কেন অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদেরই কাজের জন্য বেছে নিয়েছিল আইটি সেক্টর?
Anglo Indians of Hyderabad-Bengaluru: স্থানীয় মানুষরা কোনওদিনই ভালো চোখে দেখত না তাদের। তাই অ্যাংলোদের ডেমোগ্রাফিক ইতিহাসে তারা বরাবরই বেছে নিয়েছিল নিরিবিলি নতুন জায়গা।
বিভিন্ন সময়ে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমাজের যাপন ইতিহাসের চিত্র আঁকতে গিয়ে আমরা দেখেছি, তাদের মধ্যে বরাবরই ছিল এক অন্তর্লীন দ্বন্দ্ব। তা কখনও জাতিগত, কখনও ভাষাগত এবং কখনও হোয়াইটম্যানদের দেশে তাদের ‘স্যুইট হোম’ খুঁজে পাওয়ার অলীক স্বপ্ন নিয়ে অস্থির। শিকড় খুঁজে না পাওয়ার অসহায়তা বারবার ফুটে উঠেছে তাদের কথায়, পোশাক নির্বাচনে এবং গানে। এর সঙ্গে কখনও জুড়েছে ব্রিটিশদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। তাদের লিডার ফ্রাঙ্ক অ্যান্থনির ‘নেশন-মেকিং’-এর স্বপ্ন পূরণ হয়নি কিন্তু উপনিবেশবাদে নিজেদের সামাজিক জীবন থেকে দূরত্বে রাখলেও ব্রিটিশ শক্তি তাদের সুচিন্তিতভাবে বারবার ব্যবহার করেছে নিজের কলোনি-মেকিংয়ের যন্ত্র হিসাবে।
উত্তর ভারতের রাজনৈতিক দখলের সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির চোখ ছিল ডেকানের দিকেও। উত্তরে যেমন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমাজ তৈরি হয়েছিল রেলওয়েকে ঘিরে দক্ষিণে তা হলো সমুদ্র বন্দরের চারপাশে। ব্রিটিশ সমাজের অফিশিয়াল কেরানি হিসাবে। কিন্তু দাক্ষিণাত্যের পরাক্রমী আঞ্চলিক শক্তির কাছে বারবারই বাধা পাচ্ছিল তারা। তাদের জন্য বিপজ্জনক ওঠে মাদ্রাজের টিপু সুলতান এবং হায়দরাবাদের নিজামশক্তি। চারটি দফায় শুরু হয় অ্যাংলো-মাইসোর যুদ্ধ।
প্রথম দফার যুদ্ধ লাগে ১৭৬৭ সালে। হায়দার আলি সক্রিয় হন মাদ্রাজে কোম্পানির অধিকার খর্ব করতে। শুরু হয় প্রথম অ্যাংলো-মাইসোর যুদ্ধ। ক্ষতিগ্রস্থ হয় মাদ্রাজের সামাজিক জীবন। অবশেষে শান্তির জন্য ‘মাদ্রাজ ট্রিটি’ স্বাক্ষরিত হয়। দ্বিতীয় যুদ্ধ হয় ১৭৮০-তে। এই যুদ্ধটি জোরালো হয়েছিল। হায়দার আলি যুদ্ধে হারিয়ে দেন উইলিয়ম বেলিকে। ১৭৮২-তে লাগে কুম্বাকোনামের যুদ্ধ। এই যুদ্ধেও পরাস্ত হন জন ব্রেথওয়েট। এই দু'জনকেই বন্দি করা হয় শ্রীরঙ্গপত্তনমে। ভয়াবহ যুদ্ধের পরিস্থিতে আগমন হয় স্যর আইয়ার ক্রুটের, যিনি হায়দারকে হারিয়েছিলেন পোর্ত নভের যুদ্ধে। অবশেষে ১৭৮৪ তে ‘ম্যাঙ্গালোর ট্রিটি’ স্বাক্ষরিত হয়।
কোম্পানিকে পরাস্ত করতে এরপর টিপু সুলতান সন্ধি করেন ফ্রান্সের সঙ্গে। অন্যদিকে ট্রাভাঙ্কোর ছিল ব্রিটিশদের পক্ষে। লাগে তৃতীয় যুদ্ধ। ব্রিটিশ শক্তিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন চার্লস কর্নওয়ালিস। তিন বছর পর ১৭৯২ সালে ‘শ্রীরঙ্গপত্তনম ট্রিটি’ স্বাক্ষরিত হয় এবং মাদ্রাজে সাময়িক শান্তি ফিরে আসে। কিন্তু এর ফলবশত টিপু সুলতান তাঁর রাজ্যের একাংশ ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দিয়ে দিতে বাধ্য হন।
আরও পড়ুন- ‘ম্যারেজ পলিসি’-র মিশ্র সন্তান! কীভাবে তৈরি হলো কোচিনের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সমাজ?
