সন্দেশখালির 'নির্যাতিতা', অনভিজ্ঞ রেখা পাত্রই কেন মোদির বাজি বসিরহাটে?
Rekha Patra BJP Sandeshkhali: ৬ মার্চ বারাসতে নরেন্দ্র মোদির জনসভা ছিল। সেখানে সন্দেশখালির কয়েক জন নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করেন মোদি। ওই মহিলাদের মধ্যেই ছিলেন রেখা।
সন্দেশখালিতে শেখ শাহজাহান ও তাঁর বাহিনীর বিরুদ্ধে মহিলাদের হেনস্থা বিষয়ক যত অভিযোগ উঠে এসেছিল, অধিকাংশই ছিল মৌখিক। স্বাভাবিক ভয়েই পুলিশের কাছে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে উঠতে পারেননি মহিলারা। একমাত্র লিখিত অভিযোগ ছিল রেখা পাত্রের। সন্দেশখালির বাসিন্দা, সেই রেখা পাত্র এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির মুখ! বসিরহাট কেন্দ্রে রেখাকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছে বিজেপি। কিন্তু বস্রহাটের মতো আসনে একেবারে আনকোরা প্রার্থী, তাও লোকসভা নির্বাচনে?
সন্দেশখালিতে নারী নিগ্রহের অভিযোগ যখন উঠতে থাকে তখন শাহজাহান, তাঁর শাগরেদ শিবু হাজরা, উত্তম মণ্ডলের বিরুদ্ধে প্রথম সরব হন রেখা পাত্র। রেখা পাত্রর অভিযোগের ভিত্তিতেই শিবু হাজরা, উত্তম মণ্ডলদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। পরে গ্রেফতারও হন শিবু। সেই রেখাকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদি কথা বলেছেন রেখার সঙ্গে, বুঝিয়ে দিয়েছেন বসিরহাট আসনের প্রার্থী বাছাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে।
তৃণমূলের নেতা শেখ শাহজাহান, উত্তম সর্দার, শিবপ্রসাদ হাজরাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের লড়াইয়ে নিজের কন্যাসন্তানকে কোলে নিয়ে মিছিলে হাঁটেন রেখা। মুখ ঢেকে নিজের নির্যাতিতা হওয়ার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন। সেই রেখাকেই প্রতিবাদের মুখ হিসেবে তুলে আনতে, মহিলাদের ভোট পকেটস্থ করতে প্রার্থী করেছে বিজেপি। প্রধানমন্ত্রী খোদ ফোন করে রেখাকে ‘শক্তিস্বরূপা’ বলে বুঝিয়ে দেন তিনি নিজে রেখাকে বসিরহাটে বাজি ধরেছেন। যদি সন্দেশখালি, পাত্রপাড়া এবং ত্রিমোহিনী এলাকায় অবশ্য রেখার বিরুদ্ধে পোস্টারও পড়েছে। পোস্টারে লেখা, ‘‘বিজেপি প্রার্থী হিসাবে রেখা পাত্রকে চাইছি না’’, ‘‘সন্দেশখালির আন্দোলনকারী মানুষেরা রেখা পাত্রকে চায় না।’’ বিজেপি সেসব নেহাতই তৃণমূলের 'চাল' বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- মুর্শিদাবাদে লাল ঝড় তুলতে পারবেন দলের সেনাপতি সেলিম?
কিন্তু রাজনীতির সামান্যতম অভিজ্ঞতাও রেখার নেই। স্থানীয় প্রশাসন কীভাবে কাজ করে সেই ন্যূনতম ধারণা না থাকা রেখা কি সংসদে যাওয়ার মতো যোগ্য? মোদি যখন জানতে চান, সন্দেশখালিতে কী কী ঘটেছিল, রেখা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, ‘‘শুধু সন্দেশখালিতেই নয়, গোটা বসিরহাটেই মা-বোনের উপরে নির্যাতন হয়েছে। দোষীদের কঠোর সাজা হওয়া দরকার।’’ রেখা বলছেন, তাঁর স্বামী তামিলনাড়ুতে কাজ করেন। তিনি চান, এমন কিছু হোক যাতে সবাই রাজ্যে থেকেই কাজ করতে পারেন। শুধু সন্দেশখালির 'মা-বোন'-দের উপর অত্যাচার নয়, পুরুষদের উপর আক্রমণ, মারধর আটকাতে 'ভাইদের' পাশে থাকার কথা বলছেন রেখা। কিন্তু বসিরহাটের -মা-বোব-ভাই'-রা রেখার উপর আস্থা রাখবেন কেন?
৬ মার্চ বারাসতে নরেন্দ্র মোদির জনসভা ছিল। সেখানে সন্দেশখালির কয়েকজন নির্যাতিতার সঙ্গে দেখা করেন মোদি। ওই মহিলাদের মধ্যেই ছিলেন রেখা। প্রধানমন্ত্রীকে সন্দেশখালির সমস্ত ঘটনা জানান ওই মহিলারা। তখন থেকেই নাকি বসিরহাট আসনের জন্য রেখা পাত্রর কথা ভেবে রেখেছিল বিজেপি। বিজেপি সন্দেশখালি ইস্যুতে তীব্র ভূমিকা নেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ অবশ্য বলছেন, বিজেপি মেরুকরণের রাজনীতি করতে চেয়েছিল সন্দেশখালিতে। মহিলাদের উপর হেনস্থার ঘটনাকে ধর্মের রঙ লাগিয়ে দেখা হচ্ছিল। ঠিক সেই সমীকরণেই গেরুয়াবাহিনী রেখা পাত্রকে প্রার্থী করেছে।
বসিরহাটে কিন্তু বিজেপির সংগঠন মজবুত নয়। তার উপর রেখা পাত্রকে প্রার্থী করে তৃণমূলের জন্য লড়াই অত্যন্ত সহজ করে দেওয়া হয়েছে বলেই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলের। বসিরহাটে আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে হাড়োয়ার বিধায়ক হাজি নুরুল ইসলামকে। বাম ও কংগ্রেসের সমর্থনে আইএসএফের প্রার্থী হয়েছেন মহম্মদ শহিদুল ইসলাম মোল্লা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অন্য অংশ অবশ্য বলছে, বসিরহাটের সংখ্যালঘু ভোট আইএসএফের পকেটে গেলে আখেরে বিজেপিরই লাভ।