অশান্তির আতঙ্কে বাংলায় নিষিদ্ধ! মাত্র ৪ দিনে দেশজুড়ে 'দ্য কেরল স্টোরি'র আয় কত?
The Kerala Story Box Office Collection: পশ্চিমবঙ্গে কেন আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সিনেমা দেখলে মানুষ হিংসায় জড়িয়ে পড়বেন, অশান্তি বাড়বে?
উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশে করমুক্ত, পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ। দ্য কেরল স্টোরি সিনেমাটি বিষয়ের অধিক বিতর্কে 'হিট'! পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকার বলেছে, রাজ্যে "শান্তি বজায় রাখার" উদ্দেশ্যে করে এবং "ঘৃণা ও হিংসার" ঘটনা এড়াতে সিনেমাটি নিষিদ্ধ করা হলো। পশ্চিমবঙ্গই ভারতের প্রথম রাজ্য যেখানে দ্য কেরল স্টোরি চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ বস্তু সদা আকর্ষণীয়, কে না জানে! তাই সারা দেশে একাংশের মানুষের প্রবল বিরোধিতা এবং নিষেধাজ্ঞার ডাকের মধ্যেই মুক্তির চতুর্থ দিনে ঘরোয়া বক্স অফিসে ১০ কোটিরও বেশি আয় করেছে এই সিনেমাটি। সুদীপ্ত সেন পরিচালিত দ্য কেরল স্টোরি চলচ্চিত্রটি এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪৫.৭২ কোটিরও বেশি আয় করেছে এবং শিগগিরই ৫০ কোটির লাভের মুখ দেখতে চলেছে।
গত ৫ মে মুক্তি পেয়েছে বিপুল অমৃতলাল শাহ প্রযোজিত দ্য কেরল স্টোরি। সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আদাহ শর্মা, যোগিতা বিহানি, সিদ্ধি ইদনানি এবং সোনিয়া বালানি। ট্রেলার প্রকাশের পর থেকেই সিনেমাটির বিরোধিতা শুরু হয়। কেন এত বিতর্ক এই সিনেমা নিয়ে? চলচ্চিত্রে বলা হয়েছে, কেরলের ৩২,০০০ মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে এবং পরে সকলেই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী আইএসআইএস-এ যোগদান করেছে। এর পরে, দ্য কেরল স্টোরির নির্মাতারা এই ৩২ হাজার মেয়ের নিখোঁজের গল্পটি প্রত্যাহার করে এবং ট্রেলারের বিবরণে বলা হয়, দ্য কেরল স্টোরি আসলে কেরলের তিন মহিলার গল্প।
আরও পড়ুন- উঠে এসেছে গুজরাত দাঙ্গার ভয়াবহতা, মোদিকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্র ফের তৈরি করল বিতর্ক
টুইটারে চলচ্চিত্র বিশ্লেষক তরণ আদর্শ লিখেছিলেন, The Kerala Story ডিসটিঙ্কশন মার্কস সহ পাস করেছে। ৪ দিনে (সোমবার কর্মদিবস) ৫০ কোটি অতিক্রম করতে চলেছে এই সিনেমা। শুক্রবার ৮.০৩ কোটি, শনিবার ১১.২২ কোটি, রবিবার ১৬.৪০ কোটি, সোমবার ১০.০৭ কোটি। মোট ৪৫.৭২ কোটি।
কেরল হাইকোর্ট সিনেমাটির মুক্তির উপর স্থগিতাদেশ জারি করতে অস্বীকার করার পরে বিপুল অমৃতলাল শাহ প্রযোজিত দ্য কেরল স্টোরি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুম্বই পুলিশ জানিয়েছে, সম্প্রতি সিনেমার দলের একজন সদস্যকে নাকি অজানা এক নম্বর থেকে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ওই সদস্যকে নিরাপত্তা দিয়েছে ঠিকই তবে এই নিয়ে কোনও এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়নি কারণ পুলিশের কাছে কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি।
আরও পড়ুন- কেন চটলেন ইন্দিরা গান্ধী! কেন ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কিশোরের গান?
নিষেধাজ্ঞা জারির প্রতিক্রিয়ায়, প্রযোজক জানিয়েছেন, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটবেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে কেন আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সিনেমা দেখলে মানুষ হিংসায় জড়িয়ে পড়বেন, রাজনৈতিক ডামাডোল তৈরি হবে, অশান্তি বাড়বে? সিনেমায় দেখানো হয়েছে, কেরলের তিন মহিলাকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গোষ্ঠীতে যোগদান করেছে। কেরলের এই তিন মহিলা নাকি সন্ত্রাসবাদে 'ধর্মান্তরিত' হয়েছেন। নির্মাতারা বলছেন, বছরের পর বছর গবেষণা করেই এই সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। আর পশ্চিমবঙ্গ সরকার বলেছে, এই সিনেমা সাম্প্রদায়িক অশান্তির ইন্ধনমাত্র।
অন্যদিকে উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ, বিজেপি শাসিত দুই রাজ্যই ঘোষণা করেছে সেই রাজ্যে চলচ্চিত্রটি করমুক্ত৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহে কর্ণাটকে একটি নির্বাচনী সমাবেশে চলচ্চিত্রটির ব্যাপক প্রশংসা করেন। শুধু গেরুয়া শিবির নয় অবশ্য, বিজেপির সমালোচকরাও চলচ্চিত্রটি নিষিদ্ধ করে আখেরে সিনেমাটির বিষয়টিকে আরও আলোচ্য ও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার চেষ্টার বিরোধিতা করেছেন। অভিনেত্রী শাবানা আজমি টুইট করে জানিয়েছিলেন যে, তিনি ছবিটি নিষিদ্ধ করার আহ্বান সমর্থন করেননি। কেরল সরকার সিনেমাটিকে বিদ্বেষ ছড়ানো এবং রাজ্যকে সাম্প্রদায়িকভাবে মেরুকরণের একটি ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা বলে অভিহিত করেছে কিন্তু প্রদর্শন নিষিদ্ধ করেনি।