কে বেশি প্রাচীন, শান্তিপুর না কি নবদ্বীপ? রাসযাত্রা ঘিরে একাধিক কাহিনি আজও অবাক করে
History of Rash Yatra: নবদ্বীপের না শান্তিপুরের রাস উৎসব, কে বেশি পুরনো এ নিয়ে নিশ্চিত তথ্য না পাওয়া গেলেও একথা বলা হয় রাসের আক্ষরিক পালন শুরু হয় এই শহর থেকেই।
"এই নয়নের তৃষা পরাণের আশা।
চরণের তলে রেখে আয়।
আর নিয়ে যা রাধার বিরহের ভার।
কত আর ঢেকে রাখি বল্।
আর পারিস যদি তো আনিস হরিয়ে এক ফোঁটা তার আঁখিজল!"বিলাপ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
বিরহী রাধার প্রেম বৃত্তান্ত এবং বিরহের বিচ্ছুরণ ঘটেছে বারবার। প্রতিমুহূর্তে কৃষ্ণ প্রেমে মাতোয়ারা নারীর চিত্রায়ণ ঘটেছে সমাজ, সাহিত্য আর ইতিহাসে। যে কৃষ্ণকে ভালবেসে প্রাণ দিতেও আপত্তি ছিল না রাধার, সেই কৃষ্ণই মত্ত হয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গিনী সঙ্গে। সেখানে বেঁধেছে গলদ। আর ঠিক এই গলদের এক উদাহরণে লুকিয়ে রয়েছে এক একটি জনপদের বিরাট বিরাট ইতিহাস। যার অন্যতম রাস, যে উৎসবকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে আলোচনা, জল্পনা, বিতর্কও! কেন?
শাক্ত না বৈষ্ণব! বৈষ্ণব পদাবলী না বৃহৎ তন্ত্রসার! বেদবেদান্ত ছাড়িয়ে বর্গি হানার ভারত থেকেই এই বিবাদ-বিতর্ক বিরচিত। শাক্তসঙ্গীত না পদাবলী কীর্তনের প্রাধান্য বেশি, তা নিয়েও বাকযুদ্ধ রয়েছে যুগ যুগ ধরে! কিন্তু দুই শহর? দু'টি জনপদের বিবাদ! বঙ্গের তথা ভারতের ঐতিহাসিক অবস্থানের যে কথামৃত ছড়িয়ে রয়েছে নদিয়া জেলাকে ঘিরে, সেই কথা মৃত হয়ে যায় নবদ্বীপ আর শান্তিপুর প্রসঙ্গ না এলে। যাদের সূত্রে শাক্ত এবং বৈষ্ণবের বিভেদ-মিলন নিয়েও সেই পথ দেখায় নদিয়াই।
আর নদের নিমাই, কৃষ্ণনন্দ আগমবাগিশ এবং রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আবহেই দিনের পর দিন ধরে অন্যরকম উৎসব পালন করে চলেছে নবদ্বীপ। নদিয়ার ছোট্ট জনপদ, বাঙালি বৈষ্ণবদের এই পীঠস্থানের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে রাস উৎসবের ইতিহাস। যা ভিন্ন। ঠিক কেমন ছিল সবটা? কীভাবে এর উৎপত্তি? আর বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে এখন কেমন আছে এই উৎসব?
