বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারত বনাম পাকিস্তান? কতটা সম্ভাবনা বাবর আজমদের?
Cricket World Cup 2023 Semifinal :যদি দক্ষিণ আফ্রিকা আফগানিস্তানকে হারাতে পারে, তাহলে পাকিস্তানের সেমিফাইনালের পথ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
জমে উঠেছে ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের লড়াই। পয়েন্ট টেবিলে এই মুহূর্তে এক নম্বরে রয়েছে ভারত, দুই নম্বরে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং তিন নম্বরে অস্ট্রেলিয়া। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, ভারত এক নম্বর থেকে নিচে নামছে না। লড়াই চলছে চার নম্বর স্থানটা নিয়ে। জায়গা দখলের জন্য চলছে ত্রিমুখী লড়াই। আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ড- এর মধ্যে যে কোনও একটি দল এই চার নম্বর স্থানে জায়গা করে নেবে। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বিগত ম্যাচটিতে হেরে যাওয়ার পর আফগানিস্তানের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলা যেতে পারে। তবে পাকিস্তান এবং নিউজিল্যান্ডের সম্ভাবনা এখনও বেশ প্রবল।
প্রথম দু'টি ম্যাচ পরপর জয়ের পর টানা চার ম্যাচ হেরে সেমিফাইনালের পথ থেকে প্রায় একপ্রকার দূরে সরে গিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু তারপরে আবারও স্বমহিমায় ফিরে এসেছে বাবর আজমের দল। বেঙ্গালুরুতে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর আবারও জেগে উঠেছে পাকিস্তানের সেমিফাইনালের সম্ভাবনা। সেমিফাইনালের দৌড়ে পাকিস্তানের এমনভাবে ফিরে আসাতে খুশি ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিও। তিনি অবশ্যই চাইছেন যাতে তাঁর শহর কলকাতায় ইডেন গার্ডেন্সের মাঠেই ১৬ নভেম্বর দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচ হোক ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সৌরভ গাঙ্গুলি বলেন, "আমি চাই পাকিস্তান এখানে সেমিফাইনালের জন্য আসুক। কারণ ভারত পাকিস্তানের সেমিফাইনালের থেকে বড় আর কিছু হতে পারে না।"
আরও পড়ুন- বিতর্কের বিশ্বকাপ! যে সব কাণ্ড আজও ভোলেনি কেউ
তবে, সেরা চারে জায়গা করে নেওয়া কিন্তু মোটেই সহজ কাজ হবে না বাবর আজমের জন্য। এখনও পর্যন্ত ৮ পয়েন্টে নিয়ে যথাক্রমে তালিকার ৪, ৫ এবং ৬ নম্বরে রয়েছে নিউজিল্যান্ড পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান। প্রত্যেকটি দলের হাতে রয়েছে একটি করে ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আফগানিস্তানের হারের পর সেমিফাইনালে ওঠার রাস্তা এখন অনেকটাই সহজ নিউজিল্যান্ডের কাছে। কিন্তু নেট রান রেটের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান। এই কারণে, শুধুমাত্র পরের ম্যাচ জিতলেই হবে না, তাকিয়ে থাকতে হবে অন্যদের দিকেও।
১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারাতেই হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে। অন্যদিকে আবার একইসঙ্গে শ্রীলঙ্কার কাছে হারতে হবে নিউজিল্যান্ডকে। আফগানিস্তানও যেন পরবর্তী ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারে, সেই প্রার্থনাও করতে হবে বাবর আজমদের। কিন্তু যদি কোনওভাবে নিউজিল্যান্ড জিতে যায়, কিংবা আফগানিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে ২ পয়েন্ট সংগ্রহ করতে পারে, তবে সমীকরণ কী দাঁড়াবে?
