মহারাষ্ট্র নির্বাচন ২০২৪: কেন মোদি বা রাহুলের হাতেই নেই এই নির্বাচনের ফলাফল?
Maharashtra Assembly Election 2024: এবারের মহারাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হবে কীভাবে প্রার্থীরা নিজেদের অর্থবল দিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকজনকে নিজের দিকে নিতে পারবেন তার উপর।
২০১৪ পরবর্তী ভারতের নির্বাচন মানেই বিজেপির পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদির মুখ তুলে ধরা আর তার বিপক্ষে কংগ্রেসের রাহুল গান্ধি বা কোনও আঞ্চলিক দলের নেতার মুখকে সামনে রাখা। যেমন, আমরা ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে দেখেছি, নরেন্দ্র মোদিকে ডেইলি প্যাসেঞ্জারের মতো বাংলায় আসতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাতে। পশ্চিমবঙ্গের মতো অন্যত্র 'ডবল ইঞ্জিন' সরকারের তত্ত্ব শোনাতে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে যদিও বোঝা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সেই সর্বজন এবং সর্বত্র গ্রাহ্য ইমেজটি একটু মিইয়ে গেছে।
এবারে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচন দেখতে গিয়ে রাস্তাঘাটে, লোকজনের সঙ্গে কথাবার্তায় নরেন্দ্র মোদিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের 'বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে' বা নরেন্দ্র মোদিদের 'এক হ্যায় তো সেফ হ্যায়' সংবাদমাধ্যমে শোরগোল ফেলেছে বটে, হয়তো মহারাষ্ট্রের হাতে গোনা কয়েকটি অঞ্চলে তার প্রভাব পড়লেও পড়তে পারে, কিন্তু সার্বিকভাবে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনে এই সব কথার কোনও মূল্য নেই।
একইভাবে সংবিধান বাঁচানোর কথা বলা রাহুল গান্ধির ভারত জোড়ো যাত্রার প্রভাব গত লোকসভা নির্বাচনে এই পশ্চিমি রাজ্যে পড়লেও, এবার রাহুল গান্ধি বিধানসভা নির্বাচনে কোনও ফ্যাক্টরই নন।
এবারের মহারাষ্ট্র নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করবে একদম তৃণমূল স্তরের নেতা ও প্রভাবশালীরা। ফলাফল নির্ধারিত হবে কীভাবে প্রার্থীরা নিজেদের অর্থবল দিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর লোকজনকে নিজের দিকে নিতে পারবেন তার উপর। স্থানীয় সমবায়গুলির, তা সে ব্যাঙ্ক হোক বা দুগ্ধজাত পণ্য বা চিনির মিলগুলির দখল এবং আধিপত্য কার হাতে রয়েছে তার উপর নির্ভর করবে ভোটের ফল। এক একটি কেন্দ্রে চার-পাঁচজন নেতা প্রার্থীপদের দাবিদার ছিলেন। এঁদের মধ্যে অনেকে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করছেন বা অনেকে ভোটের জন্য কাজ না করে বসে রয়েছেন। যেমন শুধু বিজেপিই দল বিরোধী কাজের জন্য ৪০ জনের উপর নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছে। এই সব বিদ্রোহী নেতাদের টাকার লোভ, সমবায় সমিতির পদের লোভ, বিধানপরিষদের সদস্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সামলাতে যে প্রার্থী পারবেন, তিনিই জয়ের কাছাকাছি যেতে পারবেন।