আবার লাগে চতুর্থ যুদ্ধ। এইসময়ই টিপু সুলতান মারা যান এবং মাইসোর রাজত্বের বেশিরভাগ অংশ কোম্পানির কাছে চলে যায়। কিন্তু মাইসোরের সঙ্গে ফরাসি বন্ধুত্ব কোম্পানির ভীতির কারণ হয় এবং তারা আক্রমণ জোরালো করে তোলে। মাইসোরের কাছে সেই মুহূর্তে ৩৫০০০ সৈন্য ছিল কিন্তু ব্রিটিশরা ৬০,০০০ সেনা নামিয়ে ফেলে। নিজাম আকবর আলি খাঁ এবং মারাঠারা উত্তর দিক থেকে আক্রমণ শুরু করে। অবশেষে ব্রিটিশরা জয়লাভ করে।
জয়লাভের পর নগর নির্মাণ। নির্মাণে আবার প্রয়োজন হয় অ্যাংলো শ্রমিক সেনার। স্থানীয় তেলগু ও উর্দুভাষী মানুষদের যাবতীয় ধিক্কার নিয়ে আবার বসত গড়তে আসে ক’ঘর অ্যাংলো ইন্ডিয়ান। যাদের দেশ নেই, যারা সাদা বহিরাগত শাসক নয় আবার নয় ভারতীয়ও। ইতিহাসের সব অধ্যায়েই পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে এই মিশ্র জাতি এক দোলাচল নিয়ে ভিটে তৈরি করে, নন-ইউরোপিয় চার্চে আসেন তাদের মলিন জীশাস, রেলওয়েতে-মাইনিং অঞ্চলে-বন্দরে খেটে খায় তারা।
কোচিন বাদ দিয়ে দক্ষিণের অ্যাংলো ইতিহাস গড়ে উঠেছিল মূলত তিনটি শহরকে ঘিরে। হায়দরাবাদ-সেকেন্দ্রাবাদ ও আজকের বেঙ্গালুরুকে নিয়ে। উনিশ শতকের শেষদিকে সেকেন্দ্রাবাদ হয়ে ওঠে কোম্পানির রেলওয়ে-হাব। চলে আসে রেলওয়ে চিলড্রেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা। এই রেলওয়ে নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের। দক্ষিণের আঞ্চলিক শক্তিরা বরাবরই খুব ক্ষেপে ছিল ব্রিটিশদের উপর। পরপর অনেকগুলি আঞ্চলিক সামরিক উত্থানের মুখোমুখি হয় তারা।
কাজেই কাদেরকে চাই? যারা না ব্রিটিশ, না ভারতীয়। যারা কর্মদক্ষ কিন্তু নেই ভিটে, পিতৃপুরুষের গৌরব। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাদের পক্ষ নেবে ভেবে যারা নিজেরাই সঙ্কুচিত। তাই রাগী তামিলরা বরাবরই বিদ্বেষভাব রেখেছিল তাদের প্রতি। সেকেন্দ্রাবাদ প্রথমদিকে সেইরকম গুরুত্বপূর্ণ শহর না হলেও রেলওয়ের হাত ধরেই এর উপস্থিতি নজরে আসে। নিজাম শাসিত হায়দরাবাদে ছিল তেলেগুভাষী এবং উর্দুভাষী মানুষদের বসবাস। সেকেন্দ্রাবাদ খানিক নতুন, জনবহুলতা বেশি নয়। এই নতুনতর শহরে খানিক দোনোমনো নিয়েই থাকতে এল অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা।
