ব্যস্ততার সঙ্গে বেজায় আড়ি, ১ কিমি চলতে লাগে কয়েক ঘণ্টা! বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতির প্রাণী কারা?
Slowest Animals In The World : শ্লথ থেকে শুরু করে শামুক, কচ্ছপ থেকে স্লাগ ইত্যাদি প্রাণীরা রয়েছে এই তালিকায়, বিস্তারিত জেনে নিন এই ধীর গতির প্রাণীদের সম্পর্কে
এই ব্যস্ত জীবনের সঙ্গে তাদের খুব আড়ি! কোনও তাড়াহুড়ো নেই। ছোটবেলায় পড়া সেই কচ্ছপ আর খরগোশের গপতা মনে পড়ে? অবশ্য সে গল্পে জিতে গিয়েছিল ধীর মন্থর গতির কচ্ছপটিই। তবুও সেখানে জীবনের গতির তফাৎটা ছিল স্পষ্ট। বিশ্বের এমন অনেক প্রাণীই রয়েছে যাদের এক কিলোমিটার পথ চলতে লেগে যায় প্রায় কয়েকদিন! শ্লথ থেকে শুরু করে শামুক, কচ্ছপ থেকে স্লাগ ইত্যাদি প্রাণীরা রয়েছে এই তালিকায়। বিশ্বে তারা পরিচিত এই ধীর গতির জন্যই। আসুন এক নজরে চিনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে ধীর গতি সম্পন্ন কিছু প্রাণীদের।
শ্লথ - নাম ‘শ্লথ’। গতিতেও। ইংরেজি sloth কথাটি এসেছে slouthe থেকে যার অর্থ অলস বা ধীর। এই বিশেষ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির নামকরণ করা হয় এর এমন ধীর গতির জন্যই। বিশ্বের সবচেয়ে ধীরগতির স্তন্যপায়ী প্রাণী এটিই। স্লথদের পূর্বপুরুষরা ছিল প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী যার আকার একটি প্রমাণ আকারের হাতির চেয়েও বড় ছিল । ছয় প্রকার শ্লথকে দুটো শ্রেণীতে ভাগ করা হয় দুই আঙুল বিশিষ্ট শ্লথ এবং তিন আঙুল বিশিষ্ট শ্লথ । তবে বেশির ভাগ শ্লথের পায়ে তিনটি করে আঙুল দেখা যায়। তবে এদের একটি বিশেষ দিক হল, স্থলভাগে এতো ধীরে চললেও এর প্রায় তিন গুণ বেশি গতিতে জলে দিব্যি সাঁতার কাটতে পারে এরা। এমনকী হৃদযন্ত্রের গতি স্বাভাবিকের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশে নামিয়ে এনে জলের নীচে প্রায় ৪০ মিনিট পর্যন্ত দমবন্ধ করে রাখতেও সক্ষম এরা।
গার্ডেন স্নেল - গার্ডেন স্নেলের প্রকৃত বাংলা করলে দাঁড়ায় বাগানের শামুক। এগুলি হল Stylommatophora ক্রমের Helicidae পরিবারের স্থল শামুক। এই শামুকগুলি আমাদের অতি পরিচিত, প্রায়ই পুরনো বাড়ির আনাচেকানাচে দেখা যায় এদের। এরা খুব ধীরগতির প্রাণী। প্রতি সেকেন্ডে ১.৩ সেন্টিমিটার গতিতে চলে। সারা শরীরে কোনও হাড় নেই এদের। পায়ের পেশী সংকোচনের করে দেহ নড়াচড়া করে। পাশাপাশি ঘর্ষণ প্রতিরোধ করতে এবং তাদের পথকে লুব্রিকেট করতে শ্লেষ্মাও নির্গত করে।
স্টার ফিশ - স্টারফিশগুলি Asteroidea এবং Kingdom Animalia শ্রেণীর অন্তর্গত। স্টারফিশগুলি সিস্টার নামেও পরিচিত। তাদের দেহের আকৃতি তারার মতো বলে এমন নামকরণ। মোটকথা, এই অ্যাপেন্ডেজে নিচের দিকে অনেক টিউব ফুট থাকে কিন্তু উপরে শক্ত। তাদের শক্ত শরীরের নীচে অসংখ্য টিউবফিট থাকা সত্ত্বেও, তারা মাছ খুব দ্রুত নড়াচড়া করতে পারে না। তারামাছ প্রতি মিনিটে এক গজ গতিতে চলে। তারা এতই ধীর যে মাঝে মাঝে তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য সমুদ্রের স্রোত ব্যবহার করতে হয়।
