তাঁরই হৃদপিণ্ড সাজানো শোকেসে! ১৬ বছর পর মিউজিয়ামে দেখতে গেলেন মহিলা
Heart on Display in Museum: নিজেরই দেহের মধ্যেকার অঙ্গ হঠাৎ করে কাচের শোকেসে সাজানো দেখার অভিজ্ঞতা অদ্ভুত।
হৃদয়ের শব্দ তো শুনতে পান গহিন স্তব্ধতায়। মাঝেমাঝে বিশেষ মুহূর্তে সেই হৃদয়েই দোলা লাগে, উথালপাথাল হয়, কখনও মেঘ করে আসে কালো। এসবই ঘটে, কিন্তু আপনি দেখতে পান না। কেবল অনুভবই ভরসা। কারণ, দেহের গভীরে কী যে ঘটছে বাইরে থেকে দেখা মুশকিল। আমাদের শরীর চালায় যে সমস্ত কলকব্জা তা বাইরে থেকে কেউই দেখতে পান না। কোনও অসুখ বিসুখে অস্ত্রোপচার অবধি গড়ালে তার দর্শন মিললেও মিলতে পারে। কেমন হবে, যদি আপনি জীবিত অবস্থাতেই আপনার দেহের অভ্যন্তরের অঙ্গগুলি দেখতে পান? যদি আপনারই হৃদয় খুলে বাইরে রেখে দেওয়া হয় আপনার দেখার জন্য? অবিশ্বাস্য নয় মোটেও। একজন মহিলা নিজের হৃদয় দেখেছেন এক জাদুঘরে! ২২ বছর বয়সে হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হয়েছিল তাঁর। পুরনো সেই হৃদপিণ্ড রাখা আছে লন্ডনের হান্টেরিয়ান মিউজিয়ামে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই জেনিফার সাটন বুঝতে পেরেছিলেন, সামান্য ব্যায়াম করতে গেলেও বেশ অসুবিধা হচ্ছে তাঁর। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে, পরীক্ষা করে দেখা যায় কার্ডিওমায়োপ্যাথি রয়েছে তাঁর। এটি এমন এক বিরল অবস্থা যেখানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হার্টের প্রকোষ্ঠগুলি শক্ত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে থাকার জন্য হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট ছাড়া গতি নেই। জেনিফারের স্বাস্থ্যের দ্রুত অবনতি হতে থাকে। শেষমেশ ২০০৭ সালে একজন দাতা মেলে।
আরও পড়ুন- বাবাকে বাঁচাতে মাত্র ১৭ বছরেই অঙ্গদান! দেশের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাত্রী হিসেবে যে নজির দেবনন্দার
সফল হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের পরে জেনিফার সাটনই রয়্যাল কলেজ অব সার্জনসকে একটি বিশেষ অনুমতি দেন। জন্ম থেকে যে হৃদপিণ্ডটি তাঁর ছিল, তা জনসমক্ষে প্রদর্শন করার অনুমতি দেন তিনি। হার্টের অবস্থা এবং অঙ্গ দান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির আশায় এই অভিনব পন্থা নেন যুবতী জেনিফার। বিষয়টা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটা মোটেও না। নিজেরই দেহের মধ্যেকার অঙ্গ হঠাৎ করে কাচের শোকেসে সাজানো দেখার অভিজ্ঞতা অদ্ভুত।
জেনিফার সাটন সেই সময়, বিবিসিকে বলেছিলেন, "ব্যাপারটা বেশ সুন্দর – এটা খানিক আমার বন্ধুর মতো। আমাকে ২২ বছর ধরে বাঁচিয়ে রেখেছিল সে এবং আমি সত্যিই ওই হৃদপিণ্ড নিয়ে বেশ গর্বিত। আমি আমার জীবদ্দশায় কাচের জারে অনেক কিছুই দেখেছি কিন্তু নিজের হার্ট- এটা ভাবাটাই আসলে খুব অদ্ভুত। "
২০০৭ সালে প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল এই হৃদপিণ্ড। প্রথমবার নিজের হৃদয় নিজের দেহের বাইরে দেখার অভিজ্ঞতাটিকে 'পরাবাস্তব' বলে মনে হয়েছিল জেনিফারের। যে হৃদয়টিকে বদলে না ফেললে জেনিফার বাঁচতেন না, সেটিকে সামনে থেকে দেখা অত্যন্ত উদ্ভট এবং খুব অদ্ভুত। হৃদপিণ্ডের শক্ত হয়ে যাওয়া প্রকোষ্ঠগুলিকে স্পষ্ট দেখে বিচলিতও হয়ে পড়েছিলেন জেনিফার। চল্লিশ ছুঁতে চলেছেন এখন জেনিফার, মাঝে মাঝেই নিজের ফেলে আসা হৃদয় দেখেন তিনি। অঙ্গদানও এখন আগের থেকে কিঞ্চিৎ বেড়েছে পরিমাণে। নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই অন্যদেরকে অঙ্গদানে উৎসাহ যোগাচ্ছেন তিনি। আর তাঁর সেই হৃদয়টি বর্তমানে রাখা রয়েছে হান্টেরিয়ান মিউজিয়ামে, সুদৃশ্য শোকেসে।