ক্ষয়ে যাচ্ছে মহাকাশচারীদের শরীরের হাড়! সুনীতাদের ফেরাতে নাসার হাতে আর মাত্র ১৯ দিন সময়
Sunita Williams and Butch Wilmore: স্পেস স্টেশনে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে সুনীতাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি। এত দীর্ঘসময় মহাকাশে কাটানোর ফলে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে সুনীতা-সহ বাকিদের শরীরের হাড়।
ন'দিনের মিশন দীর্ঘতর হতে হতে পৌঁছেছে ৫২ দিনে। এখনও অনিশ্চিত সুনীতা উইলিয়ামসদের ঘরে ফেরা। গত ৫ জুন নাসার একটি মিশনে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গিয়েছিলেন সুনীতা ও বুচ উইলমোর-সহ আরও ৯ মহাকাশচারী। তার পর কেটে গেছে প্রায় দু-মাসেরও বেশি। নাসার যে মহাকাশযানে চেপে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন সুনীতারা, সেই স্টারলাইনের যান্ত্রিক ত্রুটি আর দৈব দুর্বিপাকের জেরেই সেখানেই আটকা পড়েন মহাকাশচারী। তাঁদের ফেরার কথা ছিল ২৬ জুন। কিন্তু অগস্ট মাসের পাঁচ তারিখ পেরিয়ে গেলেও এখনও পৃথিবীতে ফেরা হল না সুনীতাদের।
এদিকে স্পেস স্টেশনে ক্রমশ খারাপ হচ্ছে সুনীতাদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি। এত দীর্ঘসময় মহাকাশে কাটানোর ফলে ক্রমশ দুর্বল হচ্ছে সুনীতা-সহ বাকিদের শরীরের হাড়। এমনকী পেশিও তাঁদের শিথিল হতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার ক্ষেত্রে এই সব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়া অবশ্য নতুন নয়। মহাকাশচারীরা এই ধরনের সমস্যার সঙ্গে পরিচিতও বটে। তবে তারপরেও মহাকাশ স্টেশনে আটকে থাকা মহাকাশচারীদের জন্য যে অনিশ্চয়তা ক্রমশ বাড়ছেই, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। এরই মধ্যে নাসার হাতে কমছে সময়।
আরও পড়ুন: স্টারলাইনে আস্থা হারাচ্ছেন না! স্পেস স্টেশন থেকে যে বার্তা দিলেন সুনীতা উইলিয়ামস
স্টারলাইনের যে মহাকাশযানটিতে করে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন সুনীতারা, সেখানে পৌঁছে একাধিক বিপদের মধ্যে পড়ে সেটি। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কাছেই রিসার্স নামে রুশ একটি উপগ্রহের বিস্ফোরণ হয়। যা টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে গিয়েছিল স্পেস স্টেশনের আশপাশে। এর পর স্টারলাইন বোয়িং সিএসটি-১০০ মহাকাশযানটিকে একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা যায়। হিলিয়াম গ্যাস লিক হতে থাকে মহাকাশ যানটি থেকে। খারাপ হয়ে যায় মহাকাশযানের রিঅ্যাকশন কন্ট্রোল প্যানেল সিস্টেমের ২৮টি থ্রাস্টার। ফলে ওই স্পেস স্টেশনেই আটকা পড়েন সুনীতারা।
দেখতে দেখতে সেখানেই তাঁরা কাটিয়ে ফেলেছেন ৫২টি দিন। চেষ্টা করেছেন হাসিখুশি থাকার। নানা কাজে ব্যস্ত রেখেছেন নিজেদের। তবে শরীর ক্রমশ খারাপ হতে শুরু করেছে। এদিকে লাগাতার হিলিয়াম লিক হতে থাকে স্টারলাইন মহাকাশযানটিতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেনি নাসা। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, সুনীতা-বুচদের উদ্ধারে অন্য কোনও মহাকাশযান পাঠাতে চলেছে নাসা। কিন্তু জানা যায়, স্টারলাইন মহাকাশযানে আরও শক্তিশালী থ্রাস্টার অক্ষত রয়েছে, যা ডি-অরবিট বার্ন করে পৃথিবীতে ফেরত আনতে পারে মহাকাশযানটিকে।
