মুজিবের বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ! ৭৬ বছরের সংগঠন কেন নিষিদ্ধ করল সরকার?
Bangladesh Chhatra League Banned: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল।
বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির দাবির মুখে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিল কমিটি। সেই সময়সীমার আগেই বুধবার, ২৩ অক্টোবর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত জানায়। সরকার বলছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরে হাসিনা যে স্বৈরাচারী শাসন চালিয়েছেন তাতে বাংলাদেশের ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নসহ নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এই সম্পর্কে প্রামাণ্য তথ্যও আছে। তাই ছাত্রলীগ দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।
অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, গত ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে নিপীড়ন করেছে। নিরপরাধ, নিরস্ত্র পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষদের হত্যা করেছে। জুলাই–অগাস্ট মাসে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে হাজারে হাজারে মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। শুধু তাই নয়, গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও হাসিনার দেশত্যাগের পরও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেছে আর দেশে সন্ত্রাসবাদী কাজকর্মের পরিমাণ বাড়িয়েছে। তাই বাংলাদেশ সরকার ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর আওতায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
আরও পড়ুন- সেনার হাতে বড় ক্ষমতা দিল ইউনূস সরকার! কী কী করতে পারে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী?
১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালির অধিকার রক্ষার আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা ছিল ছাত্রলীগেরই। তবে সাম্প্রতিককালে শাসকদলের ছত্রছায়ায় থেকে ছাত্রলীগও 'গুন্ডাবাহিনী' হয়ে উঠেছিল বলেই মত অনেকের। অভিযোগ, হাসিনা সরকার ছাত্রলীগের কর্মীদের দমনপীড়ন চালাতে ব্যবহার করেছে। ছাত্রলীগের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে।
তোলাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মীরাই নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করে আবরার ফাহাদ নামে এক পড়ুয়াকে। ওই হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড আর ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছিল আদালত। ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় বিশ্বজিৎ দাস নামে এক ব্যক্তিকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাতেও মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা হয়। ওই একই বছর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদকে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
আরও পড়ুন- পেট ভরে খাইয়ে মানসিক ভারসাম্যহীনকে খুন ছাত্রদের! এটাই কি নতুন বাংলাদেশ?
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে প্রথম ২০১৮ সালে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। ২০২৪ সালে আবারও কোটাসংস্কার আন্দোলন শুরু হলে পড়ুয়াদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আত্মগোপন করেন ছাত্রলীগের নেতারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছিল কেন? বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছিলেন, ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন বাংলাদেশে কোনওভাবেই সম্ভব নয়। হাসিনার শাসনামলে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রলীগ যে ধরনের নৃশংসতা চালিয়েছে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে যেভাবে নির্যাতনকেন্দ্র বানিয়েছে, সেখানে তাদের ন্যূনতম পুনর্বাসনের সুযোগ নেই। হাসনাত বলছেন, জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার জন্য যত ধরনের মাপকাঠি প্রয়োজন, সব ক'টিই ছাত্রলীগের রয়েছে।

Whatsapp
