নুপুর বিতর্কের মাঝেই মহম্মদ জুবেরের গ্রেপ্তারি কোন বার্তা দিচ্ছে?

জুবেরের গ্রেপ্তারিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাস্বরূপই দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, নূপুরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে অপদস্থ হতে হয়েছে বিজেপি-কে। কোথাও না কোথাও একটি উদাহরণ তৈরিরও প্রচেষ্টা রয়েছে যে, পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে মন্তব্যে যদি...

প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে,

কে কোথা ধরা পড়ে, কে জানে...

প্রেম নয়, ভুয়া খবরের ফাঁদ পাতা ভুবনে ঘুঘুর বাসা ভাঙতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আইনি ফাঁদে নিজেই আটকে পড়লেন মহম্মদ জুবের। রাজনীতির ডিজিটালকরণে সমাজমাধ্যম থেকে গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের মায়াজাল যেভাবে বিস্তৃত হয়েছে, তার মধ্য থেকে ছাঁকনিতে ছেঁকে সত্য প্রকাশ করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। স্মার্টফোনের দৌলতে সহজলভ্য, বিকৃত তথ্য ঘেঁটে, সত্যতা যাচাইয়ের অভীপ্সা পেশাস্বরূপ প্রতিষ্ঠা পেতে শুরু করে তাঁর হাত ধরেই। শেষাবধি, সিনেমার পর্দায় বর্ণিত দৃশ্যর সঙ্গে বাস্তবের তুলনা টানায় গ্রেফতার হয়েছেন জুবের।

দেশের প্রথম সারির সত্যতা যাচাইকারী সংবাদমাধ্যম ALT News-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জুবের। ২০১৭ সালে আত্মপ্রকাশ ALT News-এর। নিশ্চিত মাসমাইনের চাকরি বজায় রেখে শুরুর দিকে ALT News-এর ওয়েবসাইটের প্রযুক্তি-সংক্রান্ত খুঁটিনাটি দায়িত্ব সামলাতেন তিনি। পাকাপাকিভাবে দায়িত্ব গ্রহণ এক বছরের মাথায়। তার পর থেকে ALT News-কে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। গুজরাতের প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মী মুকুল শর্মার ছেলে, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার থেকে সংবাদমাধ্যমে পা রাখা প্রতীক সিনহা সংস্থার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

আদতে কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর বাসি্দা। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে মোবাইল ফোন নির্মাণকারী সংস্থা NOKIA-তে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত ছিলেন জুবের। বন্ধু প্রতীকের সঙ্গে মিলে ALT News-এর সূচনা করেন তিনি। NOKIA-র চাকরি ছেড়ে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ALT News-এ স্থায়ীভাবে যোগ দেন। কিন্তু টেলিকম সংস্থার চাকরি অথবা সত্যতা যাচাইয়ের নেশা, দুইয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে হলে, প্রশ্নাতীতভাবে তিনি দ্বিতীয়টিকেই বেছে নেবেন বলে একটি সাক্ষাৎকারে জানান জুবের। ২০২২-এর গোড়ায় নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ২০২২-এর গোড়ায় জুবের এবং প্রতীকের নাম সুপারিশ করে Peace Research Institute Oslo (PRIO) সংস্থা।

আরও পড়ুন: গুজরাত দাঙ্গায় নিহত স্বামী, যে লড়াই জাকিয়া জাফরি লড়ছেন

ভুয়া খবরের দুনিয়ায় পা রেখে দাবানলের গতিতে ছড়িয়ে পড়া তাবড় ভুয়া খবরের পর্দা ফাঁস করেছে ALT News। ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি রিপোর্টে থাকা ভুয়া ছবি শনাক্ত করে সাড়া ফেলে দেয় তারা। দেশের প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত ৩২৪ পাতার ওই রিপোর্টে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের একাধিক কাজের বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়। লেখা হয়, ‘দেশের সীমান্তে মোদি সরকার কী কী কাজ করেছে, জানলে গর্ববোধ করবেন ভারতীয়রা। সরকারের প্রশংসা না করে পারবেন না।’

