গায়ের রং কালো, যে কারণে অশুভ মনে করা হয় এই ধরনের বিড়ালকে

Superstition of black cat : কেন অশুভ মনে করা হয় কালো বিড়ালকে? কীভাবে জাঁকিয়ে বসল এই অন্ধবিশ্বাস?

সংস্কার বিষয়টা সময় বিশেষে ‘কু’ যোগে এমন আকার ধারণ করে যে বিষম হয়ে ঠেকে। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে প্রভাবও ফেলে বাজে ভাবে। এরকমই একটা হল কালো বিড়াল। খুব প্রচলিত অন্ধবিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এহেন প্রাণীটি। ভাবা যায়, যে বিড়াল নিয়ে মানুষের এত মাতামাতি, এত আদর সেই বিড়ালের গায়ের রং যদি হয় কালো, তবেই মুশকিল। আর কোনও ভাবে যদি সেই কালো বিড়াল রাস্তা পারাপার করে বসে তাহলে তো আর কথাই নেই, ভয়ানক বিপদের আশঙ্কায় মাথায় হাত পড়ে পথচারী থেকে শুরু করে গাড়ির চালকদেরও।

ধরা যাক, খুব তাড়াহুড়োর মধ্যে আছেন আপনি, বাড়ি থেকে বের হতে দেরি হয়ে গিয়েছে, তাড়াতাড়ি পৌঁছতে না পারলে ট্রেনটা মিস করবেন, ঠিক এরকম সময় রাস্তা দিয়ে দেখলেন আপনার ঠিক সামনে দিয়ে একটি কালো বিড়াল রাস্তার এপার থেকে রাস্তার ওপার করে গেল। ব্যাস আপনি পড়লেন ফাপরে আপনার সংস্কার আপনাকে হয়তো বাধ্য করল কিছুক্ষণ সময় ব্যয় করে অপেক্ষা করে তারপর রাস্তা চলতে কিন্তু এর জেরে নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে গেল স্টেশন, আর আপনারও পৌঁছনো হল না গন্তব্যে। আর সব দোষ গিয়ে পড়ল নিরীহ ওই বিড়ালটির ওপর!

আরও পড়ুন - ‘ভূত’কে খুন করার অপরাধে আদালতে মামলা! ভারতের বিচিত্রতম শুনানির নেপথ্যে ছিল যে সত্য…

জন্ম থেকেই পোড়া কপাল কালো বিড়ালের। একটা নিরীহ প্রাণীকে নিয়ে এমন ভয়, এমন কুসংস্কার কীভাবে তৈরি হল, তার উত্তর খুঁজতে গেলে ফিরে যেতে হবে অনেকগুলো বছর আগে। ৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দের ঘটনা, সেই সময়ে ইজিপ্ট- এ এক ধরনের বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। মনে করা হতো, কালো বিড়ালের মধ্যে আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে। পুজো করা হতো বিড়ালকে। সেই থেকেই মানুষের মনের মধ্যে বিড়াল নিয়ে কিছুটা ভয়, কিছুটা ভৌতিক, কিছুটা বিশ্বাস সব মিলিয়ে একটা রহস্যের জট পাকাতে শুরু করে। ১৫৬০ সাল নাগাদ ইউরোপের বিভিন্ন উপকথার পৃষ্ঠা ওল্টালেও দেখা যায়, কালো বিড়ালকে অশুভ হিসাবে দেখানোর চল। সেই থেকেই মানুষের মধ্যে বিড়াল নিয়ে একটি ভ্রান্ত ধারণা কাজ করতে থাকে, কাজ করতে থাকে সুপ্ত ভয়। যা কালক্রমে অপভ্রংশ হতে হতে বিড়ালের রাস্তা কাটায় বিপদে এসে ঠেকেছে। এখানেই শেষ নয়, জ্যোতিষ শাস্ত্রে রাহুর বাহন হিসেবে দেখা হয় কালো বিড়ালকে। সেই থেকেই আরও ভয় গেঁড়ে বসে মনে।

তবে উপরিউক্ত বিষয়গুলি ছাড়াও, বিড়াল নিয়ে একটি প্রাচীন গল্প শোনা যায়। এককালে রাস্তায় যখন মোটর গাড়ির বদলে গরুর গাড়ির চল তখন, গরুর সামনে দিয়ে কালো বিড়াল রাস্তা পার করে গেলেই গরুটি বিভ্রান্ত হয়ে পড়ত। এর ফলে আসন্ন বিপদের আশঙ্কা এড়াতে গরুর গাড়ির চালক কিছুক্ষণ গাড়ি থামিয়ে আবার তাড়া দিতেন গরুকে। তবে সেই যুগের ইতি ঘটেছে অনেক দিনই, এখন আর বিড়ালের পারাপার চালককে বিভ্রান্ত করে না কিন্তু মানুষের মধ্যে সেই চল আজ বিশ্বাস থেকে অপভ্রংশ হয়ে অন্ধবিশ্বাস থুড়ি কুসংস্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বিড়াল রাস্তা পার করার সময় এত দ্রুততার সঙ্গে যায়, যে কোনও মুহূর্তে বড় কোন অ্যাক্সিডেন্টের আশঙ্কা থাকে যার জেরে বিড়ালটির মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে, তাই সেই ভয় এড়াতেও আগেকার দিনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার একটা রেওয়াজ ছিল। তবে এর কোনওটার সঙ্গেই মানবজীবনে ভয়ানক কোনও কালো ছায়া নেমে আসার সম্ভাবনা নেই। তাই সেই বিশ্বাস একেবারেই ভ্রান্ত, কুসংস্কার মাত্র। তাই খামোখা গায়ের রং কালো বলে মুখ ঘুরিয়ে নেবেন না, ওরা প্রকৃতই নির্দোষ।

More Articles