কেন অষ্টম আশ্চর্যের স্বীকৃতি দেওয়া হয় একে? যে রহস্য বয়ে বেড়াচ্ছে স্বয়ং রাবণের রাজপ্রাসাদ

Mysterious Ravana’s Palace : আজও রহস্য রয়ে গিয়েছে ১৫০০ বছরের পুরনো রাবণের রাজপ্রাসাদ নিয়ে, কীভাবে তৈরি হয় সে প্রাসাদ?

পুরাণের সঙ্গে বাস্তবের যোগাযোগ ঠিক কতটা সেই বিচার যথাযথ উত্তর দিতে পারে না ঠিকই, তবে ফেলে আসা পুরাণ কথন যা বছরের পর বছর ধরে মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে তাকে অস্বীকার করাও যায় না। আর তা যদি হয় মহাকাব্যের সত্যি, তবে তাকে বিচার করার দায় নেওয়া মুশকিল। ‘রামায়ণ’, এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে তাতে বিশ্বাসযোগ্যতা ফিকে হয়না এক রত্তিও। রাম এবং রাবণ সহ অসংখ্য চরিত্র, যুদ্ধ সবকিছুই যেন বারবার ফিরে ফিরে আসে বাস্তবের প্রসঙ্গে। ভারত শ্রীলংকার মাঝের সেতুর সঙ্গে রামের জড়িয়ে থাকা তাই যেমন অস্বীকার করা যায় না, তেমনই রাবণের রাজপ্রাসাদ নিয়ে যে অতীত রয়েছে তাকেও উড়িয়ে দেওয়া মুশকিল।

“যেই যায় লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ!”, এই প্রবাদ বাক্যের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে রাবণের সাম্রাজ্যপাটের বিস্তৃতি। ভারত ছড়িয়ে তার জন্য পাড়ি দিতে হবে ভিনদেশে। শ্রীলঙ্কায় রয়েছে পাহাড় ঘেরা এই অবাক করা রাজপ্রাসাদের অস্তিত্ব। ইতিহাস বলছে, পৃথিবীর প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাসের সবচেয়ে সেরা নিদর্শন হল এই রাজপ্রাসাদটি। আজও যার স্থাপত্য নিমেষে চমকে দিতে পারে আপনাকেও। শ্রীলংকার পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত এই রাজপ্রাসাদটি হলো ‘সিগিরিয়া’। মনে করা হয়, এই ‘সিগিরিয়া’ই রামায়ণে বর্ণিত রাজা রাবণের রাজপ্রাসাদ। বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম এটি।

সপ্তম আশ্চর্যের তালিকা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছে বলেই একে অষ্টম আশ্চর্য বলে অভিহিত করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কি এমন আশ্চর্য জিনিস আছে এই রাজপ্রাসাদে যা বিশ্বের আরো সুন্দর সুন্দর রাজপ্রাসাদকে নিমেষে কয়েক গোল দিতে পারে? কেনোই বা এতো কিছু থাকতে একই অষ্টম আশ্চর্যের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেন প্রত্নতাত্বিকরা? তাছাড়া ‘সিগিরিয়া’ নামের আসল কারণটাই বা কী?

আরও পড়ুন - কৃত্তিবাসী নয়, গো-বলয়ের পেশিবহুল রামই এখন বাংলার ইভিএম মেশিন?

শ্রীলঙ্কায় অবস্থিত এই রাজপ্রাসাদ আসলে একটি ‘একশিলা’ অর্থাৎ মনোলিথিক পাথর খণ্ড। যেটি উচ্চতায় প্রায় ৬৬০ ফুট। আরও অবাক করা বিষয়টি হল, এই পাথরের মাথার উপরিভাগ এমনই সমতল যে মনে হবে ছুরি দিয়ে কেটে কেউ সমান করে দিয়েছে। এছাড়াও এর গায়ে খোদাই করা অসাধারণ সব পুরাকীর্তির বর্ণনাও অবাক করে দেয়। অসামান্য এই স্থাপত্যই আরও বেশি করে পৃথক করে দিয়েছে রাবণের এই রাজপ্রাসাদটিকে। পাহাড়ের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আশ্চর্যজনক ইটের তৈরি ঘরবাড়ির নমুনা। সাধারণ মানুষ তো বটেই এমনকী খোদ প্রত্নতত্ত্ববিদদেরও চমকে দেয় এই অস্তিত্ব। আজও বিস্ময়ের উদ্রেগ করে। উত্তর মেলে না কীভাবে কীভাবে প্রাচীন মানুষ পাথুরে পাহাড়ের এতটা উপরে ইট তুলে ঘরবাড়ি বানালেন সাধারণ মানুষ, সেই প্রশ্নের।

প্রত্নতত্ত্ববিদদের ব্যাখ্যা থেকে জানা যায়, আনুমানিক ১৫০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল এই বিশাল রাজপ্রাসাদটি। পাহাড় ঘেরা এই প্রাসাদের আশপাশের চেহারা দেখলে আঁচ করা যায়, সত্যিই যেন কোনও সাম্রাজ্যের বিস্তার ছিল এখানে। আশেপাশে ইটের তৈরি বাড়ীঘরের পাশাপাশি রয়েছে একটি বিশাল পুকুরও। পাহাড়ের চূড়ায় পুকুর! বিশ্বের অন্যতম আশ্চর্য্য হিসেবে চিহ্নিত বকরার জন্য এটাই বা কম কি! ৯০ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৬৮ফুট প্রস্থ বিশিষ্ট এই পুকুরটির গভীরতা প্রায় ৭ফুট। এই পুকুরটিও তৈরি করা হয়েছিল পুরো পাথর কেটে। জানা যায়, প্রায় ৩,৫০০টন গ্রানাইট পাথর কেটে, তাকে সরিয়ে তৈরি করা হয় এই পুকুরের গর্ভ। প্রসঙ্গত, গ্রানাইট বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন শক্ত পাথর। ফলে কীভাবে সেই পাথর কেটে এতবছর আগে এমন আশ্চর্য নিদর্শন তৈরি করা হয়েছিল তার উত্তর এখনও ধোঁয়াশা। সঠিক ব্যাখ্যা মেলে না বলেই হয়তো আরও বেশি করে বিশ্বাস দৃঢ় হয়, যে এটিই মহাকাব্যের সেই রাজপ্রাসাদ সিগিরিয়া।

More Articles