আরও পড়ুন- ঘৃণা আর ভুয়ো খবরের দরজা খুলে দিলেন এলন মাস্ক? টুইটার কিনে আদতে যা চাইছেন তিনি
রাস
কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমা। বিশেষত, দীপান্বিতা অমাবস্যার পরের তিথিতে রাস উৎসব পালিত হয়। আরাধ্য শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর সঙ্গে পরে যোগ হয়েছেন রাধাও। কিন্তু কৃষ্ণ এবং তাঁর সখীদের সঙ্গে সংঘটিত লীলার অনুষঙ্গকে ঘিরেই মূলত এই উৎসব পালিত হয়।
রাসের সূচনা নিয়ে পুরাণে কথিত রয়েছে একাধিক কাহিনি। কথিত আছে, কৃষ্ণ একদিনে ষোল'শ গোপিনী নিয়ে ক্রীড়ায় মগ্ন ছিলেন। সেই রাস দেখতে ইচ্ছা হয় মহাদেবের। তারপর ছদ্মবেশে মহাদেব প্রবেশ করেন সেই রাস দেখার জন্য। কিন্তু কৃষ্ণের বুদ্ধির কাছে ধরা পড়ে যান মহাদেব। তাঁকে ধরে ফেললেন যশোদার পুত্র। সেই ঘটনায় প্রচণ্ড রেগে যান শিব। রাস-স্থল ত্যাগ করেন জগতের আদিদেব। যদিও তিনি পিছু হঠলেন না এরপরও। মহাদেব সিদ্ধান্ত নিলেন, মর্ত্যের মানুষকে রাস দেখাবেন তিনিই। আর এই সূত্রেই অদ্বৈতাচার্যের রূপ ধরে মর্ত্যে আগমন ঘটে মহাদেবের। দাবি করা হয়, এই অদ্বৈতাচার্যের হাত ধরেই প্রথম শুরু হয় রাসের।
যদিও এই রাস উৎসবের কথকতা ঠিক যতটা প্রচারিত, তার তুলনায় এই উৎসবের সূচনার কারণ হিসেবে রয়েছে ঐতিহাসিক তত্ত্বও। এখানে উল্লেখযোগ্য বঙ্গের ইতিহাসের সেই বারো ভুঁইঞা। যার একজন হলেন প্রতাপাদিত্য ভুঁইঞা। যিনি, পুরীর রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের আমলে পূজিত দোলগোবিন্দের বিগ্রহ যশোরে নিয়ে আসেন। কিন্তু রাজস্থানের মানসিংহ বাংলা আক্রমণ করলে প্রতাপাদিত্য সেই বিগ্রহ তুলে দেন বারো ভুঁইঞাদের গুরু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত অদ্বৈতাচার্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামীর হাতে। যাঁর মাধ্যমেই ফের শুরু হল রাস। তবে এই উৎসব শুরুর ভিন্ন উপলক্ষ্য বা কারণ রয়েছে নবদ্বীপ বা শান্তিপুরকে কেন্দ্র করেও।
সর্বজনীন রাসের সূচনা
তখন নদিয়া জুড়ে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জীবনেও চলছে নানা সমস্যা। এদিকে গঙ্গার ভাঙনে বিপর্যস্ত তাঁর জনপদ। এর সঙ্গেই বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম মুখ চৈতন্যদেব তখন প্রায় অতীত, যিনি প্রথম রাস উৎসব পালন শুরু করেন নবদ্বীপে। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে শাক্তপন্থী রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নির্দেশে শুরু হয় রাস উৎসব পালন। যা সম্পূর্ণ বিপরীত, বৈষ্ণবপন্থী অথবা চৈতন্যের শুরু করা রাসের থেকে বেশ আলাদা। পটচিত্রের আবহ ছাড়িয়ে শাক্ত দেবদেবীর পূজা প্রচলন পার্থক্য সৃষ্টি করে দেয় নবদ্বীপের রাসের।
নবদ্বীপের রাস
