আধঘণ্টা আরজি করে অবাধ তাণ্ডব, ভাঙচুর! কোথায় ছিল কলকাতা পুলিশ?

RG Kar Rape Protest Vineet Goyal: সিপি বিনীত গোয়েল এই সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে বলেছেন, "আমরা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করিনি"।

মধ্যরাতে রাজ্যজুড়ে মেয়েদের রাত দখলের কর্মসূচি চলছে যখন, দুষ্কৃতীদের ব্যাপক তাণ্ডব চলল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কোলাপসিবল গেট ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালাল যারা তাদের সন্ধান চাইছে কলকাতা পুলিশ। ছবিতে গোল দাগ দিয়ে দাগিয়ে হামলায় জড়িতদের খুঁজছে কলকাতা পুলিশ। এবার এই 'সন্ধান চাই' দেখে যদি দুষ্কৃতীরা এলাকা ছেড়ে পালায় তাহলে কীভাবে কলকাতা পুলিশ অপরাধীদের ধরবে তা অবশ্য বড় প্রশ্ন।

বুধবার মধ্যরাতে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের আক্রমণে তছনছ হয়ে গিয়েছে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার, হাইব্রিড ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট, ওষুধের দোকান। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের মঞ্চেও ভাঙচুর চালানো হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, মধ্যরাতের জমায়েতের জন্য রাস্তায় গতকাল পুলিশ ছিল প্রচুর। আর অপরাধের স্থল হওয়াতে আরজি করে বেশিই পুলিশ থাকবে তা স্বাভাবিক। তাহলে যে আধঘণ্টা ধরে এই দুষ্কৃতীরা ব্যাপক ভাংচুর চালাল, সেই আধঘণ্টা কি পুলিশের তরফে ভাংচুর করতে ছাড় দেওয়া হলো তাদের? বলা হচ্ছে, ঘটনাস্থলে সীমিত সংখ্যক পুলিশকর্মী ছিলেন বলেই প্রাথমিকভাবে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে পারেননি তারা। কেন মধ্যরাতের কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও, আরজি করের সামনে জমায়েত থাকলেও কম পুলিশ ছিলেন? যখন দুষ্কৃতীদের কাজ প্রায় শেষ, তারপরে বিশাল পুলিশবাহিনী পৌঁছয়। র‌্যাফ নামে, কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটিয়ে ভিড়কে ছত্রভঙ্গ করা হয়।

হামলাকারীদের এলোপাথাড়ি হামলায় কলকাতা পুলিশের একাধিক গাড়ি ভেঙেছে। ডিসি নর্থ সহ ১৫ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন এই হামলাতে। মানিকতলা থানার অফিসারের মাথা ফেটে যায় এই হামলাতে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। গভীর রাতে তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন একেবারেই নিয়ন্ত্রণে।’’ সমস্ত আরজি করের চিত্রটাই বদলে দেওয়ার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত হামলাকারীদের টিকিটিও ধরা যায়নি।

আরও পড়ুন- পরিকল্পনা করেই রাত দখলের মধ্যে আরজি করে ব্যাপক ভাঙচুর? নেপথ্যে কারা?

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বুধবার রাত প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ একদল ব্যক্তি আরজি করের জরুরি বিভাগের বাইরে রড এবং লাঠি নিয়ে তাণ্ডব চালায়। জরুরি বিভাগের বাইরের কোলাপসিবল গেট ভেঙে উপড়ে ফেলা হয়। ভিতরে ঢুকে জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার, এইচসিসিইউ, সিসিইউ, ওষুধ দোকান চুরমার করে দেওয়া হয়। রোগীদের বেড, আসবাবপত্র ভাঙা হয়। এক তলার জরুরি বিভাগে কিছুই আর প্রায় অবশিষ্ট নেই। হাসপাতাল চত্বরে রাখা একের পর এক বাইকে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশের বসানো সমস্ত গার্ড রেল ফেলে দেওয়া হয়। তাণ্ডবের শেষ পর্যায়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশবাহিনী। সেখানে পুলিশকে লক্ষ্য করেও ইট ছোড়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরাই বলছেন, পুলিশ শুরুতে নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে, সুযোগ করে দিয়েছে দুষ্কৃতীদের। বিরোধীরা বলছেন, সুযোগ করে দিতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শাসকের তরফে। হঠাৎ এমন হামলা, তাঁর আরজি কর হাসপাতালেই, তাতেও দ্রুত পদক্ষেপ করছে না পুলিশ, প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলছেন,"এখানে যা হয়েছে তা ভুল প্রচারের জন্য হয়েছে। কলকাতা পুলিশ এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত।’’ আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় প্রথম থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মধ্যরাতের এই হামলাতে সেই প্রশ্ন যেন কোথাও বাস্তব হয়ে যাচ্ছে। সিপি বিনীত গোয়েল এই সমস্ত অভিযোগ নস্যাৎ করে বলেছেন, "আমরা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করিনি"।

পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বলেন, "কলকাতা পুলিশ কী করেনি? এই মামলায় সবকিছু করা হয়েছে। প্রমাণ সংগ্রহ করতে আমার কর্মীরা দিনরাত কাজ করেছেন। মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা পরিবারকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেছি। গুজব ছড়ানো হয়েছে যে, কোনও রাজনৈতিক মহাপাত্র এর সঙ্গে জড়িত। তিনি একজন ইন্টার্ন। যার বাবা-মা বিষয়টি ভেরিফাই করেছেন। ছোট জায়গা থেকে এসেছেন। ওঁর বাবা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। কোনও রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই তাঁদের। কেউ কেউ বলছেন, তিনি ওর বন্ধু। এটা দুর্ভাগ্যজনক। যা ঘটেছে তাতে আমি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। আমরা কোনও ভুল করিনি। আমরা কখনও বলিনি যে একজন ব্যক্তি যুক্ত আছেন। আমরা বলেছি, আমরা বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণের অপেক্ষায় আছি। সেটা সময় লাগে। অভিযুক্ত একই কথা বলে যাচ্ছেন। আমাদের কিছু সাপোর্ট করার নেই। কোনও গুজবের ওপর ভর করে কোনও পিজি ছাত্রকে গ্রেফতার করতে পারি না। আমি এটা করতে পারি না। এটা আমার বিবেক বিরুদ্ধে। আমি একটা বিষয় পরিষ্কার, যেটা ঠিক সেটাই আমরা করেছি। এবার সিবিআই তদন্ত করছে। ওরাও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করবে। আমরা সিবিআইকে সবরকম সাহায্য করব। আমরা পরিবারের সঙ্গে স্বচ্ছ থেকেছি। প্রত্যেকের সঙ্গে স্বচ্ছ থেকেছি। আমরা ছাত্রদের বলেছিলাম, আপনারা একটি কমিটি গড়ুন। যেটা আপনাদের সন্দেহ তা আমরা পরিষ্কার করব। মিথ্যা অপ্রপ্রচার চলছে অনেক। হাড় ভাঙা হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে তার বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই। এটা খুব দুর্ভাগ্যের বিষয়। আমরা কলকাতার মানুষের সঙ্গে আছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, এই ঘটনাটা ঘটা উচিত ছিল না। অন্তর থেকে বলছি, আমরা কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করিনি। সিবিআই যদি সেটা প্রমাণ করতে পারে...। আমরা দায়িত্বশীল বাহিনী। এভাবে প্রমাণ নষ্ট করতে পারি না।"

অন্যদিকে আরজি কর হাসপাতালে ১৪ তারিখ রাতের দুষ্কৃতী তাণ্ডবের প্রতিবাদে ১৬ আগস্ট এসইউসিআই(সি)-এর তরফে দলমত নির্বিশেষে জনসাধারণকে ১২ ঘন্টার সাধারণ ধর্মঘট পালন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, মাঝরাতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়েই সরকারি মদতপুষ্ট সমাজবিরোধীরা আরজিকর মেডিকেল কলেজে অবস্থানরত ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চটিও ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ডাক্তারদের উপর হামলা চালিয়েছে। আন্দোলনকারী ডাক্তারি ছাত্রদের উপরে এই হামলার প্রতিবাদে, আরজি করে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের দাবির সমর্থনে ১৫ আগস্ট হামলার সর্বত্র কালো ব্যাজ পরার এবং দলমত নির্বিশেষে পশ্চিমবঙ্গবাসীকে তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ১৬ আগস্ট ১২ ঘণ্টার সাধারণ ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানিয়েছে এসইউসিআই।

More Articles