দেশের সীমান্তে সরকারের কাজের ফিরিস্তি দিতে গিয়ে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফ্লাডলাইট বসানোর কথা উল্লেখ করা হয় ওই রিপোর্টে। বিভিন্ন স্টেডিয়ামে রাত্রিকালীন ম্যাচের জন্য যেমন জোরালো আলোর স্তম্ভ থাকে, তাকেই ফ্লাডলাইট বলে। সীমান্তে অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাসী কাজকর্ম, পাচারচক্রের ওপর নজরদারি চালাতে এমন ফ্লাডলাইট বসানো হয়েছে বলে জানানো হয়। প্রকাশ করা হয় তার ছবিও, যাতে আলোর বন্যায় ভেসে যাওয়া সীমান্তের রূপরেখা তুলে ধরা হয় সকলের সামনে। মুহূর্তের মধ্যে সরকারি মন্ত্রী-আমলাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে সংবাদমাধ্যম উপচে পড়ে ওই ছবিতে। মহাকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেড় লক্ষ ফ্লাডলাইটে আলোকিত সীমান্তের অপরূপ সৌন্দর্য ধরা পড়েছে বলে প্রকাশিত হয় একের পর এক প্রতিবেদন।

কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের রিপোর্টে যে ফ্লাডলাইটের ছবি তুলে ধরা হয়েছে, সেটি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত নয়, বরং স্পেন-মেক্সিকো সীমান্তে বসানো ফ্লাডলাইট বলে তুলে ধরে ALT News। শুধু তাই নয়, ২০১৩ সালের শেষ দিকেই ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে ফ্লডলাইট বসানোর কাজ সম্পূর্ণ হয়েছিল বলে জানায় তারা। বিষয়টি চাউর হতেই ‘ভুল’ স্বীকার করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অভ্যন্তরীণ স্তরে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মেহঋষি ‘ভুল'-এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। কোথা থেকে ওই ছবি নেওয়া হয়েছে, কে রিপোর্টে ওই ছবি বসিয়েছেন, তা বিশদে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান। সীমান্ত-রক্ষী বাহিনীর কাছ থেকে ওই ছবি পাঠানো হয়ে থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসের ট্যুইটার হ্যান্ডেলে হিন্দু-মুসলিম সংহতি তুলে ধরতে একটি ছবি পোস্ট করা হয়। হিন্দু এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তিকে কংগ্রেসের পোস্টার ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। উত্তরপ্রদেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষ কংগ্রেস শাসনে ফিরতে চাইছেন বলে দাবি করা হয় দলের তরফে। কিন্তু সত্যতা যাচাই করে ALT News জানায়, ছবিটি বিকৃত করা হয়েছে। ওই দুই ব্যক্তি আসলে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি বসানো তৃণমূলের পোস্টার হাতে ছবি তুলেছিলেন তাঁরা। সেটিকে বিকৃত করে কংগ্রেসের পোস্টার হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালিবান শাসন পুনরায় কায়েম হওয়ার পর হাজার হাজার ভিডিও উঠে আসে সোশ্যাল মিডিয়ায়। তার মধ্যে একটি ভিডিওয় হেলিকপ্টার থেকে এক ব্যক্তিকে দড়ি বাঁধা অবস্থায় ঝুলতে দেখা যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় চাউর হয়ে যায়, আমেরিকার হয়ে অনুবাদকের কাজ করায় স্থানীয় এক ব্যক্তিকে হেলিকপ্টার থেকে ঝুলিয়ে ঘোরানো হচ্ছে, যাতে দেশের বাকি নাগরিকরা ভয় পান। কিন্তু সত্যতা যাচাই করে জানা যায়, আসলে তালিবানেরই এক সদস্য উঁচু স্তম্ভে নিজেদের পতাকা বসানোর চেষ্টা করছিলেন। বারবার তাতে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। তাই আগুপিছু করছিল হেলিকপ্টারটি।

হরিদ্বারের ‘ধর্ম সংসদ’ থেকে মুসলিম হত্যায় উসকানি দিতে গেরুয়া বসনধারীদের ঘৃণাভাষণ হোক, বা বজরং মুনি নামের এক গেরুয়া বসনধারীর মুসলিম মহিলাদের ধর্ষণের নিদান, অথবা মুসলিম মহিলাদের অনলাইনে নিলামে তোলা, প্রতি ক্ষেত্রেই ঘৃণার রাজনীতি, সাম্প্রদায়িক অশান্তির বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছে ALT News। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির ভুয়া দাবিরও পর্দা ফাঁস করেছে তারা। শুধু রাজনীতি নয়, বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য এবং ভাইরাল ভিডিও-সংক্রান্ত সত্যাসত্য তুলে ধরার কাজও লাগাতার করে চলেছে ALT News। তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান মাথায় সিঁদুর পরে সংসদে শপথ নেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন মুসলিম ধর্মগুরুরা। সেই সময়ও প্রতিবাদে সরব হন জুবের। এমনকি নুসরতকে যাঁরা হুমকি দিচ্ছেন, তাঁরা কারা, তাঁদের ব্যাকগ্রাউন্ড কী, সেই সত্যতা তুলে ধরেছিলেন তিনি।