চৈতন্য পরবর্তী সময়ে, বাঙালি বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাব কমতে থাকল ক্রমশ। মায়াপুরে ইস্কন-যুগের আগে পর্যন্ত প্রভাব খর্ব হয় সেখানেও। শান্ত, স্নিগ্ধ কীর্তনের দুর্বলতার ফাঁকে জায়গা করতে শুরু করে শক্তির আরাধনা। তন্ত্রের মায়াজাল। ক্রমশ জায়গা পাকা করেন শক্তির উপাসকরা। ঠিক এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে চৈতন্যদেবের কাছের অথচ শাক্তপন্থী হিসেবে উঠে আসেন কৃষ্ণনন্দ আগমবাগিশ। যাঁকে বলা হয়, বর্তমানের প্রচলিত কালী মূর্তির অবয়বের সৃষ্টিকর্তা। তাঁর হাত ধরে খানিকটা মিলতে থাকে বৈষ্ণব এবং শাক্ত। যদিও এর আগে থেকেই শুরু হয়েছে রাস উৎসব পালন।
এর সঙ্গেই ক্রমশ উৎসবের আবহে জাঁকজমক বাড়তে থাকে নবদ্বীপের। নানা বিগ্রহের ভিন্নতা এবং তেত্রিশ কোটি দেবতার রূপকে কেন্দ্র করে অন্য মাত্রা পেতে শুরু করে নবদ্বীপের রাস। আর এর সঙ্গেই খানিকটা খর্ব হয় রাসের বৈষ্ণব প্রভাব।
শান্তিপুরের রাস
নবদ্বীপের না শান্তিপুরের রাস উৎসব, কে বেশি পুরনো এ নিয়ে নিশ্চিত তথ্য না পাওয়া গেলেও একথা বলা হয় রাসের আক্ষরিক পালন শুরু হয় এই শহর থেকেই। যেখানে মূলত, শাক্তের প্রভাবে অতিষ্ঠ হওয়া বৈষ্ণবদের অনেকের আগমন ঘটেছিল একটা সময়। আর সেই সূত্রেই উৎসবের ভিন্নতা ঘটে এখানেও। বলা হয়, শিবের রূপ অদ্বৈতাচর্যের হাত ধরে প্রথম রাস পালিত হয় শান্তিপুরেই। যদিও নবদ্বীপ আবহে এখানে বদলেছে উৎসব পালনের ধরন। অষ্টসখী, রাধাকৃষ্ণের মূর্তির শোভাযাত্রার আবহে শান্তিপুর এখন মাতায় 'ভাঙা-রাস'।
শান্তিপুরের ভাঙা-রাস
অদ্বৈতাচর্যের পৌত্র মথুরেশ গোস্বামীর মৃত্যুর পর চুরি যায় তাঁর পাওয়া সেই রাধারমণ জিউয়ের বিগ্রহ। শোরগোল পড়ে তারপর। বহু খোঁজাখুঁজির পর ওই এলাকারই দিগনগরের একটি বিল থেকে উদ্ধার হয় সেই খোয়া যাওয়া বিগ্রহ।
এই ঘটনার পরে প্রয়াত মথুরেশের পরিবারের সদস্যদরা ভাবেন, শ্রীকৃষ্ণ এখানে একা রয়েছেন বলে তাঁর মন খারাপ। আর এই ভাবনার পরেই ওই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয় রাধামূর্তির। রাসের সময় এই প্রতিষ্ঠা হয় মূর্তি। দাবি ওঠে, এই যুগলমূর্তি শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেখানো হোক শহরের বাসিন্দাদের। মূলত শান্তিপুরের খাঁ বাড়ির উদ্যোগেই শুরু হয় শোভাযাত্রা। সেই থেকেই পালন হচ্ছে ভাঙা রাস।
রাস-কথায় পুঁথি সংযোগ
নবদ্বীপের শাক্ত-রাস বিষয়ে প্রথম আলোকপাত করেন গিরীশচন্দ্র বসু। ১৮৫৩-১৮৬০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ যিনি নবদ্বীপ-শান্তিপুর ও কৃষ্ণনগরের পুলিশ আধিকারিক (তৎকালীন সময়ের দারোগা) ছিলেন। তার রচিত বই 'সেকালের দারোগা কাহিনি' প্রকাশিত হয়, ১৮৮৮ সালে। নবদ্বীপের ভৌগোলিক অবস্থান-সহ সমাজ-সংস্কৃতিমূলক বিবিধ তথ্যের ভিড়েও নবদ্বীপের রাস সম্পর্কে তিনি লিখেছেন,