সঙ্গে স্থানীয় জাতপাতের সমীকরণ ঠিক করে দেবে কোন জাতির ভোটাররা কোন প্রার্থীকে বেছে নেবে। মারাঠা এবং ওবিসিদের মধ্যে তীব্র লড়াই রয়েছে। কারণ ওবিসি জনগণ মনে করছে (বা মনে করানো হচ্ছে) যে, মারাঠারা যে সংরক্ষণের দাবি করছে, তাতে তাঁদের সংরক্ষণের ভাগ কমে যাবে। শুধু তাই নয়, ওবিসিদের মধ্যে কে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করবে, তাও স্থানীয় স্তরেই ঠিক হচ্ছে। যেমন বানজারা গোষ্ঠীর লোকজন ওবিসি প্রার্থীকে সমর্থন করবে কিনা তা কে প্রার্থী হয়েছেন এবং কেমন টাকাপয়সা খরচ করছেন তার উপর নির্ভর করছে। আবার মালি গোষ্ঠীর থেকে কেউ হয়তো প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি। ফলে তাঁর সমর্থকেরা কোনও দলের সরকারি প্রার্থীকে ভোট নাও দিতে পারেন।
আরও পড়ুন- মায়াবতীর বিশ্বাসঘাতকতায় পড়ে যায় সরকার, যে অভাবনীয় প্রতিশোধ নিয়েছিলেন বাজপেয়ী…
ভোটের ঠিক আগে মারাঠাদের জন্য সংরক্ষণের দাবিতে প্রবল আন্দোলনের মুখে পড়েছিল বিজেপি পরিচালিত মহায়ূতি জোটের সরকার। সেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জারাঙ্গে পাটেল। তিনি এবার বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থীও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। কানাঘুঁষো শোনা যায়, মারাঠা নেতা শরদ পাওয়ারের 'পরামর্শ' মেনে জারাঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনিও নিয়ম করে শরদ পাওয়ারের এনসিপি বা কংগ্রেস বা উদ্ধব ঠাকরের প্রার্থীদের জন্য ভোট জোটানোর কাজ করছেন নীরবে বা কখনও সরবে।
মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলে আবার কাকে ভোট দিতে হবে তা নিয়ে ফতোয়া জারি হচ্ছে বলে বিজেপির তরফ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে। কাজেই মুসলমান ভোট কোনদিকে যাবে তা ঠিক হচ্ছে স্থানীয় প্রার্থীর ক্যারিশমার উপর ভর করেই। কিন্তু সেই সমীকরণেই স্থানীয় স্তরে গোলমাল রয়েছে। যেমন, কোলাপুর জেলার কাগলে হাসান মুশরিফ এনসিপির (অজিত পাওয়ার) গুরুত্বপূর্ণ নেতা, কিন্তু অনেক স্থানীয় বাসিন্দা তাঁর কাজে খুশি নন, তাঁরা শরদ পাওয়ারের এনসিপি প্রার্থী সমরজিৎ ঘাটগের দিকে ঝুঁকছেন বলে শোনা যাচ্ছে। আবার সাতারা জেলার মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলের ভোটাররা বিজেপি প্রার্থী শিবেন্দ্ররাজে ভোঁসলের দিকে সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে দাবি। সমরজিৎ ও শিবেন্দ্র দু'জনেই ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের বংশধর।
মহারাষ্ট্র মানেই শুধু মুম্বই-পুণে-নাসিক নয়। তার বাইরেও একটি অন্য মহারাষ্ট্র রয়েছে। যেমন ছত্তিশগড়-মধ্যপ্রদেশ-তেলেঙ্গানা ঘেঁষা বিদর্ভ। মোট ১১টি জেলা রয়েছে এই অঞ্চলে। এখানে আখের চাষ হয় বেশি। কিন্তু চিনি কলগুলি সব পশ্চিম মহারাষ্ট্র, মুম্বইয়ের কাছাকাছি অঞ্চলে। এখানে তুলো চাষ হয়। কিন্তু চাষিরা ন্যায্য দামের জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন। এখন আবার সয়াবিন