মেয়ের বদলে মা! মানিকতলা থেকে কেন সরিয়ে দেওয়া হলো সাধন কন্যা শ্রেয়াকে?

Shrreya Pande Maniktala: শুধুমাত্র সাধন পাণ্ডের সহধর্মিণী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহপাঠী হিসেবে নয়, সুপ্তি পাণ্ডে নিজেও রাজনীতিতে যথেষ্ট সক্রিয় একজন মুখ।

এই তো ক'দিন আগেও তাঁর ছবি দেওয়া ফ্লেক্স-পোস্টার হোডিংয়ে ভরে ছিল গোটা বিধানসভা এলাকা। হেন কোনও মোড় নেই যেখানে তাঁর ছবি ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরেই যাঁর নাম এবং ছবি মানিকতলা বিধানসভার প্রতিটা ফ্লেক্স-পোস্টার-হোডিংয়ের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে থাকত, তিনি শ্রেয়া পাণ্ডে। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় যতবার মানিকতলা বিধানসভায় প্রচারে এসেছেন কিংবা যত ফ্লেক্স পোস্টার লাগানো হয়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের নির্দেশে, সেখানেও শ্রেয়া পাণ্ডের উপস্থিতি নজর কেড়েছে। বরং এবারের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডেকেই গত দুই-আড়াই বছরে তেমনভাবে প্রচারের আলোয় দেখাই যায়নি। প্রচারের সমস্ত আলো গত দুই-আড়াই বছরে একাই টেনে নিয়েছিলেন অধুনা প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী তথা দশবার বিধায়ক হিসেবে জিতে রেকর্ড করা সাধন পাণ্ডের কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডে।

শ্রেয়া জানেন, কীভাবে ক্যামেরার ফ্ল্যাশের আলো নিজের দিকে নিতে হয়, কীভাবে যাবতীয় স্পট লাইটকে নিজের বৃত্তে আনতে হয়। একসময় রুপোলি পর্দায় বেশ কিছু সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শ্রেয়া। অভিনেত্রী হিসেবে খুব একটা কিছু করতে না পারলেও পর্দায় নিজেরছাপ রাখার চেষ্টা করেছিলেন। বোধহয় অভিনেত্রী হিসেবে নিজেকে আরও একটু বড় জায়গায় নিয়ে যাওয়ার তাগিদেই মুম্বইতেও দীর্ঘদিন পরে থেকেছেন। টুকটাক কিছু কাজও করছিলেন। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় শ্রেয়াকে দেখা যায় মন্ত্রী সাধন পাণ্ডের সঙ্গে প্রচারে৷ সম্ভবত ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকেই প্রথমবার সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে বাবার প্রচারের সঙ্গী হয়ে ভোট ময়দানে উত্তীর্ণ হন শ্রেয়া। ঠিক যেমন কলকাতার আরও অনেক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা নেত্রীদের সন্তানরাও ২০২১-এর নির্বাচনে বাবা-মায়ের প্রচারের সঙ্গী হন। তাদের অনেকেই ২০২১-এর কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থীও হন। কেউ কেউ জায়গা পান তৃণমূলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের বিভিন্ন পদে কিন্তু সবচেয়ে বড় পদে স্থলাভিষিক্ত হন শ্রেয়া পাণ্ডে। সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পরে গোটা বিধানসভার আহ্বায়ক হয়ে যান শ্রেয়া পাণ্ডে! কলকাতার রাজনীতিতে হঠাৎই এক নতুন নেত্রীর উত্থান দেখেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। হতে পারেন তিনি 'স্টার কিড' (নিন্দুকদের ভাষায় 'নেপো কিড'), হতে পারে রাজনীতিতে এর আগে অবধি তাঁর অভিজ্ঞতা শূন্য কিন্তু মানিকতলা বিধানসভায় দীর্ঘদিন ধরে বটগাছের ছায়া দেওয়া (তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সাধন পাণ্ডের আগের নির্বাচিত ক্ষেত্রের নামও ছিল বটতলা। আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে যে আসনটি এখন আর নেই) বাবা শ্রী সাধন পাণ্ডের মৃত্যুর পরপরই এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব শ্রেয়ার ওপর তুলে দেয় তৃণমূল নেতৃত্ব। শ্রেয়াও দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে থাকেন। ২০২১-এর বিজেপি প্রার্থী বর্তমানে এআইএফএফের সভাপতি কল্যাণ চৌবে মানিকতলা বিধানসভার ফলাফল নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে না গেলে হয়তো এতদিনে মানিকতলার উপনির্বাচন হয়েই যেত এবং সেই সময় চারিদিকে যা হাওয়া, তাতে মানিকতলার এক একটা গাছের পাতাও বলে দিতে পারত, সেই সময় উপনির্বাচন হলে প্রার্থী কে হতেন।

