সুনীতাদের ফেরাতে ফেরাতে আগামী বছর! যে দুঃসংবাদ দিল নাসা

Sunita Williams: সম্প্রতি নাসার তরফে জানানো হয়েছে, সুনীতাদের ফেরাতে ফেরাতে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিও হয়ে যেতে পারে।

দু'মাসেরও বেশি সময় হয়ে গেল, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে আটকে রয়েছেন মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর-সহ আরও ৯ মহাকাশচারী। ৯ দিনের মিশন লম্বা হতে হতে পেরিয়েছে দু'মাস। এত দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশে থেকে থেকে নানাবিধ শারীরিক সমস্যার মুখে পড়তে শুরু করেছেন মহাকাশচারীরা। দুর্বল হয়ে যাচ্ছে শরীরের সমস্ত হাড়। তাঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সর্বৈব ভাবে করলেও কোনও মতেই সাফল্য পাচ্ছে না নাসা। এই পরিস্থিতিতে আরও দীর্ঘ হতে পারে প্রতীক্ষা। এমনকী আগামী বছরের আগে না-ও ফেরা হতে পারে সুনীতাদের। এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।

সম্প্রতি নাসার তরফে জানানো হয়েছে, সুনীতাদের ফেরাতে ফেরাতে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিও হয়ে যেতে পারে। সেই সময় আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যাবে স্পেস এক্সের ক্রু ড্রাগন। তাতে করে পৃথিবীতে ফিরতে পারবেন তাঁরা। গত ৫ জুন নাসার একটি মিশনে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যান সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর-সহ মোট ৯ জন মহাকাশচারী। যে মহাকাশযানে চেপে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন সুনীতারা, সেই স্টারলাইনে একাধিক যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যেতে থাকে সেখানে পৌঁছনোর পরেই। তার উপর আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কাছেই রাশিয়ার একটি উপগ্রহ ফেটে গিয়েছিল। তার টুকরো ছড়িয়ে পড়ে স্পেস স্টেশনের চারপাশে বাজে ভাবে। তাঁদের ফেরার কথা ছিল ২৬ জুন। সেই ফেরার পথে কাঁটা হিসেবে দেখা দেয় স্টারলাইন মহাকাশযানের একাধিক ত্রুটি। রিঅ্যাকশন কন্ট্রোল প্যানেল সিস্টেমের একের পর এক থ্রাস্টার ফেটে যাওয়া, হিলিয়াম গ্যাস লিক-সহ আরও একাধিক সমস্যা ক্রমশ বিলম্বিত করছিল সুনীতাদের ফেরা।

আরও পড়ুন: ক্ষয়ে যাচ্ছে মহাকাশচারীদের শরীরের হাড়! সুনীতাদের ফেরাতে নাসার হাতে আর মাত্র ১৯ দিন সময়

বাণিজ্যিক ভাবে মহাকাশ সফরের রাস্তা সুগম করার উদ্দেশ্যেই পরীক্ষামূলক ভাবে স্পেস স্টেশনে পাঠানো হয়েছিস সুনীতাদের। প্রাথমিক ভাবে কথা ছিল ২১ দিনের মাথাতেই পৃথিবীতে ফেরৎ আসবেন তাঁরা। সূত্রের খবর, স্টারলাইন ওড়ার আগেই নাকি রকেটটিতে হিলিয়াম লিকেজের সমস্যা ধরা পড়েছিল। স্পেস স্টেশনে পৌঁছনোর পর খারাপ হয়ে যায় পাঁচটি ‘ম্যানুভরিং থ্রাস্টার’ । ধীর গতির ‘প্রপেল্যান্ট ভালভ্’-এও সমস্যা দেখা যায়। তার পরেও আশা ছাড়েনি নাসা এবং বোয়িং ইঞ্জিনিয়ারেরা। মহাকাশযানের সমস্যাগুলি খুঁজে বের করে এনে সেগুলিকে সারানোর যারপরনাই চেষ্টা করেছেন তাঁরা। এ মাসের গোড়ায় একবার স্টারলাইন মহাকাশযানটিকে চালু করার চেষ্টা করেছিলেনও তারা। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্য়র্থ হয়।

Why NASA astronauts Butch Wilmore and Sunita Williams may be stuck in space until next year

ইঞ্জিনিয়ারেরা আশাবাদী হলেও স্টারলাইনের ওই মহাকাশযানে করেই সুনীতাদের ফেরত আনতে ভয় পাচ্ছে নাসা। স্পেস স্টেশন থেকে পৃথিবীতে আসার পথে বড় কোনও বিপদ ডেকে আনবে না ওই ত্রুটিপূর্ণ মহাকাশযান, তা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছে না তারা। নাসার কর্মকর্তারা আগেই জানিয়েছিলেন, ইঞ্জিনিয়ারেরা সুনীতাদের বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানের যান্ত্রিক ত্রুটি সমাধানের জন্য দিনরাত কাজ করছেন। প্রয়োজনে বোয়িং-এর পরিবর্তে সাহায্য নিতে হতে পারে স্পেস-এক্স মহাকাশযানেরও। মহাকাশচারীদের বোয়িংয়ে ফেরানোর ঝুঁকি নেওয়া হবে, না কি স্পেস এক্সের সাহায্য নেওয়া হবে সে নিয়েও নাসার বিজ্ঞানীদের মধ্যে চলছিল মতবিরোধ। শেষমেশ নাসা জানিয়েছে, আগামী বছরের গোড়ার দিকে স্পেস এক্সেই ফিরতে পারেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: স্টারলাইন-দুর্বিপাকে মহাকাশেই আটকে সুনীতারা! আদৌ ফেরা হবে ৯ নভোশ্চরের?

এই পরিস্থিতির জন্য প্ল্যান বি ভেবেই রেখেছিল নাসা। ইতিমধ্যেই ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের সঙ্গে যৌথ ভাবে নতুন একটি মহাকাশযান মহাকাশ স্টেশনে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। মিশনটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ক্রু-৯’। অগস্টের মাঝামাঝি কিংবা সেপ্টেম্বরের গোড়াতেই ওই মহাকাশযানটির দু’জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে। মহাকাশ স্টেশন থেকে সুনীতাদের নিয়ে ফের পৃথিবীর দিকে পাড়ি দেবে যানটি। আপাতত তাঁদের সুস্থভাবে ফেরানোই বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্য। কিন্তু এই ক্রু-৯-এর পৃথিবীতে ফিরতে ফিরতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি। নাসা মনে করছে, সব ঠিকঠাক চললে ফেব্রুয়ারি মাসে ফিরতে পারেন সুনীতারা। তবে প্রশ্ন উঠছে, ততদিন কি অক্ষত শরীরে মহাকাশে থাকতে পারবেন সুনীতারা। কিছু দিন আগেই জানা গিয়েছিল, সুনীতাদের দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার ফলে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা হচ্ছেই। ক্রমশ শরীরের সমস্ত হাড় ভঙ্গুর হয়ে যাচ্ছে তাঁদের। একই সঙ্গে পেশিতেও টান ধরছে। এই পরিস্থিতিতে আরও সাত-আট মাসের প্রতীক্ষার ধকল কি সহ্য করতে পারবেন মহাকাশচারীরা? সেটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

More Articles