উৎসবের ছবি || পুজোর আমেজ পেতে যে সিনেমাগুলি দেখতেই হবে

Durgapuja 2022: দুর্গাপুজোর আমেজ পেতে দেখতেই হবে এই সিনেমাগুলি।

বাজল তোমার আলোর বেণু...

আকাশের পেঁজা তুলোর মেঘ, কাশফুল আর ভোরের শিউলিফুলের গন্ধ জানান দেয় পুজো আসছে। সারা বছরের অপেক্ষার অবসান। তবে আসছে আসছে করতে করতে পুজো কিন্তু একেবারে দোরগোড়ায় এসে গেছে। অনেকেই পুজোর সময় ভিড় পছন্দ করেন না, পছন্দ করেন না হেঁটে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরতে। কিন্তু বাড়িতে বসেই পুজো উপভোগ করা সম্ভব, পাওয়া সম্ভব পুজোর আমেজ- কয়েকটি অবিস্মরণীয় বাংলা ছবির মাধ্যমে। ফিরে দেখা যাক, পুজোর আবহ কীভাবে ধ‍রা পড়েছে সেসব ছবিতে।

জয় বাবা ফেলুনাথ
"পরশু তো ষষ্ঠী। আপনার কাজ পরশুর মধ্যে শেষ হবে?"

চতুর্থীর দিন ফেলুদার এই বিখ্যাত সংলাপ সোশ্যাল মিডিয়ায় অধিকাংশ বাঙালির টাইমলাইনে ঘুরতে দেখা যায়। সত্যজিৎ রায়ের এই কালজয়ী ছবি সম্পূর্ণতই শুটিং হয়েছিল বেনারসে। ফেলুদাকাহিনি হিসেবেও যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পেয়েছিল 'জয় বাবা ফেলুনাথ', সেই কাহিনি চলচ্চিত্রায়িত হচ্ছে, তার ওপর ১৯৭৪ সালে 'সোনার কেল্লা'-র মধ্য দিয়ে হিট হয়ে যাওয়া ত্রয়ী- সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সন্তোষ দত্তর অভিনয় আবার দেখতে পাবে বাঙালি- সেই উত্তেজনাও ছিল পুরোমাত্রায়। ১৯৭৯-এর ৫ জানুয়ারি মুক্তি পায় এই ছবিটি। ঘোষালবাড়িতে গণেশমূর্তি চুরি যাওয়ার ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে ফেলুদা, এবং তার সঙ্গে মোলাকাত হয় তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী মগনলাল মেঘরাজের। জটায়ুকে দাঁড় করিয়ে রেখে ছুরি ছোড়ার হাড়-হিম দৃশ্য আজও বাঙালির মনে গেঁথে আছে। পুজো ও রহস্যের বুনন বাঙালির মন ও মস্তিষ্ককে বেশি করে আবেগাপ্লুত করে তোলে। ফেলুদার মগজাস্ত্র ব্যবহার নতুন করে বারবার তাক লাগিয়ে দেয়। আট থেকে আশির প্রিয় এই ছবি। পুজোর দিনে দুপুরে বা সন্ধেয় পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এই সিনেমা উপভোগ করবেনই।

Book Cover

'জয় বাবা ফেলুনাথ'-এর প্রচ্ছদ

উৎসব
বাংলা সিনেমার পটভূমিতে বাঙালির প্রাণের উৎসব দুর্গাপুজো বহুদিন জায়গা করে নিয়েছে। পরিচালকের হাত ধরে সেলুলয়েডের পর্দার পুজো জায়গা করে নিয়েছে ঘরের অন্দরমহলে। ২০০০ সালে মুক্তি পায় ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত 'উৎসব', ছবিটি পুরোটাই দুর্গাপুজোর আবহে তৈরি। পুজোর প্রেক্ষিতে একটি বনেদিবাড়ির ও যৌথ পরিবারের ক্ষয়িষ্ণু আবহ তুলে ধরেছিল এই ছবি। এই ছবিটি পায় 'জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার' এবং 'গোল্ডেন লোটাস' অ্যাওয়ার্ডও। মাধবী মুখোপাধ্যায়, মমতাশঙ্কর, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, রাতুল শঙ্কর, বোধিসত্ত্ব মজুমদার, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকের অভিনয়ে সমৃদ্ধ এই ছবি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুর্গাপুজোর সমস্ত নিয়ম-কানুন, এবং এক পরিবারের নানা দিকের গল্পকে ঘিরেই এই সিনেমা।

Movie Scene

'উৎসব'-এর দৃশ্যে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

'উৎসব’ ছবির আখ্যান ধ্রুপদী গড়নের, একথা মনে হতে পারে। পঞ্চমাঙ্কের নাটকের মতো আখ্যানের প্লটের রেখাচিত্রও পাঁচটি বিন্দু স্পর্শ করে যেন এগিয়ে গিয়েছে। পঞ্চমীর সকাল থেকে কাহিনি শুরু হয়, চলে প্রায় কালীপুজোর সময় পর্যন্ত। শুরুর পর রাইজিং অ্যাকশন চলে দশমী পর্যন্ত। দশমীতে ক্ল্যাইম্যাক্স। একাদশী থেকে ফলিং অ্যাকশনের শুরু। মোট পাঁচটি দিনের ঘটনা সরাসরি ঘটেছে — পঞ্চমী-অষ্টমী-দশমী-একাদশী-কালীপুজো পর্যন্ত। আর এই বৃত্তে আবর্তিত হয়েছে ঋতুপর্ণর উৎসব তথা বাঙালির চিরকালীন উৎসব।