আরও পড়ুন- ২০ বছর পর হার! অর্জুনের দুর্বলতাকে কীভাবে কাজে লাগালেন পার্থ ভৌমিক?

কিন্তু মাঝের আড়াই বছরে কী এমন হলো, যাতে দলনেত্রী শ্রেয়ার বদলে প্রার্থী করলেন নিজের সহপাঠী সুপ্তি পাণ্ডেকে। হঠাৎই মানিকতলার মোড়ে মোড়ে লাগানো ফ্লেক্সের মুখ বদলে গেল! মেয়ের জায়গায় মায়ের মুখ। হঠাৎই সংবাদমাধ্যমে রটে গেল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি শ্রেয়াকে আসন্ন উপনির্বাচনের গোটা প্রক্রিয়া থেকেই বাইরে থাকতে বলেছেন। যদিও এই কথার কোনও প্রমাণ কারও কাছেই নেই। তবুও শ্রেয়া পাণ্ডের জায়গায় সুপ্তি পাণ্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের এই মনোনয়ন পেয়ে যাওয়াটা রাজনৈতিক মহলে একটু অদ্ভুতই ঠেকেছে। রাজ্য রাজনীতিতে শ্রেয়া পাণ্ডে প্রথম থেকেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত কিন্তু দলনেত্রী মনোনয়ন দিচ্ছেন সুপ্তি পাণ্ডেকে। অর্থাৎ নবীনের বদলে প্রবীণকে বেছে নিচ্ছেন। সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি এক্স পোস্ট ঘিরেও কম জলঘোলা হয়নি। পোস্টে তিনি বলছেন, সাময়িক বিরতি নিচ্ছেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে। রাজনীতি সম্ভাবনার শিল্প। সেখানে যেকোনও কারণই নানা দিক নির্দেশ করে। আমরা সেই বির্তকে না গিয়েও বলতে পারি, মেয়ের বদলে মায়ের এই মনোনয়ন পেয়ে যাওয়ার গোটা প্রক্রিয়াটা অতটাও সহজে হয়নি।

শ্রেয়া পাণ্ডের অনুগামীদের একটাই সান্ত্বনার জায়গা যে, টিকিট অন্তত 'পাণ্ডে' পরিবারের বাইরে চলে যায়নি। সুপ্তি পাণ্ডেও মনোনয়ন পেয়ে গত আড়াই বছর ধরে শ্রেয়ার পরিশ্রমকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। শ্রেয়াও মায়ের মনোনয়ন পাওয়ার পরে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কিন্তু মানিকতলার অলিগলিতে এই টিকিট বদল নিয়ে এখন নানা চর্চা।