চাষ করেও তাঁরা মার খাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। সেখানে এটি একটি নির্বাচনী ইস্যুও বটে। অথচ এর মধ্যেই নাগপুর পড়ে। আবার এই অঞ্চলেই গাড়চিরোলির মতো মাওবাদী অধ্যুষিত অঞ্চলও পড়ে। এখান থেকেই দেবেন্দ্র ফড়নবীশ জিতে আসেন। ফড়নবীশ ছাড়াও মহারাষ্ট্র তিনজন মুখ্যমন্ত্রীকে বিদর্ভ থেকে পেয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই অঞ্চল থেকে রাজ্য়ের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ রাজস্ব আসে, তবু এটি অনুন্নত অঞ্চলই রয়ে গেছে।
এই অঞ্চলই ঠিক করে দেয়, কে সরকারে বসবে। এখানে ৬০টির উপরে আসন রয়েছে। তার মধ্যে কংগ্রেস ও বিজেপি মুখোমুখি লড়ছে ৩৬টি আসনে।
আবার মারাঠওয়াড়া অঞ্চলের সমস্যা অন্য। সেখানে প্রায় ৪৬টি আসন রয়েছে। ২০১৯ সালের বিধানসভায় বিজেপি ও অবিভক্ত শিবসেনা মিলে ২৮টি আসনে জিতেছিল। কিন্তু ২০২৪ লোকসভায় এই অঞ্চলে বিজেপি ৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র ১টিতে জিততে পেরেছিল। এখানে যেমন জলের এবং খরার সমস্যা তীব্র আবার জাতিগত লড়াইও সমান তীব্র। এখানেই জারাঙ্গে পাটিলের গড়। মারাঠাদেরও আধিপত্য এই অঞ্চলে। ৮ জন সাংসদের মধ্যে ৭ জনই মারাঠা। দলিত, মারাঠা, মুসলমানদের ভোটের বিভাজনই এখানে জয়-পরাজয় ঠিক করে দেয়। অথচ এখানে কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা বারবার শিরোনামে উঠে আসে। শুধু ২০২৩ সালেই ১,০৮৮ জন কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলে। এখান থেকে মহারাষ্ট্র চারজন মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছে কিন্তু সবাই কেমন মুম্বই-কেন্দ্রিক হয়ে গেছেন।
আবার উত্তর মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের দাম একটা বড় ফ্যাক্টর। এর ওঠাপড়ার সঙ্গে নির্বাচনের ফলাফলও ওঠানামা করে। এই সেপ্টেম্বরেই কেন্দ্রীয় সরকার পেঁয়াজের রফতানির উপর শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করেছে, শুধু ভোটের দিকে তাকিয়েই। এই অঞ্চলে আদিবাসী, দলিত, ওবিসি ভোটারদের রসায়নও অনেক আসনের ভাগ্য নির্ধারণ করে। লোকসভা নির্বাচনে দলিতরা বিজেপির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াতেই বিজেপি ৪টি আসনে হেরে যায়।
এই নির্বাচনে বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি সরকারের অস্ত্র 'বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে' নয়। তাদের অস্ত্র উন্নয়ন আর অনুদানের প্রতিশ্রুতি। যে প্রকল্প নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে, সেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আদলে 'লড়কি বহিন যোজনা'-র সুফল একনাথ শিণ্ডে, অজিত পাওয়ার ও বিজেপির ফড়নবীশরা ঘরে তুলতে পারবে কিনা সেটাই দেখার। মহায়ুতি জোট ১৫০০ টাকা করে মাসিক ভাতা দিচ্ছে মহিলাদের। কংগ্রেস-শরদ পাওয়ারের এনসিপি ও উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা জিতে এলে সেটা ৩০০০ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যদিও মহিলাদের একটি অংশ এই অনুদানে খুশি কিন্তু এর বাইরেও একটি অংশ রয়েছে, যাঁরা হাতে কাজ চান, মূল্যবৃদ্ধি কম হোক চান এবং কেউ কেউ অপমানিতও বোধ করছেন। এই দানের রাজনীতি জাতিগত-রাজনীতিকে ছাপিয়ে উঠতে পারবে কিনা, তা এই নির্বাচন দেখিয়ে দেবে।