কিন্তু এত গুলো দিন কেটে গেলেও তেমন কিছু ঘটতে দেখা যায়নি। যদিও নাসার তরফে দাবি, দু'বার স্টারলাইন মহাকাশ যানটিকে পৃথিবীতে ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু লাগাতার হিলিয়াম গ্যাস লিক হয়ে চলায় ব্যর্থ হয় সেই প্রয়াস। এদিকে মহাকাশযান প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়েছে, তারা বোয়িং স্টারলাইনারের পরিচালনা ব্যবস্থাগুলি পরীক্ষানিরিক্ষা করে দেখেছে। আর সেই পরীক্ষার ফলাফল ইতিবাচক। ফলে ওই মহাকাশযানেই যে সুনীতাদের পৃথিবীতে ফেরানো সম্ভব বলে জানান তারা। আর নাসা আপাতত ভরসা রেখেছে সেই সংস্থার উপরেই।
কিন্তু নাসার হাতে সময় ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। সূত্রের খবর, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ওই স্টারলাইন মহাকাশযানটি সর্বাধিক ৯০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। আর তার পরে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ওই মহাকাশ যান। কারণ ওই মহাকাশযানের ব্যাটারি ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। আর মাত্র ১৯ দিন আছে নাসার হাতে। তার মধ্যেই যা করার করতে হবে নাসাকে। জানা গিয়েছে, স্টারলাইন মহাকাশযানের সমস্যাগুলি খুঁজে বের করে সেগুলি সমাধানের জন্য অক্লান্ত চেষ্টা করে চলেছেন নাসা ও বোয়িং ইঞ্জিনিয়ারেরা। কীভাবে হিলিয়াম লিক বন্ধ করা যায়, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই নাকি পাঁচটি হিলিয়াম লিক খুঁজে পেয়েছেন তারা, যার জন্য নিরাপদে ফেরানো যাচ্ছে না সুনীতাদের।
আরও পড়ুন: স্টারলাইন-দুর্বিপাকে মহাকাশেই আটকে সুনীতারা! আদৌ ফেরা হবে ৯ নভোশ্চরের?
তবে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে। নাসার হাতে একে সময় কম, তার উপর ক্রমশ খারাপ হচ্ছে সুনীতা-সহ অন্যান্য মহাকাশচারীদের শরীরও। তবে এর মধ্য়েই একটি বিকল্প পরিকল্পনার কথা শুনিয়েছে নাসা। যা মহাকাশচারীদের ফেরানোর পক্ষে আশাজনক হতে পারে। সূত্রের খবর, ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেস এক্সের সঙ্গে যৌথ ভাবে নতুন একটি মহাকাশযান আইএসএসে পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। সেই ‘ক্রিউ-৯’ মিশনে আরও কয়েক জন মহাকাশচারী ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। আগামী ১৮ অগস্ট ওই মহাকাশযান মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দেবে। ততদিনে বোয়িং স্টারলাইনারের ত্রুটিগুলি সংশোধন না করা গেলে ‘ক্রিউ-৯’-এর মহাকাশযানে সুনীতাদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
তেমনটা হলে আরও অন্তত ১৩ দিন মহাকাশেই থাকতে হতে পারে সুনীতাদের। আর তার মধ্যেই যদি স্টারলাইন যান্ত্রিক গোলযোগ সামলে পৃথিবীর উদ্দেশে রওনা দিতে পারে, তাহলে আরও ভালো। আর তা না হলে সুনীতাদের শরীর আরও তেরো দিন সুস্থ থাকবে তো? সমস্তটা মিলিয়েই বেশ উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ঘিরে রয়েছে সুনীতাদের ফেরা নিয়ে।