আরজি কর: কেন এগিয়ে এলেন চিফ জাস্টিস চন্দ্রচূড়? কখন হস্তক্ষেপ করে সুপ্রিম কোর্ট?

R G Kar Doctor Rape and Murder Case: মঙ্গলবার কোর্ট খুললেই এই মামলা শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ডিওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির এই বেঞ্চে রয়েছেন - বিচারপতি জেবি পাদ্রিয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র।

আরজি কর কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের ভাষায় যাকে বলে সুয়োমোটো মামলা। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সেই মামলা দায়ের করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই ঘটনার তদন্তভার উঠেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। হাইকোর্টের আইনজীবী জানান, সুপ্রিম কোর্ট নিজে থেকে এই মামলায় পদক্ষেপ করেছে। ফলত শীর্ষ আদালতে সিবিআই তদন্ত-সহ আরজি কর কাণ্ডের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শুনানি হবে। রবিবার শীর্ষ‌ আদালতের প্রকাশিত কজলিস্ট অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবার আরজি কর কাণ্ডের শুনানি হবে।

সোমবার রাখি উপলক্ষে আদালত বন্ধ রয়েছে, মঙ্গলবার কোর্ট খুললেই এই মামলা শুনবে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। ডিওয়াই চন্দ্রচুড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির এই বেঞ্চে রয়েছেন - বিচারপতি জেবি পাদ্রিয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র। দুই আইনজীবী চিঠি লিখে শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতির কাছে নিজে থেকে এই মামলা গ্রহণের জন্য আবেদন করেছিল। 'In Re: Alleged Rape and Murder of trainee Doctor in RG kar Medical College Hospital, Kolkata and Related Issues' নামে রবিবার দুপুর ১টা নাগাদ মামলা দায়ের হয়েছে শীর্ষ আদালতে। কেন নিজে থেকে মামলায় হস্তক্ষেপ করল আদালত? কখন করা হয় এই সুয়োমোটো মামলা?

আরও পড়ুন: যৌনাঙ্গে ক্ষত, শরীরের ২৪ জায়গায় চোট! নারকীয় অত্যাচারের প্রমাণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে

দেখে নেওয়া যাক কোন কোন পরিস্থিতিতে সুয়ো মোটো মামলা দায়ের হতে পারে।

জনগণের সচেতনতা : যখন কোনো ঘটনা নিয়ে জনগণ অনেকটাই সচেতন হয়ে ওঠে এবং গুরুত্ব দেয়।
মৌলিক অধিকার : যখন সংবিধানে উল্লেখিত মৌলিক অধিকার খর্ব হয়।
অবিচার : আদালত গুরুতর অন্যায় বা অভিযোগ নিয়ে সচেতন হয়ে উঠলে।
আদালত অবমাননা : কোনো আদেশের পালন না করে যখন আদালতের অবমাননা করা হয়। আদালতের নির্দেশ না মানলে মামলার দিশা হারানোর সম্ভবনা থাকে।
বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা : আদালতের রায় সাংবিধানিক কিনা তা পর্যালোচনা করতেও এই পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
বেসামাল পরিস্থিতি : প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহমারি বা জাতীয় সঙ্কটের মত গুরুতর পরিস্থিতি সামাল দিতে এই ধরনের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হয়।

এই প্রথম নয়। অতীতেও এমন বহু সুয়ো মোটো বা স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হয়েছে সুপ্রিমকোর্টে। ২০২১ সালের একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ১০ বছরে সবচেয়ে বেশি সুয়ো মোটো মামলা হয়েছিল করোনা মহামারীর সময়। ১৯৯৪ সালে যমুনা নদীর দূষণ নিয়ে শীর্ষ আদালত সুয়ো মোটো মামলা করেছিল। দিল্লির বায়ু দূষণ নিয়েও এই মামলা পদক্ষেপ করেছিল। তামিলনাড়ুতে ২৫ জন বন্দিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হস্তক্ষেপ করেছিল। ১৯৯৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৬১% নির্দিষ্ট অপরাধের ঘটনা সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নিজে পদক্ষেপ করেছে। যা ২০১৫-২০২১ সালে কমে ১৪% হয়েছিল।

Why did Chief Justice DY Chandrachud intervene in the RG Kar rape and murder case

সেই তালিকায় এবার ঢুকে পড়ল আরজি করের চিকিৎসক খুন-ধর্ষণের মামলাও। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে তদন্ত কতদূর এগিয়েছে থেকে শুরু করে মহিলা নিরাপত্তার ব্যবস্থা সকল কিছুই তদন্ত করবে সুপ্রিম কোর্ট। ওই মামলায় দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে কলকাতা পুলিশের উপরে অনাস্থা প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। যার জেরে তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। আরজি করের ঘটনার তদন্ত করতে দিল্লি থেকে বিশেষ দল কলকাতায় এসেছে ইতিমধ্যেই। ঘটনার পরের দিনই আরজি কর কাণ্ডে অভিযুক্ত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সিসিটিভি ফুটেজে ওই ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। সেই ধৃত ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছে সিবিআইয়ের তদন্তকারী দল। কমিশনার জানিয়েছিলেন, ওই ব্যক্তি নাকি নিজে থেকে ফাঁসির শাস্তির কথা বলেছিলেন। তদন্তকারী দল জানার চেষ্টা করছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি নিজেই অন্যায়ের কথা স্বীকার করেছেন, নাকি এই ঘটনায় অন্য কেউ তাঁকে ব্যবহার করছে। ঘটনাস্থলে জোরদার তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে দুই দিন ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই। তবে এখনও পর্যন্ত নতুন করে কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। ইতিমধ্যে প্রকাশ্যে এসেছে নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।

আরও পড়ুন: আর জি কর কাণ্ড উপলক্ষ্য মাত্র, ক্ষোভের বারুদ জমতে দেখেও দেখেনি শাসক দল

অন্যদিকে, রবিবার মহিলা চিকিৎসকের বাবা - মা তথ্য লোপাটের অভিযোগ তুলেছেন। চিকিৎসকের নিয়মিত লেখা ডায়েরি সেমিনার রুমে পাওয়া গিয়েছিল। কলকাতা পুলিশ সেই ডায়েরি সিবিআইকে দিয়ে দিয়েছে। চিকিৎসকের বাবা-মায়ের দাবি, ডায়েরির ৩-৪ টি পাতা ছেড়া ছিল। তাঁর বাবা বলেছেন, নিজের জীবনের সব কিছুই নাকি তিনি এই ডায়েরিতে পুঙ্খানুপুঙ্খ লিখে রাখতেন। গোড়া থেকেই তথ্য লোপাটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা প্রাক্তন অধ্যক্ষ এবং কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে কাঠগড়ায় তুলছেন। এ ছাড়াও এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি খতিয়ে দেখবে আদালত।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে প্রথম থেকেই হাইকোর্টের প্রশ্নের মুখে পড়েছিল রাজ্য ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে 'পুরস্কৃত পদে' নিয়োগ করা হয়েছে বলে সমালোচনাও করেছিল হাই কোর্ট। আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে লাগাতার আন্দোলন, মিছিল চলছে। এই পরিস্থিতিতে নিজে থেকেই এই মামলাটিতে হস্তক্ষেপ করল সুপ্রিম কোর্ট। এখন এই পদক্ষেপের ফল কী হয় তার দিকেই তাকিয়ে গোটা দেশ।

More Articles