অন্তরমহল
বনেদিবাড়ির পুজোর ধরন আলাদা, কিন্তু তার ইতিহাসে আছে নানা অজানা গল্প। ২০০৫-এ সেই সাবেকিয়ানা, বনেদিয়ানার ভেতরের চোরা অন্ধকারের গল্প বলেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ, তাঁর 'অন্তরমহল'-এ। জ্যাকি স্রফ, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, অভিষেক বচ্চন, সোহা আলি খান, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়ের আশ্চর্য অভিনয়ে জীবন্ত হয়ে ওঠে এক জমিদার পরিবারের অন্দরের নানা গল্প। জমিদারতন্ত্রর ক্ষয়, ঔপনিবেশিক প্রভুদের বশংবদ হওয়া, ব্রাহ্মণ‍্যতন্ত্রর শোষণ ঘিরেই সিনেমার প্রেক্ষাপট নির্মিত হয়। না দেখে থাকলে এবার বাড়ি বসেই দেখে ফেলতে পারেন এই ছবি।

Movie Scene

'অন্তরমহল'-এর একটি দৃশ্যে সোহা আলি খান

হীরের আংটি
বারবার দুর্গাপুজোর আবহ ছবিতে তুলে এনেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ‌। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অদ্ভুতুড়ে সিরিজের অন‍্যতম বিখ্যাত গল্প 'হীরের আংটি' অবলম্বনে পুজোর আমেজের সঙ্গে রহস্য মিশিয়ে বানানো এই ছবিটি পরিচালকের প্রথম ছবি। অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, বসন্ত চৌধুরী, জ্ঞানেশ মুখোপাধ্যায়, বরুণ চন্দ, মুনমুন সেন, প্রদীপ মুখোপাধ্যায়, দুলাল লাহিড়ী, সুমন্ত মুখোপাধ্যায়, বঙ্কিম ঘোষ, সুনীল মুখোপাধ্যায় ছিলেন অভিনয়ে। ছোটদের পুজো উদযাপনের আনন্দ ও বিষাদ অসাধারণ তুলে ধরেছিল ছবিটি।

বিসর্জন
২০১৭ সালে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ছবি 'বিসর্জন'। দুই বাংলার জীবনযাপন ও পুজোর মিশেলে গড়ে ওঠা এই সিনেমা পেয়েছে জাতীয় পুরস্কার। আবির চট্টোপাধ্যায়, জয়া আহসান, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিনয় মুগ্ধ করে রাখে দর্শককে। এক মুসলমান ছেলে আর হিন্দু বিধবার প্রেমের গল্প। শুধু পরিচালনা ও অভিনয় নয়, গল্পও কৌশিকের লেখা। ধর্ম মানুষের ভালবাসার পথে বাধা হতে পারে না— এই চিরাচরিত সত্যকে তুলে ধরতে গিয়ে কিছুটা বাড়তি আবেগ গল্পকে দীর্ঘায়িত করেছে। তবে সেই ক্রটি কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে অভিনয়ের সাবলীলতায়। ওপার বাংলা-এপার বাংলার আবেগ উসকে দেবে এই ছবি।

উমা

Movie Scene

'উমা' ছবির পোস্টার

'এখনও এই শহরের কিছু মানুষের মধ্যে আবেগ রয়েছে! আমরা তাঁদের কাছে যাব!’ পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘উমা’-কে এই একটি সংলাপেই হয়তো বেঁধে ফেলা যায়‌। প্রবাসী বাঙালির জীবনে পুজো কতটা আপন, তারই গল্প বলেছেন সৃজিত মুখোপাধ্যায় উমাতে। ২০১৮ সালে তাঁর পরিচালিত এই ছবিটি সমস্ত বাঙালির মনে দাগ কাটে। ছবিটির কারণে দুর্গাপুজোর মণ্ডপ থেকে শুরু করে সমস্ত আবহটাই তুলে ধরা হয় উমার জন্য। উমার ইচ্ছেপূরণের জন্য তার বাবার এই উদ্যোগ। সিনেমাটি দেখলে আবেগে ভাসবেন সকলে। আসলে সৃজিত এই সিনেমাতে প্রত্যেকটি বিষয়কে একসঙ্গে করে এক নতুন গল্প বেঁধেছেন। যে গল্পে উমার আগমন ও ইচ্ছেপূরণ। আর তার সঙ্গে মিলিয়ে দিয়েছেন ওন্তারিয়োর বাসিন্দা ইভানের গল্পকে। ইভানের গল্পে যা ছিল বড়দিন, ‘উমা’-তে তাই দুর্গাপুজো। অভিনয়ে যীশু সেনগুপ্ত, সারা সেনগুপ্ত, অঞ্জন দত্ত, অনির্বাণ ভট্টাচার্য প্রমুখ।

More Articles