মিয়া খালিফা যা পারেন আমরা তা পারি না

Mia Khalifa Gaza War : শুধু প্লেবয় নয়, কানাডার ব্রডকাস্টার এবং রেডিও সঞ্চালক টড শাপিরোর সঙ্গে একটি ব্যবসায়িক চুক্তি থেকেও বাদ দেওয়া হয় মিয়াকে।

একটা বছর শেষ হয়েছে যুদ্ধকে নিয়েই। সেই যুদ্ধকে নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন বছরও। গত ৭ অক্টোবরে শুরু হওয়া হামাস এবং ইজরায়েলের যুদ্ধে কোন পক্ষ নেওয়া উচিত এই দ্বন্দ্বে টুকরো টুকরো হতে শুরু করেছিলেন যারা, ফের জোড়াতালি দিয়ে লেগে পড়েছেন রোজের রিলস-অফিসময় জীবনে। হাজারে হাজারে শিশুর লাশ দেখেও যুদ্ধ থামানো উচিত কিনা এই প্রশ্নে একমত হতে পারেনি বিশ্বের সমস্ত দেশ। ইজরায়েল বন্দি বিনিময় করেছে ঠিকই, তবে যুদ্ধ থামায়নি। গাজা গুঁড়িয়ে শেষ, তবু থামেনি যুদ্ধ। যুদ্ধ নিয়ে বিশ্বের নামী দামি তারকারা কী বলছেন, সোশ্যাল মিডিয়া বা গুগল ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। এই তারকাদের মধ্যে সচরাচর যাদের ধরা হয় না তারাও 'তারকা' অথচ একটু গোপনে তাঁদের চলাচল। এই তারকাদের নিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক জোকস, রগরগে চাহিদা সবই জায়েজ- কিন্তু রাজনীতি-সমাজনীতি নিয়ে সেই তারকাদের বক্তব্য বড় একটা সমাদৃত নয়, কোথাওই। সমাদৃত হলে আমরা বুঝতে পারতাম, পর্ন তারকা মিয়া খলিফা যা পারেন, আমরা কেন তা পারি না। পর্নোগ্রাফির জগতের বিখ্যাত মুখ মিয়া খলিফা এবং কৌতুক অভিনেতা অ্যামি শুমারের মধ্যেকার তর্কে মিয়া যা বক্তব্য রেখেছিলেন ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে তা ভাবার মতো।

গাজা উপত্যকার উপর ইজরায়েলি নিপীড়নের ইতিহাস তো আজকের নয়। কিন্তু গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস ইজরায়েলের উপর জঙ্গি হামলা শুরু করলে প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধ শুরু করে ইজরায়েল। এখনও অবধি প্রায় ২৩ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটেছে গাজায়, ৮০০০-এর কাছাকাছি শিশুর মৃতদেহ দেখেছে বিশ্ব।

আরও পড়ুন- স্নান-খাওয়ার জলটুকুও নেই! দূষিত সমুদ্রের জলেই বাঁচছে গাজার শরণার্থী শিশুরা

অ্যামি শুমার একজন ইহুদি। তিনি ইজরায়েলের একজন স্পষ্ট সমর্থক। উল্টোদিকে লেবানিজ-আমেরিকান বংশোদ্ভূত মিয়া খলিফা ফিলিস্তিনিপন্থী। হামাসের প্রতি মিয়া খলিফা সমর্থন জানিয়েছেন। গাজার মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে মিয়া ধীরে ধীরে বাদ পড়ে গিয়েছেন নানা পেশাদারি কাজকর্ম থেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় হামাসকে 'মুক্তিযোদ্ধা' হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন মিয়া খলিফা। তারপরই মিয়া খলিফার সঙ্গে পডকাস্টের চুক্তি বাতিল করে দেয় প্লেবয়। অন্যদিকে, অ্যামি শুমার দাবি করেছিলেন, গত ১৭ অক্টোবরে গাজা হাসপাতালে বোমা হামলার জন্য ইজরায়েলকে খামোখা দোষারোপ করছে সংবাদমাধ্যমগুলি। যদিও পরবর্তীকালে দেখা যায় ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি গাজা থেকে ইজরায়েলের দিকে ছোড়া হয়েছিল।

 

গত ১ নভেম্বর, মিয়া খলিফা X-এ একটি পোস্ট শেয়ার করেন। পোস্টটি মূলত কৃষ্ণাঙ্গ এবং আদিবাসী ফিলিপিনো অভিনেত্রী এশিয়া জ্যাকসনের। সেই পোস্টে তাঁর এবং শুমারের মধ্যে একটি ইনস্টাগ্রাম চ্যাটের স্ক্রিনশট রয়েছে। সেই চ্যাট পড়ে বোঝা যাচ্ছে যে কোনও একটি কমেন্টের পর শুমার জ্যাকসনের সঙ্গে এই কথাবার্তা বলা শুরু করেন। ওই মন্তব্যে লেখা ছিল,

"It's so crazy to me how Bella & Gigi had to tiptoe around their statements and then Amy Schumer is like 'Gazans are rapists' and will still have a career."

