ব়্যাটহোল মাইনিং কী? এ পথেই কি উদ্ধার হবেন সুড়ঙ্গে বন্দি শ্রমিকেরা?
Uttarakhand Tunnel Rescue Operation: ইতিমধ্যেই উত্তরকাশির ওই সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের কাছে এসে পৌঁছেছে ব়্যাট হোল মাইনিং বিশেষজ্ঞরা। সুড়ঙ্গের বেশ কিছুটা পথ ওই ব়্যাট হোল মাইনিং করে করে এগোনোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলার সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে এখনও বন্দি ৪১ জন শ্রমিক। তাঁদের উদ্ধারকাজে কোনও খামতি রাখেনি সরকার। সব রকমের আয়োজন, প্রস্তুতি ও কৌশল সত্ত্বেও উদ্ধারের পথে যেন বারবার কাঁটা। দিল্লি থেকে উড়িয়ে আনা মার্কিন খনন যন্ত্র ভেঙে পড়ে সুড়ঙ্গের ভিতরে ঢুকেই। ব্লেডটিই ভেঙে যায় সেই যন্ত্রের চৌপাট হয়ে যায় সমস্ত পরিকল্পনা। সেই ড্রিলিং মেশিনের ধ্বংসাবশেষ সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনতেই লেগে গিয়েছে অনেকটা সময়। এবার মেশিন নির্ভরতা থেকে সরে এসে সনাতন পদ্ধতিতেই শ্রমিকদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে উদ্ধারকারী দল। আপাতত ব়্যাট হোল মাইনিংয়ের মাধ্যমেই শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তার জন্য ইতিমধ্যেই উত্তরকাশির ওই সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গের কাছে এসে পৌঁছেছে ব়্যাট হোল মাইনিং বিশেষজ্ঞরা। তাদের পর্যবেক্ষণেই সুড়ঙ্গের বেশ কিছুটা পথ ওই ব়্যাট হোল মাইনিং করে করে এগোনোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ঝাঁসি থেকে এসে পৌঁছেছেন প্রসাদী লোধি। তিনি একজন ব়্যাট হোল মাইনিং কর্মী। খননের যন্ত্রপাতি নিয়ে তিনি ওই পাইপের মধ্যে প্রবেশ করবেন, এবং সুড়ঙ্গের ভিতরে জড়ো হয়ে থাকা ধ্বংসস্তূপ সরানোর চেষ্টা করবেন, যাতে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর রাস্তাটা পরিষ্কার করা যায়।
আরও পড়ুন: ফেল মার্কিন যন্ত্র, ১৬ দিন পরে শ্রমিকদের উদ্ধারে যে পথে এগোচ্ছে উদ্ধারকারী দল…
প্রসাদী লোধির প্রায় দশ বছরের অভিজ্ঞতা এই কাজে। মূলত দিল্লি ও আহমেদাবাদেই কাজ করেছেন তিনি। তবে এমন মানুষ উদ্ধারের কাজ তাঁর জীবনে প্রথম। প্রসাদী জানিয়েছিলেন, "আমাদের কাজে তেমন কোনও ভয়ের কিছু নেই। এখানে পাইপ প্রায় ৮০০ মিলিমিটার চওড়া। আমরা ৬০০ মিলিমিটারেও এই কাজ করেছি।" ভিতরে প্রায় ১২ মিটার অংশ জুড়ে রয়েছে ওই ধ্বংসস্তূপ। যদি গোটাটাই মাটি হয়ে থাকে, তাহলে আশা করা যাচ্ছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরিষ্কার করে ফেলা যাবে সেগুলি। তবে ওই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে যদি পাথর থাকে, তাহলে সময় বেশি লাগার কথা।
প্রসাদির সঙ্গেই ঘটনাস্থলে এসেছেন তাঁর মতোও আরও কয়েকজন ব়্যাট হোল মাইনিং শ্রমিক। ঝাঁসি থেকে আসা বিপিন রাজপুত এই পেশায় জড়িতে দু-তিন বছর ধরেই। মেঘালয়ের মতো এলাকাগুলি থেকে কয়লা খননের কাছে ব্যবহার করা হয় এই বিশেষ পদ্ধতি। যেখানে সরু, লম্বা টানেলের থেকে কোনও কিছু বের করে আনার জন্য খনন কাজ চালানো হয়। তবে এক্ষেত্রে একসঙ্গে অনেকে কাজ করতে পারেন না। একেকবারে এক জন করে শ্রমিকই পৌঁছতে পারেন ওই সুড়ঙ্গে। সাধারণত গর্ত খোঁড়ার পর দড়ি বা বাঁশের মই ব্যবহার করে কয়লাখনি অবধি পৌঁছনো হয়। এরপক বেলচা, ঝুড়ি এসবের মাধ্যমে তুলে আনা হয় কয়লা। এখানেও ঠিক সেই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই প্রসাদী, বিপিনরা নিজেদের কাজ শুরু করেছেন। বেশ খানিকটা জায়গা পরিষ্কারও করে ফেলেছেন বলে খবর। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার বিকেলেই শ্রমিকদের উদ্ধার নিয়ে সুখবর মিলতে পারে। এমনিতে এই ধরনের ব়্যাটহোল মাইনিংয়ের ক্ষেত্রে বেশ খানিকটা ঝুঁকি থেকেই যায়। সরু পথ, তার উপর মাটির নিচে অক্সিজেন কম এবং বিষাক্ত গ্যাস বেশি। সাধারণত দুর্ঘটনার সংখ্যাও এই কাজে অনেকটাই বেশি। তা সত্ত্বেও জীবিকার প্রয়োজনে অনেকেই এই কাজ করতে বাধ্য হন।
আপাতত উত্তরকাশির শ্রমিক উদ্ধারে আশার আলো এই ব়্যাটহোল মাইনিং শ্রমিকরাই। এখন দেখা যাক, এই ইঁদুররের গর্ত দিয়েই বেরিয়ে আসতে পারেন কিনা প্রায় ২০ দিন ধরে অন্ধকার সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১জন শ্রমিক। যদিও তাদের কাছে নিয়মিত খাবার, জল ও ওষুধপত্র পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। পাঠানো হচ্ছে অক্সিজেন। উদ্ধারের পর শ্রমিকদের যাতে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যায়, তার জন্য় উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গের সামনে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে ৪১টি অ্যাম্বুল্যান্স। যাতে রয়েছে অক্সিজেনের সুবিধা।
আরও পড়ুন: ১২ দিন পর অবশেষে মুক্তি! কীভাবে সুড়ঙ্গ থেকে বের করা হচ্ছে ৪১ শ্রমিককে?
উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে বন্দি শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন এ রাজ্যের হুগলির দুই বাসিন্দাও। খুব শিগগিরই ঘরের ছেলে ঘরে ফিরবেন, সেই আশাতেই বুক বেঁধেছেন সমস্ত শ্রমিকদের পরিবার। একই সঙ্গে প্রার্থনা করছেন সমগ্র দেশবাসী।