বোরখা পরা মহিলা ভোটারদের বিশেষভাবে যাচাই! কেন এমন আর্জি বিজেপির?
Muslim Women Voter Delhi: ভিডিওতে দেখা যায়, বোরখা পরা মুসলিম মহিলাদের তাদের 'নিকাব' সরাতে বলছেন বিজেপি প্রার্থী।
দীর্ঘ সাত দফা ভোটের পাঁচ দফা সাঙ্গ। লোকসভা নির্বাচনের এই পাঁচ দফায়, ছাপ্পা ভোট বা ভুয়ো ভোটের বিক্ষিপ্ত খবর মিলেছে। তবে ভুয়ো ভোটার আটকাতে বিজেপির দিল্লি শাখা এক অদ্ভুত দাবি জানিয়েছে। সেই দাবি আবারও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে বিজেপির সমস্ত আশঙ্কা কাদের ঘিরে। সমস্ত অপরাধীমুখ কোন সম্প্রদায়ের বলেই বিজেপির বিশ্বাস। আসলে শাহিনবাগের ভূত এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে দিল্লি বিজেপিকে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিককে ডেকে বিজেপি দাবি করেছে, বোরখা পরে যে মহিলারা ভোট দিতে আসবেন, তাঁদের সঠিকভাবে যাচাই করতে হবে।
দিল্লি বিজেপির প্রতিনিধিদল, বিধায়ক অজয় মহাওয়ার এবং মোহন সিং বিস্ত, রাজ্য সম্পাদক কিষাণ শর্মা এবং আইনজীবী নীরজ গুপ্ত বুধবার দিল্লির মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে। বোরখা পরা মহিলা ভোটাররা ভোট দিতে এলে যাতে তাঁদের সঠিকভাবে যাচাই করা হয় সেই দাবিতে একটি স্মারকলিপি পেশ করেছে বিজেপির এই দল। দিল্লিতে ২৫ মে লোকসভা নির্বাচন।
এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব অজয় মহাওয়ার বলছেন, "যারা বোরখা বা মাস্ক পরে ভোট দিতে আসেন, তাদের সম্পূর্ণভাবে যাচাই করার পরেই ভোটদানের অনুমতি দেওয়া উচিত। একজন মহিলা আধিকারিক বা মহিলা পুলিশ অফিসাসের তাঁদের মুখ পরীক্ষা করা উচিত।"
মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দিল্লি বিজেপির প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্তও করেছেন যে, তিনি এই বিষয়ে সর্বোত্তম সম্ভাব্য আইনি বিকল্প বিবেচনা করবেন এবং যে কোনও ভুয়ো ভোট ঠেকাতে পদক্ষেপ করবেন।
আরও পড়ুন- আপনার-আমার টাকায় ‘মোদি কি গ্যারান্টি’ বিজ্ঞাপন! ভোটের প্রচারে কত কোটি খরচ জানেন?
একটি ভোটকেন্দ্রে হায়দরাবাদ লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী মাধবী লাথার মুসলিম মহিলা ভোটারদের পরিচয় যাচাই করার একটি ভিডিও প্রকাশের পরে বিতর্ক শুরু হয়। এই ঘটনা নিয়ে কথা শুরু হতেই দিল্লি বিজেপির এমন অভিনব দাবি। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, বোরখা পরা মুসলিম মহিলাদের তাদের 'নিকাব' সরাতে বলছেন বিজেপি প্রার্থী। ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশের পর নির্বাচন কমিশন মাধবী লাথার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে।
যে দেশের প্রধানমন্ত্রী খোদ বলেন কারা সন্ত্রাস ছড়ায় তা পোশাক দেখে বোঝা যায়, যে দেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন কংগ্রেসের লক্ষ্য যাদের বেশি বাচ্চা হয় তাঁদের মধ্যে দেশের সম্পত্তি বিলিয়ে দেওয়া সেই দেশের শাসকদল বিজেপি যে বেছে বেছে ভুয়ো ভোটার ঠেকাতে মুসলিম সম্প্রদায়কেই বিশানা করবে এ অস্বাভাবিক নয়। এই দিল্লিই ঘোল খাইয়ে দিয়েছিল বিজেপিকে। সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে শাহিনবাগ হয়ে উঠেছিল ভারতের বিক্ষোভের কেন্দ্র। শাহিনবাগ, দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির একটি মুসলিম পাড়া। এখানের বেশিরভার মানুষই শ্রমিক শ্রেণির। ২০১৯-২০ সালের শীতকালে এই শাহিনবাগের বাসিন্দারা, প্রধানত মহিলারা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় পথে নামেন।
তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলেছিল এই আন্দোলন। সারা দেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভের ঢেউ তুলেছিলেন শাহিনবাগের মহিলারাই, মুসলিম মহিলারাই। ২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সেই আন্দোলন থেমে যেতে বাধ্য হয় কিন্তু বিজেপির মন থেকে যে সেই ভয় যায়নি তা প্রমাণ করে দিল দিল্লি বিজেপি। মুসলিম মহিলারাই ভুয়ো ভোট দেন বোরখার আড়ালে? এমন মারাত্মক অভিযোগ তুলেও জননেতা হওয়ার দাবি কীভাবে করেন বিজেপির নেতা নরেন্দ্র মোদি?