সম্প্রতি পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে বিজেপি-র বহিষ্কৃত নেত্রী তথা মুখপাত্র নূপুর শর্মা একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সাংবাদিকদের মধ্যে জুবেরই প্রথম নূপুরের বিতর্কিত মন্তব্যের ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন। নূপুরের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেননি তিনি। বরং প্রশ্ন তুলেছিলেন ওই চ্যানেল এবং সঞ্চালকের আচরণ নিয়ে। সাম্প্রদায়িক অশান্তিতে ইন্ধন জোগান যাঁরা, কেন তাঁদের গণমাধ্যমে এই ধরনের মন্তব্য করার সুযোগ দেওয়া হয়, প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি। তারপরই বিষয়টি চরম আকার ধারণ করে। ইসলামি দেশগুলিতে তীব্র আক্রমণের মুখে পড়তে হয় ভারতকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, নিজেদের দলের সদস্যের মন্তব্যের জন্য গোটা দেশের হয়ে ক্ষমাও চাইতে হয় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে। বহিষ্কার করা হয় নূপুর এবং আরও এক নেতাকে। বিজেপি সব ধর্মকে সম্মান করে বলে বিবৃতি দিতে হয়।

নূপুর যদিও গোটা ঘটনার দায় জুবেরের ঘাড়েই চাপান। জুবের ওই ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট না করলে, বিতর্ক তৈরি হতো না বলে মন্তব্য করেন। এমনকী, তিনি যে হুমকি পাচ্ছেন, তার জন্যই জুবেরকে দায়ী করেন। অন্য দিকে, ভিডিওটি পোস্ট করার জন্য হুমকি পেতে শুরু করেন জুবেরও। এরপরই ২৭ মার্চ জুবেরকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। ২০২০-র একটি মামলায় জেরা করতে ডেকে পাঠানো হয় জুবেরকে, যে মামলায় আগেই জুবেরকে গ্রেপ্তারি থেকে রক্ষাকবচ দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। কিন্তু এক মামলায় জেরার জন্য ডেকে, অন্য একটি মামলায় জুবেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

দিল্লি পুলিশ জানায়, চার বছর আগে, ২০১৮ সালে একটি ট্যুইট করেছিলেন জুবের, যাতে হিন্দু ধর্মর অবমাননা হয়েছে বলে কয়েক দিন আগে একটি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ট্যুইটার হ্যান্ডল থেকে অভিযোগ পেয়েছে তারা। @balajikijaiin আইডি-তে তৈরি ওই ট্যুইটার হ্যান্ডলটির নাম ‘হনুমান ভক্ত’। চার বছর আগের জুবেরের ট্যুইটের একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করে দিল্লি পুলিশের ট্যুইটার হ্যান্ডলকে ট্যাগ করে অভিযোগ জানান জনৈক ‘হনুমান ভক্ত’। তার ভিত্তিতে জুবেরের বিরুদ্ধে ১৫৩-এ (দুই গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতায় ইন্ধন জোগানো) এবং ২৯৫ (ধর্মীয় অবমাননা) ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। নিয়মমাফিক, এই দুই মামলায় কাউকে গ্রেপ্তার করার আগে, অভিযুক্তকে নোটিস পাঠাতে হয়। কিন্তু জুবেরের ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে দাবি তাঁর সতীর্থ প্রতীকের। এমনকী, এফআইআরের কপি পর্যন্ত জুবেরের আইনজীবীকে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, যে পুলিশকর্মীরা জুবেরকে গ্রেফতার করেন, উর্দির ওপর তাঁদের কারও নামের উল্লেখ ছিল না বলেও অভিযোগ সামনে এসেছে।

