চাঁদ ছুঁতে আর সামান্য কয়েক ঘণ্টা! চন্দ্রযান ৩-এর সাফল্যের সম্ভাবনা কতটা?
Chandrayaan 3 Landing: এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে পারেনি।
আর কয়েকটা দিন। সব ঠিকঠাক থাকলেই চাঁদের মাটি ছোঁবে ভারত। এর আগে চন্দ্রযান-২ একেবারে তীরে এসে ব্যর্থ হয়েছিল। বিজ্ঞানীদের কান্না দেখেছিল দেশ। সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি হলো চন্দ্রযান ৩। এখনও অবধি সব ঠিকই। আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিনের পর বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণকারী দেশ হতে পারে ভারত। এখন শুধু অপেক্ষা সেই চূড়ান্ত ক্ষণের। চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ে ইতোমধ্যেই চাঁদের জমির স্পষ্ট ছবি তুলেছে চন্দ্রযান ৩।
ভারত সরকার প্রথম চন্দ্রযান কর্মসূচি নেয় ২০০৩ সালে। তখনও বিজেপি সরকার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, প্রয়াত অটল বিহারী বাজপেয়ী আনুষ্ঠানিকভাবে চন্দ্রযান প্রকল্পের ঘোষণা করেন। দিনটাও ছিল বিশেষ, ১৫ অগাস্ট। চন্দ্রযান নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রচার হয়েছিল ২০১৯ সালে। চন্দ্রযান ২-এর পাড়ি দেওয়ার কথা চাঁদে। দিয়েওছিল কিন্তু অবতরণ করতে পারেনি। সেদিনের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ফের প্রস্তুতি নেওয়া হয় চন্দ্রযান ৩ এর উৎক্ষেপণের।
গতবারের চন্দ্রাভিযানে পাঠানো অরবিটরটিই চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলেছিল। তাই এবার নতুন করে আর কোনও অরবিটার পাঠাতে হয়নি চাঁদের কক্ষপথে। কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান ২ এর অরবিটারের সাহায্যেই এবার চাঁদে নামবে চন্দ্রযান ৩ এর ল্যান্ডার আর তার ভিতরে থাকা রোভার। চন্দ্রযান ৩-এ রয়েছে একটি ল্যান্ডার মডিউল (LM), একটি প্রপালশন মডিউল (PM) এবং একটি রোভার। এই ল্যান্ডার মডিউলটিই চাঁদে সফট ল্যান্ডিং ঘটাতে সাহায্য করবে। প্রপালশন মডিউলের কাজ হচ্ছে এই চন্দ্রযানের চালনা এবং নিয়ন্ত্রণ পরিচালনা করা। রোভার চন্দ্রপৃষ্ঠে নানা অনুসন্ধান চালাবে এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করবে। চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডারের নাম বিক্রম এবং রোভারের নাম প্রজ্ঞান।
আরও পড়ুন- চাঁদে যেতে গিয়ে পুড়ে ছাই হয়ে গেছিলেন ওঁরা
অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান স্পেস সেন্টারের ‘লঞ্চিং প্যাড’ থেকে ১৪ জুলাই চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপিত হয়। ৫ অগস্ট সেটি পৌঁছয় চাঁদের কক্ষপথে। এর আগে মাধ্যাকর্ষণ বলের টানে পৃথিবীর কক্ষপথেই ঘুরছিল মহাকাশযানটি। ইসরো জানিয়েছে, এখন অন্তিম পর্যায়ের অপেক্ষা। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম এমন ভাবেই তৈরি যাতে সমস্ত সেন্সর-সহ দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলেও ২৩ অগাস্ট চাঁদের মাটিতে নামতে পারবে চন্দ্রযান। তবে, এর প্রোপালশন সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করতেই হবে। সব ঠিক থাকলে ২৩ অগাস্ট বিকেলে রোভার প্রজ্ঞান সহ সফট ল্যান্ডিং করবে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। অবতরণের আগে মহাকাশযানটির গতি কমানো হবে।
তবে, চাঁদের জমিতে ল্যান্ডার বিক্রমকে উল্লম্বভাবে নামানোটাই বড় বিষয় কারণ যে মুহূর্তে বিক্রম মহাকাশযান থেকে আলাদা হয়ে যাবে, তারপর থেকে আড়াআড়িভাবেই এগোতে থাকবে বিক্রম। নানা ভাবে সেটিকে ঘুরিয়ে নিরাপদে নামিয়ে আনাটাই কঠিন কাজ। চার বছর আগে নামতেই গিয়েই ব্যর্থ হয়েছিল চন্দ্রযান-২। তবে একান্তই ২৩ তারিখে না নামতে পারলে, সেপ্টেম্বর মাসে অবতরণের কথাও মাথায় রাখছেন বিজ্ঞানীরা।
১৪ অগাস্ট দুপুরে কক্ষপথের আরও এক ধাপ নীচে নামবে এই মহাকাশযান। গত ১ অগাস্ট চাঁদের বলয়ে প্রবেশ করেছিল চন্দ্রযান ৩। চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশের পর থেকেই মহাকাশযানের গতিবেগ কমানো হচ্ছে। চাঁদ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে যখন থাকবে চন্দ্রযান, তখনই বন্ধ হবে প্রোপালশন মডিউলের ইঞ্জিন।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩-এর ল্যান্ডার এবং রোভার। ৭০ ডিগ্রি দ্রাঘিমায় অবতরণ করার কথা মহাকাশযানের। এই এলাকাটি চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখনও পর্যন্ত যে তিনটি দেশ চাঁদে পা রেখেছে, অর্থাৎ আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন কেউই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামতে পারেনি। পৃথিবীর সব মহাকাশ সংস্থাগুলি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৮ টি সফট ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করেছে চাঁদের মাটিতে। সাফল্যের হার ৫২ শতাংশ।