সাধন পাণ্ডের প্রয়াণের পরে শ্রেয়া যখন প্রথম রাজনীতিতে এলেন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন নতুন ধারার রাজনীতির শুরুয়াত হবে। সাধন পাণ্ডের গোষ্ঠীর সঙ্গে পরেশ পালের গোষ্ঠীর যে সর্বজনবিদিত বিখ্যাত (পড়ুন কুখ্যাত) গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেও কুণাল ঘোষের মধ্যস্থতায় মিটিয়ে নিয়েছিলেন শ্রেয়া। পরেশ পালের সঙ্গে একই ফ্রেমে হাসিমুখে সাধন-কন্যা শ্রেয়া পাণ্ডের ছবি সেদিন বাংলার সংবাদ মাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়েছিল। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলা গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব-হিংসা হানাহানির রাজনীতি এবার শেষ হবে শ্রেয়ার হাত ধরে এমন একটা আশা বেলেঘাটা-মানিকতলা অঞ্চলের মানুষের মনে জাগিয়ে দিতে পেরেছিলেন শ্রেয়া পাণ্ডে। যেটা বাবা পারেননি, সেটা মেয়ে করে দেখাচ্ছেন। শুরুতেই, রাজনীতিতে একটা নতুন সৌজন্যের উদাহরণ রাখছিলেন শ্রেয়া। প্রবীণ নেতা পরেশ পালও মুক্তকণ্ঠে প্রশংসা করেছিলেন কন্যাসম শ্রেয়ার।

কিন্তু গোল বাধলো অন্য জায়গায়। রাজনীতিতে নতুন কেউ এলেই তাঁকে ঘিরে একটা ক্ষমতার বৃত্ত তৈরির চেষ্টা করে এক শ্রেণির রাজনৈতিক ফড়েরা। এই রাজনৈতিক ফড়েরা যুগে যুগে সব দলে আছে, থাকবে। অনুগামী-স্তাবক পরিবৃত হয়ে থাকাটা কলকাতার ডানপন্থী রাজনীতির অঙ্গাঙ্গী অংশ। অধুনা প্রয়াত কলকাতার এক কংগ্রেসি নেতা বলেছিলেন, "তুমি কত বড় নেতা সেটা নির্ভর করছে, সকালবেলা তোমার ঘরের বাইরে কত জোড়া জুতো রয়েছে তার ওপরে!” তাঁর বলা সেই কথা বাংলার রাজনীতির 'মিথ'-এ পরিণত হয়েছে। কিন্তু আজকের রাজনীতিতে এই স্তাবক, অনুগামী, গুণগ্রাহী পরিবৃত হয়ে থাকার চেয়েও জরুরি নিজেকে মানুষের কাছে নিয়ে গিয়ে মাথা নত করে মানুষের কথা শোনা। এতগুলো বছর বাদেও যে সেই অনুগামী-স্তাবক পরিবৃত হওয়ার প্রবণতা থেকে নেতা নেত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারছেন না, এটাই দুর্ভাগ্যের!

 

নিন্দুকেরা বলেন, শ্রেয়ার বহুমূল্য বিদেশি গাড়িতে তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী হিসেবে থাকেন দু'জন পেশাদার ফটোগ্রাফার! একজন মেকআপ আর্টিস্ট! তাঁর ইনস্টাগ্রাম-ফেসবুক পেজে পেশাদার সংস্থার বানানো রিলস্ বুঝিয়ে দেয় তিনি জেন-ওয়াইয়ের নেত্রী। কেতাদুরস্ত। কিন্তু সেই তিনিই নাকি মানিকতলার কনভেনার হয়ে, গোটা বিধানসভায় অঘোষিত নিয়ম চালু করেন যে, তাঁর নির্দেশ ব্যতীত কোথাও কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যাবে না! সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাঁর নাম ও ছবি বাধ্যতামূলকভাবে রাখতে হবে। প্রতিটি পাড়ায় নিজস্ব অনুগামী তৈরি করতে মনোযোগী হন। এই নয়া অনুগামীরা শ্রেয়া পাণ্ডের জন্মদিনে গোটা মানিকতলা বিধানসভা জুড়ে ফ্লেক্স লাগায় 'মানিকতলার দিদিভাই' লিখে। পাড়ায় পাড়ায় তাঁর জন্মদিন পালিত হয় বাজির সেল ফাটিয়ে, রাস্তার মোড়ে বিরাট কেক কেটে!