"রাস-পর্বে শান্তিপুরে যেমন রঙ্গতামাসা এবং বহুলোকের সমাগম হয়, নবদ্বীপেও এই পূর্ণিমায় পটপূজা উপলক্ষে সেইরূপ সমারোহ হইয়া থাকে। নবদ্বীপের পটপূজা অতি প্রসিদ্ধ ব্যাপার। নামে পটপূজা কিন্তু বাস্তবিক ইহা নানাবিধ প্রতিমার পূজা। দশভূজা, বিন্ধ্যবাসিনী, কালী, জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা; প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি গঠিত হয়। নদীয়া, বুইচপাড়া ও তেঘরিয়ার প্রায় প্রত্যেক পল্লীতেই এক একখানি করিয়া প্রতিমা হয়। প্রতিমাগুলি অত্যন্ত হালকা এমনকী ৫-৬ জন মজুরে তাহা স্কন্ধে করিয়া নাচাইতে পারে।"
গিরীশচন্দ্র বসুর বর্ণনায় উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নবদ্বীপের শাক্ত রাস উৎসবের একটি ধারণা পাওয়া যায়। বর্তমানে লুপ্ত, একদা পুরাণগঞ্জ এলাকায় দেবী বিন্ধ্যবাসিনী পূজিতা হতেন। এখানে রাধীকালুর ভিটেয় লছমনদাস নামে এক জনৈক শ্রীবাসঅঙ্গন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে জানা যায়। তিনি তোতা রামদাস বাবাজির শিষ্যও ছিলেন।
১৮৫৩-৬০ খ্রিস্টাব্দে গিরীশচন্দ্র বসু পুরাণগঞ্জকে কাছ থেকে দেখেছিলেন। যদিও এর পরেই শ্রীবাসঅঙ্গন গঙ্গাগর্ভে নিমজ্জিত হয়। এরপর ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে পুনরায় বর্তমান স্থানে স্থাপিত হয় ওই অঙ্গন। ১৮৬০-৭০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সংঘটিত প্রবল বন্যা বা ভূমিকম্পে পুরাণগঞ্জ ধ্বংস হয়েছিল বলে অনুমান করেন ঐতিহাসিকরা।
আবার বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা যায়, ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দে প্রবল বন্যা হয়েছিল ওই অঞ্চলে। সম্ভবত এই বন্যাতেই পুরাণগঞ্জ গঙ্গাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর এখানকার বাসিন্দারা বর্তমানের শ্রীবাসঅঙ্গন পাড়ায় উঠে আসেন। এরপর থেকে পুরাণগঞ্জের বিন্ধ্যবাসিনী দেবী, শ্রীবাসঅঙ্গন পাড়ায় পূজিতা হতে থাকেন। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দলে এই পুজো ভাগ হয়ে যায়! একটি গোষ্ঠী রামসীতা পাড়ায় খড়ের গোলা বিন্ধ্যবাসিনী প্রতিষ্ঠা করে। অপরটি যোগনাথ তলায় গৌরাঙ্গিনী নামে প্রতিষ্ঠা করে দেবীকে।
আবার এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য কান্তিচন্দ্র রাঢ়ির বিষয়টিও। নবদ্বীপ গবেষক কান্তিচন্দ্র রাঢ়ি রাস প্রসঙ্গে একাধিক তত্ত্বের অবতারণা করেন। তাঁর 'নবদ্বীপ মহিমা' বইয়ে তিনি লিখছেন,
"বহুদিন হইতে নবদ্বীপে রাসপূর্ণিমার বারইয়ারী পূজা হইয়া থাকে। ঐ সময়ে আদ্যাশক্তি ভগবতী দেবীর নানামূর্তি পূজিত হইয়া থাকে এবং পূজার পরের দিবস ঐ প্রতিমাসমূহ মহারাজকে দেখাইবার নিমিত্ত পোড়া-মা তলায় সোৎসাহে আনীত হইত। মহারাজ ঐসব মুর্তির গঠন-নৈপুণ্য, চিত্রের বিচিত্রতা, সাজের পরিপাট্য ইত্যাদি পরীক্ষা করিতেন এবং যে শিল্পী যে বিষয়ে শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হইতেন, তিনি যথোচিত পারিতোষিক পাইতেন।"
