পৃথিবীর মতো অ্যালার্ম নেই, ঘড়িও না! জানেন, চাঁদে এখন ঠিক ক'টা বাজে?

The Time on the Moon: চাঁদে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টি হচ্ছে পৃথিবীর ১৪.৭৭ দিন।

সময় ছুটছে, মানুষ সময়ের পিছনে ছুটতে গিয়ে নাজেহাল হয়ে সময়ের গুষ্টি উদ্ধার করছে। সময়ের কাঁধে মানুষের ভালো, খারাপ থাকার দায় চেপে যাচ্ছে ক্রমশ। সময়ই জীবন গড়ছে, ভাঙছেও। সময়ের মধ্যে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পেরে গলদঘর্ম হচ্ছে কেউ, কেউ আবার সময়কে চ্যালেঞ্জ করে এগিয়ে যাচ্ছেন অজানা পথে। মোদ্দা করা, সময় নিয়ে এই বাক্য অপচয়ের লক্ষ্য একটিই, সময় গুরুত্বপূর্ণ। সময়কে এড়িয়ে চলা যায় না। পৃথিবীর সমস্ত অ্যালার্ম ঘড়ি যদি থেমেও যায়, ঘড়ির প্রযুক্তিটিই যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলেও সময়কে থামানো যাবে না। পৃথিবী ঘুরবে সূর্যের চারপাশে, দিন গড়াবে, রাত গড়াবে। কোথাও দুপুর হবে, কোথাও নরম ভোর! কিন্তু এই সবটিই হবে পৃথিবীতে। যদি আপনি মঙ্গলে থাকেন, তাহলে ক'টা বাজবে, বা ধরা যাক চাঁদেই গেলেন, ক'টা বাজবে?

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে দিনে ১৬টি সূর্যাস্ত ঘটে, রমজানের সময় ব্যাপক সমস্যাতেও পড়েন মানুষ। এই আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে সময় অঞ্চলটি হচ্ছে ইউনিভার্সাল টাইম (UT), যা গ্রিনিচ মিন টাইমের (GMT) মতোই। এই যুক্তিতেই, ইউনিভার্সাল টাইম হচ্ছে চাঁদেরও সময়। আর্টেমিস থ্রি-তে মানুষ যখন চাঁদে নেমেছে, ফিরে এসেছে তখন ঠিক কোনও সময় অঞ্চলটি ব্যবহার করা হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা নেই। চাঁদের পৃষ্ঠে এক বা একাধিক ঘাঁটি স্থাপন হয়ে গেলেও চাঁদের সময় নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও চুক্তি নেই। বর্তমানে, রোবোটিক মিশনগুলি যে দেশ থেকে শুরু হচ্ছে সেই দেশের নির্দিষ্ট সময় অঞ্চলের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই করা হয়।

সূর্যকে ব্যবহার করে সময় নির্ধারণ করা, যেমনটা পৃথিবীতে করা হয়, তা চাঁদে কাজ নাও করতে পারে। চাঁদে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়টি হচ্ছে পৃথিবীর ১৪.৭৭ দিন। তাই সময়ের কিছু উপবিভাগ প্রয়োজন। এর আগে লুনার স্ট্যান্ডার্ড টাইমের একটি ধারণা আসে। চন্দ্রের এই মানক সময়ের ধারণাতে সেকেন্ড, মিনিট এবং ঘণ্টা একই ছিল কিন্তু ২৪ ঘণ্টাকে একটি চক্র বলা হতো এবং ৩০টি চক্র মানে একটি পূর্ণ চন্দ্র দিবস।

আরও পড়ুন- মহাকাশে কীসের হৃদস্পন্দন? কোন রহস্যের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা?

অ্যাপোলো মহাকাশচারীরা চাঁদে কোন টাইম জোন ব্যবহার করেছিলেন?

প্রশ্নের মধ্যে একটি মজার বিষয় লুকিয়ে আছে। এই মহাকাশচারীরা আসলে কোনও টাইম জোন ব্যবহারই করেননি। ইউনিভার্সাল টাইম জোন বা ফ্লোরিডা যেখান থেকে এই উৎক্ষেপণ হয়, সেই সময় ব্যবহার করা হয়নি, হিউস্টনের মতো একই সময় অঞ্চল যেখানে মিশন কন্ট্রোল অবস্থিত ছিল সেই সময়টিও ব্যবহৃত হয়নি। এই মহাকাশচারীরা গ্রাউন্ড ইল্যাপসড টাইম (GET) ব্যবহার করেছিলেন যা এখন মিশন ইল্যাপসড টাইম নামে পরিচিত। উৎক্ষেপণের সময় থেকে মিনিট, ঘণ্টা এবং দিন হিসাবে গণনা করা হয়েছিল।

এই মিশন এবং পরবর্তীতে স্পেস শাটলের মতো মিশন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘটতে থাকা কার্যকলাপের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে, তাই একটি নির্দিষ্ট সময় অঞ্চল ব্যবহার করার পরিবর্তে এটি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি মিশনের জন্য এই হিসেব সত্যিই আর তেমন অর্থবহ নয়। স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি একটি আলোচনার আহ্বানও জানিয়েছে। চন্দ্রপৃষ্ঠের সময় অঞ্চলের প্রয়োজনীয়তা স্রেফ মহাকাশচারীদের জন্যই দরকারি নয়, চাঁদের চারপাশে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।

More Articles