মনে রাখতে হবে,কলকাতার রাজনীতিতে মানিকতলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধানসভা। এই বিধানসভার ৮ টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২টি তৃণমূল কংগ্রেসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুই নেতার। পরেশ পাল এবং অতীন ঘোষ। অতীন ঘোষ আবার কলকাতা কর্পোরেশনের ডেপুটি মেয়রও! আছেন অনিন্দ্য রাউত এবং শুক্লা ভোরের মতো দু'জন বোরো চেয়ারম্যান। বিধানসভা আলাদা হলেও ২৮ নম্বর ওয়ার্ড একদম মানিকতলা লাগোয়া। এই ওয়ার্ডেই থাকেন উত্তর কলকাতায় তৃণমূলের এই মুহূর্তের অন্যতম প্রভাবশালী মুখ কুণাল ঘোষ। কুণাল ঘোষ প্রকাশ্যে বারবার সাধন পাণ্ডেকেই নিজের রাজনৈতিক অভিভাবক বলে সম্মান জানিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে যে শ্রেয়া পাণ্ডেকে নিয়ে পরেশ পালের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মেটানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছেন, শেষ দেড় বছর সেই শ্রেয়া সম্পর্কেই প্রকাশ্যেই নাম না নিয়ে সমালোচনা করেছেন! আবার এই কুণাল ঘোষই বারবার মানিকতলা বিধানসভায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের নিয়ে বসেছেন। সুপ্তি পাণ্ডের নাম দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রকাশ্যে আসার আগে, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তিন-চার জন নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম থেকেছেন! দলনেত্রীও কুণাল ঘোষকে মানিকতলার নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক করে দিয়েছেন!

দীর্ঘদিন ধরে মানিকতলা, পূর্বতন বটতলা এবং বেলেঘাটা অঞ্চলে প্রথমে কংগ্রেস এবং পরবর্তীতে তৃণমূল কংগ্রেস করা একটা বড় অংশের মানুষের কাছে নেতা ছিলেন একজনই, সাধন পাণ্ডে। সাধন পাণ্ডের প্রতি এই অংশের শ্রদ্ধা আজও এতটুকুও কমেনি কিন্তু সাধন পাণ্ডের প্রয়াণের পরে সেই পাণ্ডে পরিবারের অনুগতদের মধ্যেও বিভাজন তৈরি হয়। তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, এই বিভাজন করিয়ে ছিল নব্য সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীরা। সাধন পাণ্ডের পুরোনো অনুগামীদের অনেকের সঙ্গেই বিবাদ চরমে ওঠে শ্রেয়ার। পাডায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা শ্রেয়ার নব্য অনুগামীরা নাকি পুরনো নেতাদের সম্মান দিতেন না। পুরনোদের একপ্রকার সরিয়েই দেওয়া হচ্ছিল দলের মূল স্রোত থেকে! যাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল তারা কিন্তু সবাই-ই একসময় সাধন পাণ্ডেরই অনুগামী ছিলেন।এমনকী মানিকতলা বিধানসভার অন্তর্গত বিভিন্ন দুর্গাপুজো কমিটিগুলোতেও শ্রেয়া পাণ্ডেকে রাখতেই হবে এমন অদ্ভুত আবদারও করা হতো শ্রেয়ার অনুগামীদের তরফ থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার কথায়, "সাধন পাণ্ডে যা কোনওদিন করেননি, শ্রেয়ার অনুগামীরা সেসব করেছে।যেমন, বিভিন্ন নির্মীয়মান বহুতল থেকে প্রতি স্কোয়ার ফুটে টাকা দিতে হতো নির্মাণকারী সংস্থাকে! সেসব বহুতলের সব যে কর্পোরেশনের আইন মোতাবেক হয়েছে তাও নয়। বহু বেআইনি নির্মাণ হয়েছে এই এলাকায় স্রেফ প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে!” এছাড়া রোজভ্যালি চিটফান্ড মামলার চার্জশিটে শ্রেয়ার নাম সরাসরি এসেছে। এত অল্প বয়সে দুর্নীতিতে নাম জড়িয়ে যাওয়াটাকে ভালো চোখে দেখেননি তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। এরকম অজস্র অভিযোগ মানিকতলার রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে প্রায়ই শোনা যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন মানিকতলার প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এসব অভিযোগ যে তাঁর কানে পৌঁছয়নি এমন নিশ্চয়তা কে দিতে পারে?