তবে এই স্থানীয় স্তরের সমীকরণ ছাড়াও বৃহত্তর মহারাষ্ট্রে এই নির্বাচন আসলে কয়েকজন ব্যক্তিত্বের অস্তিত্বের লড়াই। অশীতিপর বৃদ্ধ শরদ পাওয়ার এখনও নিজের তেজ দেখিয়ে চলেছেন। চষে বেড়াচ্ছেন সারা রাজ্য। তাঁর লড়াই ভাইপো অজিত পাওয়ারকে দেখিয়ে দেওয়া আসল এনসিপি তাঁর ছিল এবং তাঁরই থাকবে। যদিও নির্বাচন কমিশন অজিত পাওয়ারের এনসিপি-কে আসল এনসিপি বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধুমাত্র পাওয়ারদের গড় বারামতীতেই শরদ-অজিতের লড়াই সীমাবদ্ধ নয়। যেখানে অজিত মূলত বিদায়ী এনসিপি বিধায়কদেরই এবার টিকিট দিয়েছেন, সেখানে শরদ পাওয়ার খুঁজে খুঁজে এমন প্রার্থী বেছেছেন, যাঁরা নিজেদের অর্থবল ও পেশিবলে এবং এলাকায় আধিপত্য রেখে লড়াই দিতে পারে।
অন্যদিকে লড়াই উদ্ধব ঠাকরে বনাম একনাথ শিণ্ডেরও। বালাসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধবকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে হঠিয়ে বিজেপির হাত ধরে মহারাষ্ট্রের মসনদে বসেছেন উদ্ধবেরই সহযোগী একনাথ শিণ্ডে। একনাথ বিজেপির হাতের পুতুল হয়ে থাকেননি। বছর দেড়-দুয়েকের মধ্যে নিজের একটি জনদরদি ইমেজ তৈরি করেছেন। মুম্বই ও উপকূলবর্তী কোঙ্কন এলাকাতে শিবসেনার আধিপত্য কায়েম রাখা ও উদ্ধবের শিবসেনাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া তাঁর লক্ষ্য। তবেই তিনি পরবর্তী সরকারে একইরকম প্রভাব বজায় রাখতে পারবেন। নয়তো তিনি হারিয়ে যাবেন রাজনীতি থেকেই। লোকসভায় দুই শিবসেনা ১৩টি আসনে মুখোমুখি লড়েছিল। তার মধ্যে উদ্ধব ৭টি ও একনাথ ৬টি আসন পেয়েছিল। এবার শিবসেনার দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ৪৯টি আসনে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে।
আরও পড়ুন- এশিয়ার বৃহত্তম বস্তি! ভোটের মুখে যেভাবে মহারাষ্ট্র রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠছে ধারাভি
আর এক ব্যক্তিত্বের নিজের সম্মানের লড়াই এবারের বিধানসভা নির্বাচন। ২০১৯ সালের বিধানসভায় সর্বোচ্চ আসন জিতেও তিনি বিজেপির সরকার গড়তে পারেননি। একনাথ শিণ্ডে ও অজিত পাওয়ারকে ভাঙিয়ে নিয়ে এসেও তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসা হয়নি। সেই দেবেন্দ্র ফড়নবীশ আবার প্রমাণ করতে চাইবেন তিনিই পারেন বিজেপিকে মহারাষ্ট্রের চালিকাশক্তি করতে। কিন্তু ধন্দ রয়ে যাচ্ছে। মহায়ুতি জোটের খাতিরেই বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য কোনও মুখকে বেছে নেয়নি।