স্থানীয় মানুষরা কোনওদিনই ভালো চোখে দেখত না তাদের। তাই অ্যাংলোদের ডেমোগ্রাফিক ইতিহাসে তারা বরাবরই বেছে নিয়েছিল নিরিবিলি নতুন জায়গা। তা সামাজিক ও ভাষাগত যে কোনও বৈষম্যের জন্যই হতে পারে। ক্রমাগত আঞ্চলিক আক্রমণের ভয়ে ব্রিটিশরা সেই সময় নজর দিয়েছিল দু'টি দিকে। সেনাবাহিনী এবং রেলওয়ে তৈরিতে। এই দুই ক্ষেত্রেই প্রয়োজনীয় হয় অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান শ্রমিক। তারা এইসময় লাল্লাগুড়া, মেট্টুগুড়া, বয়েনপল্লী, ওয়াকারস টাউন এবং গুণরকে ছড়িয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন-কয়লা শহর, রেল আর চার্চ! কেমন আছেন আসানসোলের আধা-ফিরিঙ্গিরা?
সামাজিক পরিচিতি তৈরির পথে হঠাৎ বাধা হয়ে দাঁড়ায় ‘ইলবার্ট বিল’। ১৮৮৩ সালে আসে এই বিল। এরপর থেকে ভারতীয় বিচারকরাও বিবেচনা করতে পারবেন ইউরোপিয়ান ইস্যু। এই বিল নানা রাজনৈতিক এবং সামাজিক সুবিধে নিয়ে অ্যাংলোদের কাছে চিন্তার বিষয় হয়ে যায়। শুরু হয় অভিবাসন। কিন্তু সীমিত আর্থিক ক্ষমতাসম্পন্ন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা থেকে যেতে বাধ্য হয় এদেশেই। অ্যাংলো রাজনৈতিক নেতারাও এইসময় কটাক্ষ করতে শুরু করে দেশে থেকে যাওয়া অ্যাংলোদের। তাদের বলা হয় ‘last dregs in a cup of tea carelessly stirred’। বেশিরভাই অভিবাসিত হয় অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের কারণ হিসাবে কারেন য়াকসেন নিওনারড লিখেছেন, ১৯৬০ অবধি অস্ট্রেলিয়ান সরকার স্বাগত জানিয়েছিল ইংরেজিতে বলিয়ে-কয়িয়ে অ্যাংলোদের। তাদেরও প্রয়োজন ছিল নগরনির্মাণ। কাজেই সুবিধেজনক ছিল ভুঁই-টানহীন এই মিশ্র জনজাতি।
অ্যাংলো ইতিহাসে সেকেন্দ্রাবাদ উল্লেখযোগ্য কারণ, নব্বইয়ের দশকে এখানে অ্যাংলো মানুষদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাম-ব্যাক হয়। উপমন্যু সেনগুপ্ত তাঁর “Voicing a Return: Exploring the impact of the BPO sector on the Anglo-Indian community in Secundrabad” প্রবন্ধে দেখিয়েছেন নব্বই দশকে তথ্য প্রযুক্তির উন্নতিকে ঘিরে সেকেন্দ্রাবাদে আবার অ্যাংলো মানুষরা ফিরে আসে। ১৯৯০-তে নয়া অর্থনৈতিক উদারনীতির ফলে সেকেন্দ্রাবাদে তৈরি হয় প্রচুর আইটি হাব। হায়দরাবাদ-সেকেন্দ্রাবাদে বরাবরই বেঁচে ছিল অ্যাংলোরা। কিন্তু এক দুঃখজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের বরাবরই তাদের মূল শহর থেকে