আরও পড়ুন- বিফলে গেল ক্যামেরামুখী ধ্যান! বিবেকানন্দের কাছেই হেরে গেলেন নরেন্দ্র মোদি?

এটাও সত্যি যে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে ফলাফল। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে এই মানিকতলা বিধানসভায় সাধন পাণ্ডে জেতেন ২১ হাজারের কাছাকাছি ভোটে। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী, সেই বিধানসভাতেই মাত্র ৩ বছরের মধ্যে লিড কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র সাড়ে তিন হাজারের মতো! এই বিধানসভার ৮ টি ওয়ার্ডের ২টিতে পিছিয়ে তৃণমূল প্রার্থী। তার মধ্যে বিধায়ক পরেশ পালের ওয়ার্ডেই প্রায় ৪ হাজার ভোটে পিছিয়ে শাসক দল। সবাই জানেন, এবারের উত্তর কলকাতার নির্বাচন কার্যত তৃণমূল নেত্রীর নিজের কাছেই ছিল প্রেস্টিজ ফাইট' (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় একটিও রোড শো বা মিটিং করেননি এই লোকসভায়)। তারপরেও মানিকতলার এই ফলে যে নেত্রী সন্তুষ্ট নন তা বলাই বাহুল্য। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারি থেকে কনভেনার হিসেবে কাজ করা শ্রেয়া পাণ্ডের পারফরম্যান্সও যে আতসকাঁচের তলায় আসবে, সেটাই স্বাভাবিক।

বরং সুপ্তি পাণ্ডে রাজ্য রাজনীতির পরিচিত মুখ না হলেও, উত্তর কলকাতায় যারা রাজনীতির হাল হকিকত জানেন, তাদের কাছে পরিচিত। শুধুমাত্র সাধন পাণ্ডের সহধর্মিণী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহপাঠী হিসেবে নয়, সুপ্তি পাণ্ডে নিজেও রাজনীতিতে যথেষ্ট সক্রিয় একজন মুখ। বিশেষত দলের মহিলা কর্মীদের নিয়ে বরাবরই তিনি সক্রিয়। এছাড়া, সুমঙ্গল নামের একটি এনজিও-র মাধ্যমে নানা রকম সামাজিক কর্মকাণ্ডে রয়েছেন বহুদিন। বরং সেই সক্রিয় সুপ্তি পাণ্ডেকেই কোনও এক অজ্ঞাত কারণেই যেন গত আড়াই বছর অনেক নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকতে দেখেছেন মানিকতলার সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলররা। সুপ্তি পাণ্ডেই এবার মানিকতলায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখ। 'মানিকতলার দিদিভাই' লেখা ফ্লেক্সগুলো সরে গিয়ে 'মানিকতলা নিজের বৌদিকে চায়' লেখা ফ্লেক্সে ভরে যাচ্ছে মানিকতলার পথঘাট। এটাই বোধহয় রাজনীতি।

'থ্রি ইডিয়টস' ছবিতে প্রফেসর বিরু সহস্রবুদ্ধে ওরফে ভাইরাস বলেছিলেন,"লাইফ ইজ আ রেস! তেজ নেহি ভাগোগে.. তো কোই তুমহে কুচল কর আগে নিকল জায়েগা!” ছবির শেষে দেখা যায় বিরু সহস্রবুদ্ধের ধারণাটাই ভুল। কখনও দৌড়নোর গতিও কমানো দরকার৷ সাফল্যের পিছনে না ছুটে নিজেকে 'যোগ্যতম' করাই বেশি জরুরি, সেটা বুঝিয়েছিলেন ছবির র‍্যাঞ্চো। একই কথা বোধহয় রাজনীতির ময়দানেও একইভাবে প্রযোজ্য! একদা অভিনেত্রী হতে চাওয়া বর্তমানে রাজনীতিক শ্রেয়া পাণ্ডে নিশ্চয়ই আমির খান অভিনীত রাজ কুমার হিরানি পরিচালিত 'কাল্ট' ছবিটা দেখেছেন...।

More Articles