কিন্তু মধ্যপ্রদেশে শিবরাজ সিং চৌহান বা রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার যা অবস্থা হয়েছে, মহারাষ্ট্রে বিজেপি জিতলেও দেবেন্দ্র ফড়নবীশের যে সেই অবস্থা হবে না কে বলতে পারে! নরেন্দ্র মোদি এই নির্বাচনে ফ্যাক্টর না হলেও, তিনি ও অমিত শাহ যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কোনও শক্তিশালী নেতাকে দেখতে চান না, তা পরিষ্কার। সুতরাং ফড়নবীশের প্রতি ভোটাররা এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও আরএসএস কর্তারা প্রসন্ন হন কিনা, এই নির্বাচন তাও ঠিক করে দেবে।
কংগ্রেসের মারাঠি নেতারা অনেকেই দল ছেড়ে হয় বিজেপি বা শিবসেনাতে ভিড়েছেন। কংগ্রেস রাজ্য সভাপতি নানা পাটোলে খুব আগ্রাসী ভূমিকা নিয়েছেন এবারের নির্বাচনের আসনের ভাগ বাঁটোয়ারায়। রাহুল গান্ধিকে যদিও শেষে হাল ধরতে হয় কিন্তু স্থানীয় নেতাদের গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। তাতেও যে শেষ রক্ষা হয়েছে তেমন নয়। যেমন, কোলাপুর উত্তরে কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী মধুরিমারাজে ছত্রপতি মনোয়ন প্রত্যাহারের সময়সীমার ১০ মিনিট আগে প্রার্থীপদ প্রত্যাহার করেন। কারণ সেখানে স্থানীয় কংগ্রেস নেতা রাজেশ লাটকর নির্দল হিসেবে ভোটে দাঁড়িয়ে গেছেন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই মধুরিমা লড়াই থেকে সরে আসেন। এখন এই নির্দল রাজেশকেই সমর্থন করতে বাধ্য হচ্ছে কংগ্রেস।
এই ডামাডোলের মাঝেও কংগ্রেসর ভরসা লোকসভার ফলাফল। লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রে স্ট্রাইক রেট বেশ ভাল ছিল। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনে তারা কতটা শরদ পাওয়ার ও উদ্ধব ঠাকরের স্থানীয় নেতাদের সমর্থন পাবে তার উপর নির্ভর করবে তাদের ফলাফল। তবে বিজেপির সঙ্গে সরাসরি ৭৫টি আসনে লড়াই করছে কংগ্রেস। কাজেই মহাবিকাশ আঘাড়ির শরিক হিসেবে তাদের দায়িত্ব অনেক।
হরিয়ানার নির্বাচনের ফলাফল দেখার পর মহারাষ্ট্র নিয়ে কোনও ভোট পণ্ডিতই কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করতে চাইছেন না। কারণ মহারাষ্ট্র নিয়ে কেউই কোনও হিসেব কষে উঠতে পারবেন না। ভোটের দু'দিন আগে যা অবস্থা তাতে বোঝা যাচ্ছে বেশিরভাগ আসনের হার-জিত খুব কম ব্যবধানের উপর নির্ভর করবে। নির্দল প্রার্থীদের আধিপত্য থাকবে এই ভোটের ফলাফলে।
বিজেপির একমাত্র সান্ত্বনা লোকসভা নির্বাচনে তারা খারাপ ফল করলেও গতবারের বিধানসভার ২৬ শতাংশ ভোট তারা ধরে রাখতে পেরেছে। অন্যদিকে অবিভক্ত শিবসেনা, এনসিপি, কংগ্রেসের ২০১৯ সালে ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ করে ভোট ছিল। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উদ্ধবের শিবসেনা ১৬.৭২ শতাংশ, শিণ্ডের শিবসেনা প্রায় ১৩ শতাংশ, শরদ পাওয়ারের এনসিপি ১০ শতাংশ ও অজিত পাওয়ারের এনসিপি প্রায় ৪ শতাংশ, কংগ্রেস প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট পায়। তাতে বিজেপির বিশেষ লাভ হয়নি। এবারের বিধানসভায় শিবসেনা ও এনসিপিকে ভাগ করে এই ভোট শতাংশ ভাঙে কিনা, তা দেখতে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।