কেন তমলুক আসন থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রার্থী করবে বিজেপি?
Justice Abhijit Ganguly Tamluk: কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, ভগবানপুর আর খেজুরি বিধানসভা ইতিমধ্যেই বিজেপির দখলে।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সাম্প্রতিককালে বাংলার সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ তাঁর মধ্যেই খুঁজে পেয়েছিল 'ত্রাতা'-কে। রাজ্যে শাসক তৃণমূলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিলেন অভিজিৎ। বঞ্চিত, ক্ষুব্ধ মানুষের হয়ে কথা বলার লোক পাওয়া গেছে, যিনি শাসককে ভয় পান না- এমনটাই বিশ্বাস করেছিল আম জনতা। সব ঠিক থাকলে মঙ্গলবার বিজেপিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবেন সেই বিচারপতিই। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে যাবেন। তৃণমূলে যে যাবেন না সে তো জানাই। সিপিএমের অনেকেই বাকি মানুষের মতো ‘মসিহা’ ভেবেছিলেন অভিজিৎকে। আসলে বিচারপতির ভাবগতিক দেখে তেমনটা মনে হওয়া অস্বাভাবিকও না। তবে বিভিন্ন সূত্রের খবর অনুযায়ী বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বিচারপতি এবং প্রার্থী হচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক কেন্দ্র থেকে। এই কেন্দ্রে এখন তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারীর পুত্র তথা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। মোক্ষম চাল বিজেপির, নিঃসন্দেহে। কিন্তু তমলুক থেকেই কেন?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, যে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের মনে আশা জুগিয়েছিলেন অভিজিৎ, সেই প্রার্থীদের একটি বিরাট অংশই পূর্ব মেদিনীপুরের। অনেকে আবার বলছেন, শুভেন্দুর দুই ভাইকেই, সৌমেন্দু এবং দিব্যেন্দুকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করার কথা বিজেপির। সৌমেন্দু কাঁথি থেকে দাঁড়াচ্ছেনও কিন্তু দিব্যেন্দু এখনও তৃণমূলেরই সাংসদ। তবে শাসকদলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক টলমলে। বিচারপতি অভিজিৎকে তমলুকের প্রার্থী না করলে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ তুলত তৃণমূল। আপাতত সেই সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে চাইছে বিজেপি।
আরও পড়ুন- কুণাল ঘোষের পরামর্শেই বিজেপিতে বিচারপতি অভিজিৎ?
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্তে কয়েকটি প্রশ্ন উঠছে স্বাভাবিকভাবেই। তিনি পেশাগতভাবে একজন বিচারপতি। হঠাৎ একদিন সকালে উঠে তিনি বিজেপি হয়ে গেলেন তাও নয়। কোনও রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি ব্যক্তির সমর্পণ বা সমর্থনের প্রক্রিয়া অনেকদিন ধরেই চলতে থাকে। এক্ষেত্রেও তেমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তাহলে প্রশ্ন ওঠে মাথায় ও মনে বিজেপির প্রতি সমর্থন নিয়ে এই রাজ্যে শাসকের দুর্নীতির বিচার করছিলেন তিনি? বিচারপতি আসনে বসা অবস্থায় তাহলে তাঁর সব বক্তব্য, সব সিদ্ধান্ত, সব রায় রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিতই ছিল। আসলে বিজেপির বিচারপতি ছিলেন অভিজিৎ?
অভিজিৎ এর আগে একাধিক ইঙ্গিত দিয়েছিলেন গেরুয়াপক্ষ সমর্থনের। বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা পুরসভার আইনজীবীর উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘দরকার পড়লে যোগী আদিত্যনাথের থেকে কিছু বুলডোজার ভাড়া করুন।’’ ইস্টার্ন কোল্ডফিল্ডের স্কুলের শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠায় অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুল কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করে বলেছিলেন, "স্কুল চালাতে না পারলে আদানিকে বেচে দিন।" বিজেপির হয়ে ভোটে লড়ে তিনি জিতলে বিজেপির বিধানসভা দখলের লড়াইটা সহজ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন- যোগী আদিত্যনাথ, আদানিই তবে ‘আদর্শ’ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের?
পূর্ব মেদিনীপুরে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকেই জয়ের ধারা শুরু হয়েছিল অধিকারী পরিবারের। সেবার তমলুক কেন্দ্রে সেই সময়ের তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী তৎকালীন সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। আর কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীও সিপিএমকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রে ফের শুভেন্দু অধিকারী সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলিকে হারিয়ে জেতেন। কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারীও জয়ী হন। এর প্রায় আড়াই বছর পর তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী সাংসদ পদ ছেড়ে বিধানসভায় লড়াই করার জন্য পদত্যাগ করায় উপনির্বাচনে তাঁর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী জয়ী হন। ২০১৯ সালের ভোটে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে দিব্যেন্দু অধিকারী জেতেন বিজেপির সিদ্ধার্থ নস্করকে হারিয়ে। আর কাঁথিতেও জেতেন শিশির অধিকারী।
কাঁথি উত্তর, কাঁথি দক্ষিণ, ভগবানপুর আর খেজুরি বিধানসভা ইতিমধ্যেই বিজেপির দখলে। কাঁথি লোকসভা আসনে বিজেপি সৌমেন্দু অধিকারীকে দাঁড় করাচ্ছে। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে নন্দীগ্রাম, হলদিয়া, ময়না বিধানসভা আছে বিজেপির দখলে। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তমলুক লোকসভা আসনে জিতলে বিধানসভা নির্বাচনে অনেকটা এগিয়ে যাবে বিজেপি। তমলুক কাঁথি ধরেই পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপি নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে চাইছে বলেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রার্থীকে বাছা, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।