২০১৮ সালের ২৪ মার্চ পোস্ট করা ট্যুইটের জন্য জুবেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাতে একটি হোটেলের ছবি রয়েছে, যার নাম ‘হানিমুন হোটেল’ থেকে পাল্টে ‘হনুমান হোটেল’ করার চিহ্ন স্পষ্ট। ওই ছবিটি পোস্ট করে চার বছর আগে ট্যুইটারে জুবের লেখেন, ‘২০১৪-র আগে: হানিমুন হোটেল, ২০১৪-র পর: হনুমান হোটেল, #SanskaariHotel।' অভিযোগকারীর দাবি, হনুমান ব্রহ্মচারী ছিলেন। তাঁকে মধুচন্দ্রিমার সঙ্গে জুড়ে হিন্দু ধর্মর অবমাননা করেছেন জুবের। বিকৃত ছবি পোস্ট করে জুবের ধর্মীয় অবমাননা করেছেন বলে দাবি দিল্লি পুলিশেরও। কিন্তু যে ছবিটি ঘিরে বিতর্ক, সেটি আসলে ১৯৮৩ সালে হৃষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় তৈরি ‘কিসিসে না কাহা’ ছবির একটি দৃশ্য। উৎপল দত্ত, দীপ্তি নাভাল, ফারুখ শেখ অভিনীত ছবিটি সেন্সর বোর্ডের ছাড়পত্র পেয়েই মুক্তি পেয়েছিল। ওই বিশেষ দৃশ্যটি নিয়ে হাজার হাজার পোস্ট রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ইউটিউবে গোটা ছবিটিই দেখার সুযোগ রয়েছে।

 

তাই ওই ট্যুইটের জন্য, চার বছর পর অভিযোগ দায়ের এবং জুবেরের গ্রেপ্তারি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে অজ্ঞাত এই ট্যুইটার হ্যান্ডেলটিকে ঘিরে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ট্যুইটার হ্যান্ডেলটির অনুগামীর সংখ্যা ছিল ৩। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে তা তৈরি করা হয়। জুবেরের গ্রেপ্তারির আগে পর্যন্ত মাত্র একটি ট্যুইট করা হয় ওই হ্যান্ডেল থেকে। জুবেরের গ্রেপ্তারির পর সেটির অনুগামী সংখ্যা বেড়ে ২৪৫ হয়েছে। ১২৫টি হ্যান্ডেলকে অনুসরণ করছে হ্যান্ডলটি।

জুবেরের গ্রেপ্তারিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাস্বরূপই দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, নূপুরকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে অপদস্থ হতে হয়েছে বিজেপি-কে। কোথাও না কোথাও একটি উদাহরণ তৈরিরও প্রচেষ্টা রয়েছে যে, পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে মন্তব্যে যদি বিতর্ক হয়, তাহলে হিন্দু দেব-দেবীদের নিয়ে মন্তব্য করেও পার পাওয়া যাবে না। ইতিমধ্যেই জুবেরের গ্রেপ্তারির তীব্র নিন্দা করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। জুবেরের গ্রেপ্তারি ভারতে মানবাধিকার কর্মীরা কী বিপদের মধ্যে রয়েছেন, তারই প্রমাণ বলে মন্তব্য করেছে তারা। এডিটর্স গিল্ড অফ ইন্ডিয়াও জুবেরের গ্রেপ্তারির বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। একদিকে জার্মানিতে যখন প্রধানমন্ত্রী অনলাইন এবং অফলাইন মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার পক্ষে সওয়াল করছেন, সেই সময় জুবেরের গ্রেপ্তারি হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছে তারা।

গ্রেপ্তারির আগে পর্যন্ত এ-যাবৎ জুবেরের বিরুদ্ধে কমপক্ষে পাঁচটি মামলা দায়ের হয়, যার মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ব্যক্তির সঙ্গে বাদানুবাদ চলাকালীন তাঁর নাবালিকা মেয়ের ছবি পোস্ট করায় অভিযুক্ত জুবের। এর পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে বলেই মত তাঁর। যে কারণে বাড়ি ছেড়েছেন জুবের। একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘বাড়ির সকলে আমাকে নিয়ে প্রচণ্ড ভীত ছিলেন। হয় কাজ ছাড়তে হবে নয় বাড়ি ছাড়তে হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন। বাড়ি ছেড়ে চলে যাই সেটা হয়তো কেউ চাননি। ভেবেছিলেন, ভয় দেখালে কাজ থেকে সরে আসব হয়তো।’’ জুবেরের সতীর্থ প্রতীকের দাবি, মুসলিম পরিচয়ের জন্যই এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে জুবেরকে। মুসলিমদের স্বাধীন, নিরপেক্ষ কণ্ঠস্বর রোধ করাই লক্ষ্য সরকারের। আবার অনেকের মতে, গত কয়েক বছরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গিয়েছে। সরকারের ভুল-ত্রুটি ধরার চেয়ে পদলেহনেই ব্যস্ত তারা। সত্যাসত্য তুলে ধরার দায়িত্ব তাই নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন জুবের। তারই মাশুল গুনতে হচ্ছে তাঁকে।

 

 

More Articles