দূরে রেখেছিল। নব্বইয়ের দশকে তথ্যপ্রযুক্তি ছিল একটি নতুন ক্ষেত্র। এগিয়ে আসে ইংরেজি ভাষায় দক্ষ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা। কেন তাদেরকেই কাজের জন্য বেছে নেয় আইটি সেক্টর? গরিব দেশে প্রান্তিক মিশ্র জাতির শ্রমিকের ইতিহাস বরাবরই একরকম। আইটি সেক্টর সারা পৃথিবীতেই জন্ম দিয়েছে এক নতুন কর্তৃত্ববাদ। যে কারণে এদের বহুযুগ আগে বেছেছিল ব্রিটিশ রেলওয়ে। অ্যাংলোরা ছিল খাটিয়ে, ডিসিপ্লিনড এবং যোগাযোগ দক্ষতা ছিল ভালো। আর সামাজিক ইতিহাস জোরালো না হওয়ায়, তাদের অবদমন করা ছিল সহজ। উপমন্যু সেনগুপ্ত দেখিয়েছেন, এইসব কর্মক্ষেত্রে বাকিদের ট্রেড ইউনিয়ন থাকলেও অ্যাংলোদের এইরকম কোনও সংগঠন ছিল না।
আইটি হাবের এক কর্মী সাক্ষাৎকারে তাই বলেন, “আমাদের কর্মদক্ষতা, স্মার্টনেস ও ইংরেজি ভাষার প্রতি দক্ষতা ছিল বরাবরই স্থানীয় তেলগু ভাষার মানুষদের থেকে ভালো কিন্তু বরাবরই সুযোগের অভাবে ছিলাম আমরা। তাই হাতের কাছে যে কাজ পাই, এগিয়ে আসি। আইটি হাবে খাটনি ছিল যে কোনও প্রথাগত পেশার থেকে বেশি কিন্তু আমাদের উপায় ছিল কি? আমাদের কোনওদিনও প্রথাগত কাজ বলে কিছু ছিল? আবার এই প্রথাগত কাজ ছেড়ে আসতেই প্রথমদিকে ভয় পেয়েছিল ইন্ডিয়ানরা”। এইসময় হায়দরাবাদ এবং সেকেন্দ্রাবাদ শহরে কাজের জায়গা, ফ্রন্ট অফিস, ব্যাক অফিস, ট্রেনিং সেন্টার মিলিয়ে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের প্রচুর ইন্ট্রা-আরবান অভিবাসন হয়। শিক্ষিত অ্যাংলোরা ছিল বরাবরই শহরমুখী।
আরও পড়ুন- ব্রিটিশদের ‘বর্জ্য’! খড়গপুর রেল কলোনিতে মুছে গেছে অ্যাংলো জীবনের ঘ্রাণ
দাক্ষিণাত্যের অ্যাংলো সংস্কৃতির কথা বলতে গেলে উল্লেখ করতে হয় আরেকটি জায়গার, বেঙ্গালুরুর ‘হোয়াইট ফিল্ড’। ১৮৮২ সালে তৈরি হয়েছিল এই হোয়াইট ফিল্ড, অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান মানুষদের থাকার জন্য। কৃপা রাজঙ্গমের ‘Whitefield: An important but forgotten Chapter of India’s Colonial Heritage’ প্রবন্ধ থেকে জানা যায় এই শহর তৈরি হয়েছিল সমবায় প্রথার উপর ভিত্তি করে। স্থানীয় অ্যাংলোরা ছিল শান্তিপ্রিয়। বেঙ্গালুরু শহর থেকে ১৬ কিমি দূরে ওল্ড ব্রিটিশ ক্যান্টনমেন্টের সবথেকে সুন্দর জায়গা এই হোয়াইট ফিল্ড। সুদৃশ্য বাংলো, চার্চ ও চেরি ব্লসমের গাছে ঘেরা ছবির মতো সুন্দর। নব্বইয়ের দশকের আইটি বুমের পর এখানে শহর গড়ে ওঠে।