জ্যাকসনের এই কমেন্টের জবাবে, শুমার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "আমার লোকদের গণহত্যার বিষয়ে আমি যা পোস্ট করেছি তাতে কি আপনি বিরক্ত?" জ্যাকসন তার উত্তরে লিখেছিলেন, "ইসলামোফোবিয়া এবং গাজার জনগণ বিষয়ে অগভীর কথাবার্তা বিরক্ত করেছে।" অ্যামি শুমার আরও লেখেন, "সারা বিশ্ব জুড়ে মানুষ ইজরায়েলের লোকদের হত্যার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। এখানেই শেষ না, শুমার বলেন জ্যাকসন আসলে ইহুদিদের ইতিহাস এবং লড়াই সম্পর্কে কিছুই জানেন না। জ্যাকসন ইহুদিবিদ্বেষী বলেও মনে করেন তিনি।

 

শুমার জ্যাকসনকে জিজ্ঞাসা করেন, তাঁর কোনও ইহুদি বন্ধু আছে কিনা। এই হামলার পরে সেই সাধারণ মানুষদের সন্তানদের জন্য, জীবনের ভয়ের কথাও উল্লেখ করেন শুমার। পাল্টা তর্কে জ্যাকসন আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছিলেন, "আপনি কীভাবে জানলেন যে আমি ইহুদিদের দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কিছুই জানি না? আপনি কীভাবে তা জানেন? আপনি তো জানেনই না আমি কে।" এই সোশ্যাল মিডিয়া তর্ক দিয়েই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। দ্রুত তা ভাইরাল হয়ে যায়। মিয়া খলিফা তা ফের পোস্ট করে এই তর্ক এগিয়ে নিয়ে যান। অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এবং লেখক ড্যান কোভালিক সহ ফিলিস্তিনি সমর্থরাও নানা পোস্ট করেন এই তর্কের প্রেক্ষিতেই। প্লেবয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল হওয়ার পরে মিয়া খলিফা সোশ্যাল মিডিয়ায় আর সেভাবে নিজের কথা লেখেন না। কিন্তু গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের সমর্থন তাঁর অটুট।

১ নভেম্বর অ্যামি শুমার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনার জবাব দিতে সুর নরম করেন। একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি ইহুদি এবং মুসলিম- দুই সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা কামনা করেন। ইসলামোফোবিয়া বা গণহত্যাকে সমর্থন করার অভিযোগের বিরুদ্ধে কথা বলেন। মিয়া খলিফা ফিলিস্তিনের পক্ষে লিখেছিলেন, "আপনি যদি ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি দেখেও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে না থাকেন তবে আপনি বর্ণবৈষম্যের পক্ষে ঝুঁকে আছেন এবং ইতিহাস সময়মতো তা আপনাকে ফিরিয়ে দেবে।"

 

আরও পড়ুন- এই কেফিয়ের একটি সুতোও যেন গাজার না হয়…

শুধু প্লেবয় নয়, কানাডার ব্রডকাস্টার এবং রেডিও সঞ্চালক টড শাপিরোর সঙ্গে একটি ব্যবসায়িক চুক্তি থেকেও বাদ দেওয়া হয় মিয়াকে। প্লেবয় সাফ জানিয়ে দেয় মিয়া খলিফার মন্তব্য 'জঘন্য এবং নিন্দনীয়'। টড শাপিরো মিয়া খলিফার সঙ্গে পডকাস্ট চুক্তির চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েও পিছিয়ে আসেন। মিয়া খলিফা তবু সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেই যান, “It's FREE PALESTINE until Palestine is FREE.” মিয়া বলেন, “আমি ফিলিস্তিনকে সমর্থন করাতে ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু আমি ইহুদিদের সঙ্গে কোনও ব্যবসায় ঢুকে পড়েছি কিনা বুঝতে পারছি না।" লেবাননের বাসিন্দা হওয়াতে আইডিএফ অর্থাৎ ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের বিপুল বিমান অভিযানের অভিজ্ঞতা রয়েছে মিয়ার। মিয়া খলিফা এই যুদ্ধে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন, "আমি নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করা সমস্ত মানুষের পাশে আছি। আমি লেবাননের মেয়ে! আপনারা কি পাগল যে ভাবছেন আমি ঔপনিবেশিকতার পক্ষে সওয়াল করব?"

এর আগেও ইজরায়েলের বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন মিয়া। ২০২১ সালের জুনে মিয়া খলিফা ইজরায়েলকে 'বর্ণবিদ্বেষী রাষ্ট্র' বলার পরে ভাইরাল হয়ে যান। সেবার ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে ১১ দিনের সংঘর্ষে ২৩০ জন ফিলিস্তিনি এবং ১২ ইজরায়েলি নিহত হন। ২০২১ সালের মে মাসে, ইজরায়েলি অভিনেত্রী গ্যাল গ্যাডট ওয়েস্ট ব্যাঙ্কে ফিলিস্তিনি নাগরিক এবং ইজরায়েলি সেনার সংঘর্ষের নিন্দা করেছিলেন।

ইনস্টাগ্রামে ওয়ান্ডার ওম্যান তারকা বলেছিলেন, 'ইজরায়েল একটি মুক্ত এবং নিরাপদ জাতি হিসাবে বেঁচে থাকতে চায়, আমাদের প্রতিবেশীদেরও তাই প্রাপ্য।" কয়েকদিন পরে, মিয়া খলিফা ওয়ান্ডার ওম্যান ১৯৮৪-র একটি এইচবিও ম্যাক্স প্রোমো গ্রাফিক পোস্ট করে লেখেন: "আমরা #SnyderCut চেয়েছিলাম, জেনোসাইড বার্বি নয়।"

More Articles