এখানে উল্লিখিত মহারাজ সম্ভবত গিরীশচন্দ্র। কারণ হিসেবে বলা হয়, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলে বারোয়ারি পুজোর প্রচলন ছিল না নবদ্বীপের বা অন্যান্য জায়গার একটা বড় অংশ জুড়ে।
আরও পড়ুন- বীভৎসতাকে এভাবেও আঁকা যায়! কেন আজও যুদ্ধবিরোধী সেরা শিল্প পিকাসোর ‘গুয়ের্নিকা’
নবদ্বীপের বর্তমান রাস
চক্ররাস
শ্রীচৈতন্যদেবের বিলীন-তত্ত্ব প্রচারিত হওয়ার পরেই বৈষ্ণব ধর্মে নানা গোষ্ঠীর উদ্ভব এবং তার মধ্যে বিভেদ দেখা দেয় বেশি। মূলত, রাসযাত্রা বলতে আগে পটুয়াদের তৈরি যে বড় বড় পট প্রদর্শিত হত, তা পরিবর্তন হয়েছে। খুব কম সংখ্যক হলেও বড় কাঠের চাকার মাঝে অষ্টসখী মূর্তি বেষ্টিত রাধাকৃষ্ণকে রেখে, চাকাটিকে আস্তে আস্তে ঘোরানো হত। আর এই সূত্রকে ধরেই রাসের এই ধরনকে বলা হয় চক্ররাস। যা নবদ্বীপে এখনও দেখা যায়। বহর কমেছে, তবে দেখা যায়।
নবদ্বীপের শাক্ত-রাস
নবদ্বীপের রাস উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে বেড়েছে শাক্ত দেব-দেবীদের রমরমা। ক্রমশ এগিয়ে গিয়েছে একাধিক শক্তির দেবদেবীর প্রাধান্য। আর ঠিক এই অবস্থানেই নবদ্বীপে রাসেও পূজিতা হন বড় শ্যামা, এলানিয়া, ভদ্রকালীর মতো দেবীর ভিন্ন ভিন্ন রূপ। যা মূলত কৃষ্ণ বা বৈষ্ণবপন্থী মানুষের সঙ্গে মেলে না!
আবার শান্তিপুরেই প্রায় আলাদা। খুব একটা শাক্তের প্রভাব না থাকলেও এখানে বজায় রয়েছে ঐতিহ্য। ভাঙা রাসের আবহে এখানে কৃষ্ণপ্রেমে এখনও মেতে ওঠেন মানুষ।
সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যপর্ব থেকে যে উৎসব পালিত হয়ে আসছে বলা দাবি করা হয়, এর ভিন্নতাও রয়েছে বিরাট। নবদ্বীপ এবং শান্তিপুরে মূলত পটপ্রদর্শনের মধ্যেই আবর্তিত ছিল রাস। কালক্রমে তা পরিবর্তিত হয়েছে।
পট প্রদর্শন
পটচিত্রের প্রদর্শন ছিল এই রাসের আদি ইতিহাস। বিভিন্ন পটে আঁকা বিগ্রহ বাড়ির বাইরে রেখে চলত একাজ। ক্রমশ রীতির দোলাচলে নিয়মমুক্তি ঘটেছে। আর তখন থেকেই প্রশ্ন উঠেছে কেন প্রকাশ্যে আসবে না এই উৎসব! আর এই দোলাচলেই বাড়ির পুজো থেকে সর্বজনীন হয়ে উঠেছে রাস উৎসব।
নবদ্বীপে রাস পালন বেড়েছে ক্রমশ। দুর্গাপুজোর পর থেকেই শুরু হয় রাসের প্রতিমা তৈরির কাঠামো পুজো। উৎসবের আমেজ শুরু হয় তখন থেকেই।
নবদ্বীপের মূর্তি বিশেষত্ব
চৈতন্যভূমে শাক্তরাস পালনে বিরাট ভূমিকা পালন করে মূর্তি। চালচিত্র থেকে নকশা, সব ক্ষেত্রেই এখনও ইতিহাস ধরে রেখেছে এই মূর্তির বিশেষত্ব। যা দেখতে ভিড় জমে সাধারণের। সামগ্রিকতার দিক থেকে নবদ্বীপ এবং শান্তিপুর দু'টি ভিন্ন জনপদ হলেও বৈষ্ণব এবং শাক্তর দোলাচলে একাধিক ইতিহাসের বাহক হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ওরাও। যাদের ছত্রে ছত্রে আজও প্রতি মুহূর্তে আবর্তিত হচ্ছে ঐতিহ্য। আর এখানেই বিশেষ হয়েছে নবদ্বীপ, সঙ্গে রাসের শান্তিপুরও।