জিসম, পহেলি থেকে শুরু করে RRR, কিরাবাণীর সুরের জাদুতে যেভাবে মুগ্ধ হয়েছে দেশ

RRR M. M. Keeravani: কিরাবাণীর এটি প্রথম গোল্ডেন গ্লোব জয় তো বটেই, পাশাপাশি উল্লেখযোগ, এটি এশিয়া মহাদেশের প্রথম গান যা এই সম্মান জিতেছে।

“This is Disgusting, This is Filthy.” সিনেমায় রামচরণ আর জুনিয়র এনটিআরকে নাচতে দেখে বলেছিলেন সেই ইংরেজ। সেই 'দেশি নাচ’ই বিদেশের বিখ্যাত সম্মান জিতে নিয়েছে। ৮০ তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে, RRR এর জয়ধ্বনি শুনেছে বিশ্ব। নিঃসন্দেহে ভারতীয় সিনেমার সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এস এস রাজামৌলি পরিচালিত চলচ্চিত্রটি গা থেকে 'দক্ষিণ ভারতীয়' প্রাদেশিকতা ঝেড়ে হয়ে উঠেছে ভারতীয় সিনেমা। RRR, দু'টি মূল বিভাগে মনোনীত হয়েছিল- মোশন পিকচারের সেরা গান এবং সেরা ইংরেজি ভিন্ন অন্য ভাষার চলচ্চিত্র। এর মধ্যে প্রথম বিভাগের গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতেছে ভারত এম এম কিরাবাণীর 'নাটু নাটু' গানের সৌজন্যে। স্ত্রী শ্রীভাল্লী, পরিচালক রাজামৌলি, রাম চরণ এবং জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গেই পুরস্কারের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কিরাবাণী। কোদুরি মারাকাথামনি কিরাবাণীর এটি প্রথম গোল্ডেন গ্লোব জয় তো বটেই, পাশাপাশি উল্লেখযোগ, এটি এশিয়া মহাদেশের প্রথম গান যা এই সম্মান জিতেছে।

সঙ্গীত পরিচালক কিরাবাণী এই গানটির এত জনপ্রিয়তার জন্য, এই সাফল্যের জন্য তাঁর খুড়তুতো ভাই রাজামৌলি, নাটু নাটু গানের দুই কণ্ঠশিল্পী রাহুল সিপলিগঞ্জ এবং কালভৈরব, কোরিওগ্রাফার প্রেম রক্ষিত এবং লেখক চন্দ্রবোসকে ধন্যবাদ জানান এবং স্ত্রী শ্রীভাল্লির কথা বারবার উল্লেখ করেন। কে এই এম এম কিরাবাণী? RRR সিনেমার গান 'নাটু নাটু'র নেপথ্যের এই গোল্ডেন গ্লোব জয়ী মানুষটির পরিচয় জানলে অবাক হতেই হয়। শুধু তেলগু বা তামির ভাষার গান নয়। হিন্দি সিনেমায় এমন এমন গান তৈরি করেছেন কিরাবাণী, যা দেশকে এখনও মুগ্ধ করে রেখেছে সুরের মায়ায়।

 

১৯৬১ সালের ৪ জুলাই। অন্ধ্রপ্রদেশের কোভভুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কিরাবাণী। সঙ্গীত রচয়িতা, প্লেব্যাক কণ্ঠশিল্পী এবং গীতিকার কিরাবাণী মূলত তেলগু চলচ্চিত্রে তাঁর কাজের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে তামিল, মালায়লাম, কন্নড় এবং হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রের জন্যও সঙ্গীত রচনা করেছেন তিনি। নিজের প্রায় তিন দশকের ক্যারিয়ারে বিভিন্ন ভাষায় ১৫০ টিরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয়ও করেছেন কিরাবাণী। তবে দেশ কিরাবাণীকে চিনেছে ২০১৫ সালে। ওই বছর বাহুবলী: দ্য বিগিনিং এবং ২০১৭-সালেরর বাহুবলী ২: দ্য কনক্লুশন কিরাবাণীকে বিশেষ মর্যাদা এনে দেয়। ২০২২ সালে RRR তাঁকে এনে দিল আন্তর্জাতিক খ্যাতিও! নিজের খুড়তুতো ভাই রাজামৌলির সঙ্গে তাঁর এই জুটিও সমানতালে বিখ্যাত হয়ে ওঠে।

আরও পড়ুন-অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় বসে ‘ম্যাজিক’ শুরু, যেভাবে তৈরি হল ‘নাটু নাটু’ গান

১৯৮০-র দশকের শেষের দিকে, এম এম কিরাবাণী সুরকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাঁর বড় কাজ ছিল ১৯৯০ সালের মানাসু মামাথা। ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন কিরাবাণী। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্ষণ ক্ষণম এবং অন্নমায়ার জন্য অসম্ভব গভীর এবং শান্ত সঙ্গীত রচনা করেছিলেন কিরাবাণী। এই সুরের জাদুতে আচ্ছন্ন ছিলেন দক্ষিণ ভারতীয় সঙ্গীত বোদ্ধারা। এর জন্য তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালকের জন্য মনোনীতও হন। ১৯৯১ সালে আজাগান-এর জন্য সেরা সঙ্গীত পরিচালকের তামিলনাড়ু রাজ্য চলচ্চিত্র সম্মান অর্জন করেন। সঙ্গীতকার কিরাবাণী বাহুবলী চলচ্চিত্রের জন্যও নন্দী এবং সিমা পুরস্কার পেয়েছেন।

এমএম কিরাবাণী ব্রহ্মাণ্ড নয়াগান, অন্তিম ফয়সলা, সব্যসাচী, এনটিআর: কাথানায়কুডু এবং বিজয়নের মতো চলচ্চিত্রগুলির সঙ্গীত পরিচালনাও করেছেন। কিরাবাণীর সুরে জনপ্রিয় হিন্দি গানগুলির কথা জানলেও স্তব্ধ হতে হয়। অজয় দেবগণ, পূজা ভাটের জখম, জন আব্রাহাম তারা শর্মার  সায়া, বিপাশা ও জনের জিসম, ক্রিমিনাল এবং ইস রাত কি সুবাহ নহির মতো বলিউডের চলচ্চিত্রের জন্যও সঙ্গীত রচনা করেছিলেন।

রাজামৌলির স্ত্রী এবং প্রাক্তন অভিনেত্রী ও কস্টিউম ডিজাইনার রমা রাজামৌলির বোন প্রযোজক শ্রীভাল্লীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এমএম কিরাবাণী। তাঁদের পুত্র কালভৈরবও একজন প্লেব্যাক কণ্ঠশিল্পী।

 

More Articles