সেক্ষেত্রে হিসেব হয়ে যাবে একেবারে নেট রান রেটের ভিত্তিতে। যদি কিউইরা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে জিততে পারে, তাহলে কিন্তু পাকিস্তানকে বিরাট ব্যবধানে হারাতে হবে ইংল্যান্ডকে। সেক্ষেত্রে পরের ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যাবে পাকিস্তানের কাছে। এই ধরনের ম্যাচে আগে ব্যাটিং করে এক বিরাট লক্ষ্যমাত্রা রাখা ভালো। পরে ব্যাটিং করতে গেলে কিন্তু সমস্যায় পড়ে যায় যে কোনও দল। সেক্ষেত্রে রান ধাওয়া করে এরকম জয় কিন্তু পাওয়া যায় না।
এখানে মোট ৩ থেকে ৪টি সমীকরণ তৈরি করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। মনে করা হচ্ছে, যদি শ্রীলঙ্কা ১ রানে হারে নিউজিল্যান্ডের কাছে, তাহলে পরের রাউন্ডে যেতে হলে অর্থাৎ সেমিফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করতে হলে পাকিস্তানকে কমপক্ষে ১৩০ রানে জিততে হবে। অন্যদিকে আফগানিস্তান যদি এক ম্যাচে জয়লাভ করে, তাহলে তাও যেন খুব একটা বড় ব্যবধান না হয়, সেটাও মাথায় রাখতে হবে বাবর আজমদের। এমনিতেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে হেরে গিয়েছে আফগানিস্তান। তাই পরবর্তী ম্যাচ জিততে একেবারে মরিয়া তারা। যদিও আফগানিস্তানের সম্ভাবনা খুবই কম, তবুও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কলকাতায় ১১ নভেম্বর ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এর আগে ৯ নভেম্বর যদি শ্রীলঙ্কা নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিতে পারে, তাহলে পাকিস্তানের সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যাবে। পাকিস্তান যদি ইংল্যান্ডকে হারাতে পারে তাহলে খুব সহজেই তারা সেমিফাইনালে উঠে যাবে।
এছাড়াও, আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে যদি দক্ষিণ আফ্রিকা আফগানিস্তানকে হারাতে পারে, তাহলে পাকিস্তানের সেমিফাইনালের পথ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কোনওভাবে আফগানিস্তান জিতে যায়, তাহলে সম্পূর্ণ ফয়সালা হবে নেট রান রেটের ভিত্তিতে। সেক্ষেত্রে যদিও সুবিধা পাবে পাকিস্তান। এই মুহূর্তে পাকিস্তান রয়েছে +০.০৩৬ নেট রান রেট নিয়ে। নিউজিল্যান্ড রয়েছে +০.৩৯৮ নেট রান রেট নিয়ে এবং আফগানিস্তান রয়েছে -০.৩৩৮ নেট রান রেট নিয়ে। ফলে যদি নিউজিল্যান্ড হেরে যায় তাহলে সেমিফাইনালের রাস্তা মোটামুটি পরিষ্কার পাকিস্তানের জন্য।
আরও পড়ুন- টাইমড আউট হতে পারতেন সৌরভ গাঙ্গুলিও! ১৬ বছর আগে কীভাবে বেঁচে যান তিনি?
এই ম্যাচগুলিতে বৃষ্টির একটা বিষয় রয়েছে। যদি, পাকিস্তান বনাম ইংল্যান্ডের ম্যাচে বৃষ্টি হয় এবং নিউজিল্যান্ড শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলে ব্ল্যাক ক্যাপসরা সেমিফাইনাল খেলবে। অন্যদিকে যদি, নিউজিল্যান্ড ম্যাচে বৃষ্টি হয় এবং এই বৃষ্টির কারণে কোনওভাবে নিউজিল্যান্ড হেরে যায় এবং পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিতে পারে, তাহলে পাকিস্তান সেমিফাইনাল খেলবে ভারতের সঙ্গে। মাথায় রাখতে হবে, দু'টি ম্যাচেই নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তান হারে এবং আফগানিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে জয় লাভ করে, তাহলে কিন্তু ভারতের সঙ্গে সেমিফাইনালে চলে যাবে আফগানিস্তান। আর তিনটি ম্যাচেই যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান হারলে সেমিফাইনাল খেলবে নিউজিল্যান্ড, যেহেতু তাদের নেট রান রেট বেশি।
বাবার আজমদের সবথেকে বড় সুবিধা হল তাদের শেষ ম্যাচ কিন্তু নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পরে। ৯ নভেম্বর নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা মুখোমুখি হবে। তাই এই লড়াইয়ের ফলাফল অনুযায়ী নিজেদের সেমিফাইনালের পথ সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান নিয়ে মাঠে নামতে পারবে পাকিস্তান। পাকিস্তানের সঙ্গে ইংল্যান্ডের ম্যাচটি ১১ তারিখে। অর্থাৎ পাকিস্তানের কাছে বেশ অনেকটা সময় রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর পর পয়েন্ট শীর্ষে থেকেই রাউন্ড রবিন লিগ শেষ পথে চলেছে ভারত। এদিক থেকে দেখতে গেলে পাকিস্তান সেমিফাইনালে যদি ওঠে তাহলে চার নম্বর দল হিসেবেই উঠবে। এমন সমীকরণে ভারত পাকিস্তান সেমিফাইনাল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর যদি এমন হয় তাহলে ২০১১ সালের বিশ্বকাপের স্মৃতি আবারও ফিরে আসবে যেখানে শাহিদ আফ্রিদির পাকিস্তানের মুখোমুখি হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। তাও আবার সেই সেমিফাইনালেই।