরই সুস্থ সবল পেশিকে আক্রমণ করে। ফলে মায়োসাইটিস রোগে আক্রান্ত রোগীর পেশি দুর্বল হয়ে যায়। ইন্ডিয়ান জার্নাল অব রিউম্যাটোলজির দেওয়া পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি এক লাখে ৪ থেকে ২২ জন মায়োসাইটিস রোগে আক্রান্ত হন। বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের ফলে মায়োসাইটিস হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ ওষুধটি হল স্ট্যাটিন। স্ট্যাটিন হল এমন একটি ওষুধ যা কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলির মধ্যে একটি মায়োসাইটিস পেশির প্রদাহ।
কী কী লক্ষণ দেখা যায়?
মায়োসাইটিস রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যাথা শুরু হয়। ঘাড়ের পেশিতে ব্যাথা অনুভব হয় এবং পেশি শক্ত হয়ে যায়। এছাড়া হাত পা এবং কোমরের পেশিতেও ব্যাথা অনুভব হয়। তবে যেকোনও পেশিতেই ব্যথা অনুভব হতে পারে। পেশি এতই দুর্বল হয়ে যায় যে রোগী মাঝে মধ্যে পড়েও যেতে পারেন। একটানা দাঁড়িয়ে থাকলে বা বসে থাকলে ক্লান্তি অনুভব করেন রোগী। তাছাড়াও সিঁড়ি বেয়ে উঠতে নামতে, জিনিস তুলতে, এমনকী চুল আঁচড়াতেও সমস্যা অনুভব হয়। খাদ্য নালির পেশি বা ডায়াফ্রামের পেশিতে এই সমস্যা হয়, খাবার খেতে বা শ্বাস নিতেও সমস্যা হয়। মহিলা এবং পুরুষ উভয়েই এই রোগে আক্রান্ত হন। তবে চিকিৎসকদের মতে, ৩০-৬০ বছর বয়সী মহিলাদেরই মূলত এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু যথাসময়ে চিকিৎসা করালে সুস্থ জীবনযাপন করা সম্ভব।
রোগের রকমফের
রোগীর উপসর্গ এবং পেশির অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে মায়োসাইটিস রোগকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. পলিমায়োসাইটিস- এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে কাঁধের পেশিতে ব্যাথা শুরু হয় এবং এরপর সেখান থেকেই শরীরের অন্যান্য অংশে ব্যাথা ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি পলিমায়োসাইটিস আক্রান্ত রোগীর উপসর্গ ভিন্ন হয় এবং একাধিক অটোইমিউন রোগ শরীরে বাসা বাঁধে।
২. ডার্মাটোমায়োসাইটিস- এধরনের মায়োসাইটিসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন। এক্ষেত্রে পেশির দুর্বলতার সঙ্গে ত্বকে একাধিক জায়গায় ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
৩. ইনক্লুশন বডি মায়োসাইটিস- একমাত্র এই প্রকার মায়োসাইটিস মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পঞ্চাশোর্ধ পুরুষরা এই রোগের শিকার হন। এক্ষেত্রে রোগীর শরীরের একপাশ অন্য পাশের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হয়। চিকিৎসকদের অনেকেই ইনক্লুশন বডি মায়োসাইটিসকে জিনগত রোগ বলে মনে করেন।
আরও পড়ুন- কোভিডের টিকাতেই ছিল মৃত্যুফাঁদ! বিস্ফোরক যে তথ্য আসছে প্রকাশ্যে
রোগ নির্ণয়
চিকিৎসক আপনার লক্ষণগুলি বিশদে জেনে আপনাকে বেশ কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দেবেন। যে যে পরীক্ষাগুলির মাধ্যমে মায়োসাইটিস রোগ নির্ণয় করা যায় তা হল-
১. রক্ত পরীক্ষা - রক্তে উপস্থিতি বিভিন্ন এনজাইম এবং অ্যান্টিবডির পরীক্ষার মাধ্যমে মায়োসাইটিস নির্ণয় করা হয়।
২. বায়োপসি- পেশি কোশের নমুনা পরীক্ষা করা যেতে পারে যার ফলে পেশির পরিবর্তনগুলি ধরা পড়বে।
৩. এমআরআই স্ক্যান- এর মাধ্যমেও পেশির পরিবর্তনগুলি বোঝা সম্ভব।
ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপির চিকিৎসা
চিকিৎসকদের মতে, এই রোগে আক্রান্ত রোগীর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসার মাধ্যমেই এই রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে ব্যায়াম সব ধরনের মায়োসাইটিসের চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পেশির ফোলা কমাতে এবং পুনরায় শক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করবে ব্যায়াম। চিকিৎসকরা নিয়মিত ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দেন। এছাড়া রোগীকে স্টেরয়েড দেওয়া হয়। তবে ব্যায়াম, স্পিচ থেরাপির (কথা বলতে বা খাবার গিলতে সমস্যা হলে) মাধ্যমে রোগ নির্মূল করা সম্ভব।