এই হোয়াইট ফিল্ড অঞ্চলের ইতিহাস কিন্তু বেশ পুরনো। ১৭৮২ সালে মাইসোরের রাজা দশম জয়চমারাজা ওড়িয়েড় ৩৯০০ একর জমি দিয়েছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান এবং ইউরেশিয়ান সংগঠনকে। এখানে প্রথমে চাষবাস এবং উদ্যানপালনভিত্তিক জীবন কাটাচ্ছিল তারা। সেই সময়ে এদের সংগঠনের কমিটি মেম্বার ছিলেন ৩০ জন অ্যাংলো। এরপর সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মিঃ হোয়াইট শুরু করেন কমিউনিটি নির্মাণ। উনিশ শতকের প্রথম দিকে সেখানে ছিল মোট ৪৫টি বাসগৃহ। যার মধ্যে ১৮টি ছিল শহরের দিকে। তৈরি হয়েছিল কয়েকটি সুদৃশ্য চার্চও। যেমন, মেমোরিয়াল চার্চ এবং আওয়ার লেডি অব লোর্ডেস চার্চ। ১৯০৭ সালে এই হোয়াইট ফিল্ডের সদস্য সংখ্যা যখন ১৩০ জন, এখানে বেড়াতে আসেন মাদ্রাজের গভর্নর লর্ড কন্নামারা এবং মাইসোর অধিবাসী স্যর হ্যারি প্রেন্ডরজাস্ট। প্রেন্ডরজাস্ট সাহেবের পছন্দ হয় চেরি ব্লসমের বাগানে ঘেরা এই হোয়াইটফিল্ড। তিনি বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির বড় কর্তারা দু-একবার টহল দিয়ে যান এখানে। শুরু হয় নগরনির্মাণ। কাছাকাছি গড়ে ওঠে ‘কোলার গোল্ড ফিল্ড’। পরের দিকে এখানকার অধিবাসীরা অনেকেই কাজ নিয়েছিলেন এই মাইনিং সংস্থায়। তথ্য-প্রযুক্তিগত কাজে তারা বরাবরই ভালো ছিল এবং অফিস কালচারে অ্যাংলোরা দেশিয় মানুষদের চেয়ে অনেক আগে থেকেই অভ্যস্ত। ব্রিটিশরা তাদের তৈরি করতে চেয়েছিল দক্ষ কেরানি হিসাবে। পরের দিকে এই হোয়াইট ফিল্ডে তৈরি হয় The Export Promotion Industrial Park(EPIP)। বেঙ্গালুরুর একেবারে প্রথমদিকের টেকনোলজি পার্কগুলোর মধ্যে একটি। বর্তমানে হোয়াইট ফিল্ড বেঙ্গালুরু শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ভারতবর্ষের দক্ষিণের অ্যাংলো জীবনের ইতিহাস যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, বরাবরই নানা শক্তি নিজেদের প্রয়োজনে ব্যাবহার করেছে এই প্রান্তিক মিশ্র জনজাতিকে। কখনও বসতি নির্মাণে তো কখনও শ্রমশক্তি হিসাবে। নানা রাজনৈতিক দোলাচলে বারবারই এদিক-ওদিক ঘুরে মরেছে তারা। আধুনিক পৃথিবীতেও অধরা রয়েছে তাদের ‘স্যুইট হোম’ নির্মাণের স্বপ্ন। সেনসাসে জায়গা পেলেও আজও তৈরি হয়নি তাদের নিজস্ব অ্যাংলো-ভারতীয় সংস্কৃতি।