জায়েন্ট টরটয়িস - এই প্রাণীগুলি প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটারের বেশি চলাচল করতে পারে না। এমনিতেই কচ্ছপ ধীর গতিতে চলা প্রাণীর মধ্যে অন্যতম। তার ওপর এমন অতিকায় দেহের আকৃতির জন্য এই বিশেষ প্রজাতির ক্ষেত্রে গীতি আরও ধীর হয়ে যায়। মোটামুটি ১৫০ বছর পর্যন্ত বাঁচে এরা। তবে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বয়সী জীবিত কচ্ছপ হল জোনাথন, বয়স ১৬০ বছরেরও বেশি। দৈত্যাকার এই কচ্ছপের দেহ খুব ভারী এবং তার সঙ্গে রয়েছে একটি খুব ভারী খোল। শুধু তাই নয় এরা প্রায় এক বছর পর্যন্ত কোনও রকম জল পান না করে অথবা খাবার না খেয়ে দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
লরিস - ধীরগতির এই প্রাণীগুলি ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরগতির। বিষয়টা অবাক লাগলেও সত্যি। আসলে এরা শিকার করার জন্য এমন গতিতে চলাফেরা করে। স্লো লরিসগুলি এতটাই ধীরে চলে যে এদের সর্বোচ্চ গতিতে ঘন্টায় ১.৯ কিলোমিটারের বেশি ওঠে না। ধীর লরিস সম্পর্কে আরেকটি অনন্য তথ্য হল যে, কিছু দেশে স্লো লরিসকে পোষা প্রাণী হিসাবে রাখা বেআইনি কারণ তাদের কামড় অত্যন্ত বেদনাদায়ক। শুধু তাই নয়, এর জেরে মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, এমনকী তা কিছু সময় মৃত্যুর কারণও হতে পারে।
কোয়ালা - বিশ্বের ধীরগতির প্রাণীদের মধ্যে একটি হল কোয়ালা। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় মার্সুপিয়াল এরা।মূলত ইউক্যালিপটাস পাতা খেয়ে জীবনধারণ করে। মূলত দৈহিক পুষ্টির ঘাটতিই এদের ধীর গতির অন্যতম কারণ। দিনে অন্তত ২০ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমাতে পারে এরা। যদিও নিজেদের জীবনধারণের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রয়োজনে অথবা পর্বত আরোহণ করার সময় এরা বেশ গতি নিতে সক্ষম। এমন ধীর গতির প্রাণী হওয়া সত্ত্বেও, কোয়ালারা তাদের সুন্দর এবং আদুরে চেহারার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রিয় এবং অস্ট্রেলিয়ার অনন্য বন্যপ্রাণীর একটি আইকনিক প্রতীক হয়ে উঠেছে।
মানাতি - বিশ্বের ধীরগতির স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে একটি হল মানাতি। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার উপকূল বরাবর উষ্ণ, অগভীর সমুদ্র, সেইসাথে পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কিছু অঞ্চল এই প্রাণীদের মূল আবাসস্থল। এরা গাছপালা খায়। দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ ফুট এবং দেহের ওজন ১০০০ পাউন্ডের বেশি হয় এদের। একটি বিশাল গোলাকার দেহ এবং সমতল লেজ রয়েছে এদের। তাদের এমন ব্যতিক্রমী আকার থাকা সত্বেও তারা বিশেষ ভাবে পরিচিত এই ধীর এবং মন্থর গতির জন্য। এই প্রাণীগুলি বর্তমানে পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের হয়ে উঠেছে।