ডায়মন্ড হারবারে নৌশাদের 'বিশ্বাসঘাতকতা'-র জবাব দিতে পারবেন বামেদের লড়াকু প্রতীক উর?
Pratikur Rahaman CPIM: ডায়মন্ড হারবার নির্বাচনী কেন্দ্রে দলের ঝকঝকে তরুণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম মুখ প্রতীক উরকে বেছে নিয়েছে বামেরা।
কেউ কথা রাখেনি। জোট করে লড়ার কথা থাকলেও, তৃণমূলের বিরোধিতা করার কথা থাকলেও কথা রাখেনি আইএসএফ। মাসখানেক ধরে ডায়মন্ড হারবার আসনে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়তে চেয়েও শেষ মুহূর্তে সরে গিয়েছেন আইএসএফ নেতা নৌশাদ সিদ্দিকি। সমালোচক-নিন্দুকরা বলছেন ওই আসনে তৃণমূলের সঙ্গে ভালোরকমের আর্থিক বোঝাপড়া করে নিয়েছে আইএসএফ। দুর্বল প্রার্থী দিয়ে তৃণমূলের পথ নিষ্কণ্টক করেছে। এদিকে বামেরা ভেবেছিলেন নৌশাদ যখন লড়বেনই, সংখ্যালঘু ভোটাধিক্য থাকা আসনে তারা আর প্রার্থী দেবেন না, আইএসএফের জয় তাঁদের জয়। কিন্তু আইএসএফ কথা রাখেনি।
ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ বিশেষ আসনে বামেদের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে তারা কারও সঙ্গে নেই। সিপিআই(এম)-ও বুঝিয়ে দিয়েছে হাই-প্রোফাইল ডায়মন্ড হারবার নির্বাচনী এলাকা চাইলেই জিতে নেওয়া যায় না। দলের ঝকঝকে তরুণ নেতাদের মধ্যে অন্যতম মুখকে বেছে নিয়েছে বামেরা। বর্তমান সাংসদ তথা তৃণমূল কংগ্রেসের দুই নম্বর নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে নেমেছেন প্রতীক উর রহমান। সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তিনি।
সিপিআইএমের নির্বাচির প্রতীকর উর রহমান ডায়মন্ড হারবারেরই স্থানীয় মানুষ। ৩৩ বছর বয়সি প্রতীক উর সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য এবং স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার (এসএফআই) জাতীয় সহ-সভাপতি। ডায়মন্ড হারবারের ফকির চাঁদ কলেজে পড়াশোনা প্রতীক উরের। বাবা-মা, ভাই, স্ত্রী এবং মেয়ের সঙ্গে ডায়মন্ড হারবারেই থাকেন তিনি। পরিবারের বাড়ি-ঘর নির্মাণের সামগ্রী সরবরাহের ব্যবসা রয়েছে।
আরও পড়ুন- যাদবপুরে সততা বনাম দুর্নীতি! সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে কতটা শক্তিশালী সৃজন ভট্টাচার্য?
আইএসএফ এখনও পর্যন্ত রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ১৪টির আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে নৌশাদ প্রার্থী না হওয়াতে মজনু লস্করকে ওই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেছে দল। প্রতীক উর বলছেন, কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয় তাঁর লড়াই। তাঁর লড়াই তৃণমূল এবং বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে। তবে প্রতীক উরও মনে করছেন, নৌশাদ এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ভালোই হতো কারণ মানুষ তাঁকে এই আসনে প্রত্যাশা করেছিল। তবে সেই মানুষদেরই বিশ্বাস ভেঙেছেন নৌশাদ। এখন মানুষের সমর্থন তাঁদের সঙ্গে।
বামফ্রন্ট, কংগ্রেস এবং আইএসএফ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে একসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সংযুক্ত মোর্চা গড়ে। সেই সময় বামেদের সমর্থকরাও এই সিদ্ধান্তে অখুশি হয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে এই জোটের হয়ে একমাত্র আসন জেতে আইএসএফ, ভাঙড়ে। তারপর থেকেই নানা মতপার্থক্য ঘটে, সেসবের সমাধান করতে ব্যর্থ হয় দুই দলই। তবে ডায়মন্ড হারবারে নিজের লড়াই নিয়ে প্রতীক উরের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট। প্রতীক উর জানিয়েছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি কৃষক বিরোধী। সারের দাম ক্রমেই বাড়ছে আর কৃষকরা ক্রমেই দরিদ্র হচ্ছেন। বামফ্রন্ট এই নীতির বিরুদ্ধে লড়বে।
এবারই নির্বাচনে অভিষেক নয় তাঁর, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে, ডায়মন্ড হারবার থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি। তৃণমূলের পান্নালাল হালদার এবং বিজেপির দীপক হালদারের পরে তৃতীয় স্থানে ছিলেন লড়াকু এই নেতা। ২০১১ সাল থেকে এসএফআই করছেন তিনি। অভিযোগ, বহুবার তৃণমূলের গুন্ডাদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন প্রতীক উর। তবে হিংসা দমাতে পারেনি তাঁকে। এবার লড়াই আরও কঠিন। লড়াই সরাসরি অভিষেকের বিরুদ্ধে। বামেদের এই আসনে হাল ফেরাতে পারবেন প্রতীক উর?