অমৃতপাল সিং থেকে ইয়াসিন ভটকল, ভারতকে এড়াতে কেন নেপালেই আশ্রয় নেয় অপরাধীরা?
Amritpal Singh Khalistan Nepal : ১৮ মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে পুলিশ। কিন্তু এখনও তাঁর টিকি পাওয়া যায়নি।
পাঞ্জাব থেকে দিল্লি – বেশকিছু জায়গার সিসিটিভি ক্যামেরায় তাঁকে নাকি দেখা গিয়েছে কয়েকবার। কখনও স্বমেজাজে, কখনও ছদ্মবেশে। কিন্তু কোনওবারই পুলিশের নাগালের মধ্যে আসেননি তিনি। কথা হচ্ছে অমৃতপাল সিংকে নিয়ে। বিগত কয়েকদিনে এই নামটি অনেকবারই শুনে ফেলেছে দেশ। আশির দশকে খালিস্তানি আন্দোলনের পর ফের একবার ২০২৩-এ মাথাচাড়া দিয়েছে সেই বিষয়টি। আর সেই সমস্তকিছুর মূলে অমৃতপাল সিং। ১৮ মার্চ তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরেছে পুলিশ। কিন্তু এখনও তাঁর টিকি পাওয়া যায়নি।
এখনও অমৃতপাল সিংকে ঘিরে তল্লাশি অভিযান জারি রয়েছে। নিত্যনতুন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজও সামনে আসছে। পাঞ্জাবে অশান্তির আগুন জ্বালানোর জন্য ভারত সরকারের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই খালিস্তানি নেতা। কিন্তু সম্প্রতি উঠে এসেছে অন্য একটি তথ্য। গোয়েন্দাদের দাবি, অমৃতপাল সিং নাকি ভারত ছেড়ে পালিয়েছে! পুলিশের বিশাল ফৌজ তাঁকে গ্রেফতার করতে হানা দিতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই পালিয়েছেন অমৃতপাল। কিন্তু কোথায়? পুলিশ বলছে, আপাতত যা তথ্য আর গতিবিধির ধরন পাওয়া যাচ্ছে, তাতে নেপালের দিকেই আঙুল যাচ্ছে আরও বেশি করে। সেখানেই নাকি পালিয়ে গা-ঢাকা দিয়ে আছেন এই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ খালিস্তানি নেতা।
কাট টু ২০১৩ সাল। ভারতীয় সেনা ও গোয়েন্দা বিভাগের কাছে খবর আসে, নেপালের কোথাও একটা গা-ঢাকা দিয়ে আছে ইয়াসিন ভটকল। কে এই ইয়াসিন? জঙ্গি গোষ্ঠী ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের অন্যতম সদস্য, জঙ্গি এই ইয়াসিন ভটকল তখন ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় ওপরের দিকে ছিল। সেইসঙ্গে মুজাহিদিনের আরেক জঙ্গি আসাদুল্লাহ আখতারও তার সঙ্গেই লুকিয়ে রয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০১৩ – এই কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের পেছনে এই ইয়াসিন আর আসাদুল্লাহের নামই উঠে আসে। শুরু হয় অপারেশন। শেষমেশ নেপালের পোখরায় তাদের গ্রেফতার করা হয়।
২০১৩ সালেই লস্কর-ই-তইবার বোমা বিশেষজ্ঞ আব্দুল করিম তুন্ডাকে গ্রেফতার করা হয়। কোথা থেকে? সেই নেপাল থেকেই। এরপর পেরিয়ে গিয়েছে ১০টি বছর। এখনও অমৃতপাল সিংয়ের মতো ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেডদের পালানোর জায়গা সেই নেপালই। কেন বারবার অপরাধীদের সেফ জোন হিসেবে উঠে আসে এই দেশটি? ভারতীয় গোয়েন্দাদের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সবকিছুর মূলে রয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগ আইএসআই। বিশেষ করে নেপালের ভেতর তাদের যোগাযোগ খুব মজবুত। আর প্রতিবারই ভারত থেকে অপরাধীদের পালাতে, লুকিয়ে থাকতে এই আইএসআই-ই সাহায্য করে। আগের ঘটনার থেকে এমনই প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা।
ভারত-নেপালের আন্তর্জাতিক সীমায় পুলিশ ও সেনারা পাহারারত থাকলেও তাঁদের ফাঁকি দিয়েই চলে এই কাজ। আইএসআই না থাকলে এই কাজটি কঠিন হতো বলে মনে করেন সেনা অফিসাররা। আরও একটা ব্যাপার হল, ভারত থেকে নেপালে যেতে কোনও পাসপোর্ট লাগে না। উত্তরবঙ্গের পর্বতপ্রেমী পর্যটকরাও এরকম চট করেই নেপালের সীমানার গা ঘেঁষে ঘুরে চলে আসেন। তাহলে অমৃতপাল সিংয়ের পালানোতেও কি আইএসআইয়ের হাত রয়েছে? আপাতত সেই সন্দেহও উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। যদি এটা প্রমাণিত হয়, তাহলে পাঞ্জাবে অশান্তি তৈরির পেছনেও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার মদত রয়েছে? প্রশ্ন অনেক, উত্তর খোঁজারই চেষ্টা চলছে।