ঠাকুমা, কাকিমাই বিজনেস পার্টনার! চাকরি ছেড়ে হোম ডেলিভারি করে কোটি টাকা আয়?
Food Delivery Start Up Inspiration: প্রথম দিকে দিনে ১৫ থেকে ২০ বাক্সের মতো অর্ডার আসতো। আর এখন সপ্তাহে ২,০০০ অর্ডার।
রইল ঝোলা, চলল ভোলা! খানিক এইভাবেই সুখের চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছিলেন বছর পঁচিশের যুবক। সকালে একেবারে প্রস্তুত হয়ে অফিসে গিয়ে বসে কেবিনে ঢুকে পড়লেন। সরাসরি জানিয়েছিলেন, “কাল থেকে আর কাজে আসছি না”। বছর আটেক আগে, ২০১৫ সালে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মুরলি গুন্ডানা ঠিক করে ফেলেছিলেন, এসব চাকরি বাকরি করে পরের বেগার খেটে কিছু হবে না। নিজের ইচ্ছামতোই চলবেন, খাবারের ব্যবসা করবেন। বেশ কিছুকাল ধরেই নিজের কিছু করার চিন্তায় মাথা খারাপ করে ফেলছিলেন মুরলি। শেষ একদিন ধুত্তোর বলে বসের কেবিনে গিয়ে বলেই দিলেন কাল থেকে আর কাজ করবেন না। তারপর কী করবেন তাহলে?
ঠাকুমা আর কাকিমাদের বিজনেস পার্টনার করে নিয়ে শুরু করলেন খাবারের ব্যবসা। দুর্দান্ত রান্না করতে পারতেন ঠাকুমা ইন্দিরাম্মা, দুই কাকিমা ঊষা এবং সন্ধ্যার রন্ধন দক্ষতা এবং পরিচালনার ক্ষমতাও বেশ ভালো! এদের সঙ্গে নিয়েই মাইসুরুর বাসিন্দা মুরলি ব্যবসা খুললেন খাবারের হোম ডেলিভারির। নাম দিলেন ফুড বক্স। একেবারে স্বল্প দামে হাজার হাজার মানুষকে ঘরের রান্নার স্বাদ চেখে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে ফুড বক্স!
চাকরি ছেড়েছুড়ে একটি ছোট গ্যারেজ ভাড়া নেন তাঁরা। ভাড়া নেন দু'খানি বড় স্টোভ। মুরলির ঠাকুমা এবং কাকিমারাই মূলত খাবার রান্না করতেন এবং মেনু ঠিক করতেন। আর তাঁর বন্ধু মঞ্জু, বিনয় এবং খুড়তুতো ভাই স্কাঙ্গা রান্না করা খাবার সরবরাহ করতেন। পোলাও, দই ভাত, ক্ষীর এবং ফলের পদই তৈরি করতেন তাঁরা। ৪০ জন বন্ধু এবং পরিচিতদের তালিকা তৈরি করে নেমে পড়েন কাজে।
আরও পড়ুন- এমবিএ করে চায়ের দোকান! এই ‘চা-ওয়ালা’ এখন দেশের অনুপ্রেরণা
প্রথমেই আইটি সেক্টরের মুরলির বন্ধু, কলেজের জুনিয়র এবং অন্যান্যদের দরজায় কড়া নাড়েন তাঁরা। সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে বলতে থাকেন, এবার থেকে সস্তায় ঘরে তৈরি রান্না পৌঁছে দেবেন তাঁরা, একেবারে বাড়িতেই। তাই বন্ধুরা যদিও তাঁদের বন্ধুদের জানান, তাঁরা যদি তাঁদের আরও পরিচিতদের জানান, মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়বে ফুড বক্সের কথা। মাত্র ৭০ টাকায় বাড়ির তৈরি পেট ভরা খাবার।
আস্তে আস্তে মেনুতে জুড়ে গেল ঘি পালক ডাল খিচুড়ি ও রায়তা, বালেকাই বাজ্জি, কেশর ভাত, পুলিওগার, ক্ষীর এবং ঠাট্টে ইডলির মতো বিভিন্ন ধরনের খাবার। প্রাতঃরাশ, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার, বিকেলের স্ন্যাক্সও তৈরি করতে শুরু করলেন মুরলি, ইন্দিরাম্মারা।
আরও পড়ুন- হাসিমুখে ভাতের থালা হাতে অফিস পাড়ার নন্দিনী, নিশ্চিন্ত চাকরি ছেড়ে কেন বেছে নিলেন এই পথ
সাশ্রয়ী মূল্যে সুষম পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারই তাঁদের ইউএসপি। মুরলি জানিয়েছেন, ফুড বক্সের নিয়মিত গ্রাহকদের ৩০ শতাংশই চিকিৎসক এবং বেশিরভাগই প্রতিদিন খাবার অর্ডার করেন। তাঁদের অনেক গ্রাহকই দিনে তিনিবেলাই ফুড বক্সের খাবার খান। অন্যান্য দিনের মেনুতে উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতী, চাইনিজ নানা খাবার থাকলেও বুধবার এবং শুক্রবার কিন্তু ট্র্যাডিশনাল খাবারই দেওয়া হয়। এখন সব মিলে ২৭ জন কর্মী রয়েছেন ফুড বক্সে।
প্রথম দিকে দিনে ১৫ থেকে ২০ বাক্সের মতো অর্ডার আসতো। আর এখন সপ্তাহে ২,০০০ অর্ডার। মাইসুরু এবং এর আশেপাশে তাদের ৪৫,০০০ গ্রাহক রয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৩,০০,০০ খাবার সরবরাহ করেছেন তাঁরা। ২০১৯ সালে, চামুন্ডিপুরমে ফুড বক্সের প্রথম আউটলেট স্থাপন হয়, মাইসুরুর প্রথম অনলাইন ফুড ডেলিভারি সংস্থা হয়ে ওঠে মুরলির ফুড বক্স। শুরুর দিকে কোনও বিনিয়োগ এবং লাভ ছাড়াই কাজ চলে প্রথম ছয় মাস। কিন্তু এখন বছরে আয় প্রায় ১.৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের মার্চ মাসে মুরলির ঠাকুমা মারা যান। কিন্তু নিজের রান্নার স্বাদ তিনি ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন শহর জুড়ে।